ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি থামিয়ে ৪৮ লাখ টাকা ডাকাতি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০২৩
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি থামিয়ে ৪৮ লাখ টাকা ডাকাতি

ঢাকা: রাজধানীর খিলক্ষেত থানার কাওলা এলাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের সদস্য পরিচয়ে ৪৮ লাখ টাকা ডাকাতি করেছে একটি চক্র। ঘটনার পর ডাকাতরা সাত জেলায় পালিয়ে যান।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ জানিয়েছে, ডাকাত দলে ছিলেন সাতজন। তারা ‘কাটআউট সিস্টেমে’ পালিয়ে গিয়েছিলেন।

ডিবি জানায়, ডাকাতি করার পর পরই চক্রের সদস্যরা দ্রুত গাড়ির নম্বর প্লেট পরিবর্তন করে ফেলেন। তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ও সিমকার্ড ভেঙে পানিতে ফেলে দেন। ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) গুলশান বিভাগ পলাতক ডাকাত দলের সাত সদস্যকেই দেশের সাত জেলা থেকে গ্রেপ্তার করেছে।

গ্রেপ্তাররা হলেন- সবুজ মিয়া ওরফে শ্যামল (৩৯), সাহারুল ইসলাম ওরফে সাগর (২৩), আবু ইউসুফ (৪১), দিদার দিদার মুন্সী (৩৫), ফেরদৌস ওয়াহীদ (৩৫), আলামিন দুয়ারী দিপু (৪২) ও দাউদ হোসেন মোল্যা (৩৯)। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতিতে ব্যবহৃত প্রাইভেটকার, র‍্যাবের জ্যাকেট, হ্যান্ডকাফ, খেলনা পিস্তল, ওয়ারলেস সেট, মোবাইল ফোন ও ডাকাতির টাকায় কেনা স্বর্ণালংকার এবং বাকি ২৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।

রোববার (২২ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

তিনি বলেন, গত ১০ অক্টোবর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সোহেল আহমেদ সুলতান নামে এক ব্যবসায়ীর উত্তরার আল-আরাফা ইসলামি ব্যাংক থেকে দুটি চেকের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির হিসাব কর্মকর্তা অনিমেশ চন্দ্র সাহা সাড়ে ৮৩ লাখ টাকা তোলেন। ভুক্তভোগীর ব্যবসায়ী অংশীদার জাফর ইকবালের পক্ষে রাজন নামে এক ব্যক্তিকে ব্যাংকে বসেই সাড়ে ৩৫ লাখ টাকা বুঝিয়ে দেন অনিমেশ। বাকি ৪৮ লাখ টাকা নিয়ে প্রাইভেটকারে চড়ে তিনি বনানীর দিকে রওনা করেন।

গাড়িটি কাওলা থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল দিয়ে খিলক্ষেত ডেন্টাল কলেজের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় বিকেল ৪টার দিকে মেরুন কালারের একটি প্রাইভেটকার এসে সেটিকে ওভারটেক করে সামনে গিয়ে গতিরোধ করে। ওই গাড়ি থেকে বাহিনীর জ্যাকেট পরিহিত ৫-৬ জন ব্যক্তি র‍্যাবের পরিচয় দিয়ে গাড়ি থামান। তারা আটকে ফেলা গাড়িতে অবস্থানরত অনিমেশ চন্দ্র সাহা ও মো. শাহজাহানকে তাদের ‘গাড়িতে অস্ত্র আছে’ বলে জানান।

পরে ওই দুজনকে হাতকড়া লাগিয়ে চোখ বেঁধে ফেলেন ডাকাতরা। এরপর ব্যাংক থেকে তোলা টাকা, কোম্পানির একটি ব্ল্যাংক চেক ও তিনটি মোবাইল ফোন নিয়ে নেন। পরে চোখ বাঁধা অবস্থায় অনিমেশ, শাহজাহান ও কোম্পানির গাড়িচালক আবুল বাশারকে বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে ৩০০ ফিট এলাকায় ফেলে রেখে যান ডাকাত দলের সদস্যরা। এ ঘটনায় সোহেল আহমেদ সুলতান বাদী হয়ে খিলক্ষেত থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

তিনি আরও বলেন, মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ডিবির গুলশান বিভাগের ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিম তদন্তে নামে। মামলার বাদীর বক্তব্য, সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় র‍্যাব পরিচয়ে অপহরণ ও ডাকাতিতে জড়িত দলটিকে শনাক্ত করা হয়।

তদন্তে দেখা যায়, সবুজের নেতৃত্বে ডাকাতি করা দলটি কাটআউট পদ্ধতিতে ডাকাতি করে। এর কৌশল হিসেবে ডাকাতিতে ব্যবহৃত গাড়ির একাধিক নম্বর প্লেট ব্যবহার করে। কাজ শেষে নিজেদের মোবাইল ফোন ভেঙে পানিতে ফেলে দেয়। এরপর নিজেদের মধ্যে টাকা ভাগাভাগি করে ভিন্ন ভিন্ন জেলায় গিয়ে আত্মগোপন করে।

গ্রেপ্তার ডাকাত দলের সদস্যদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে ডিবি প্রধান বলেন, এই চক্রটি ৪৮ লাখ টাকা ডাকাতির পরে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে। এরমধ্যে তারা আইনজীবীদের জন্য আলাদা খরচ রেখে দেয়। ভাগে পাওয়া টাকা দিয়ে কেউ বাড়ি ভাড়া দিয়েছেন, স্ত্রীর গহনা কিনেছেন, জুয়া খেলেছেন। ৪৮ লাখ টাকার মধ্যে সাড়ে ২৩ লাখ উদ্ধার করা হয়েছে।

ডাকাত দলটিতে বাহিনীর কোনো সদস্য জড়িত কি না জানতে চাইলে হারুন অর রশীদ বলেন, আমরা আগে বিভিন্ন ডাকাত দলের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাবেক সদস্যদের জড়িত থাকার প্রমাণ পেলেও এই দলে এমন কেউ নেই। তবে দলটিতে একজন মুহুরি পাওয়া গেছে। সাগর নামে একজন অনার্স-মাস্টার্স পাস করে আইনজীবীর সঙ্গে কাজ করতেন। তিনি ডাকাত দলের একজনকে জামিন করাতে গিয়ে তাদের সঙ্গে জড়িয়ে যান। এরপর মুহুরি পেশা ছেড়ে ডাকাত দলের হয়ে কাজ করতেন। তার দায়িত্ব হলো বিভিন্ন ব্যাংকে রেকি করে বড় অংকের টাকা উত্তোলনকারী গ্রাহকের তথ্য সরবরাহ করা।

এই চক্রের প্রত্যেক সদস্যের নামে ডিএমপিসহ দেশের ১৩ জেলায় ১০-১৫টি করে ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি এবং মাদক মামলা রয়েছে।

বিভিন্ন ঘটনায় দেখা যায় ডাকাতরা র‌্যাব-ডিবি-পুলিশ পরিচয় দিতে হ্যান্ডকাফ ও ওয়াকিটকি ব্যবহার করে। তারা এসব কীভাবে পায়, জানতে চাইলে হারুন অর রশীদ বলেন, আমরা আসামিদের রিমান্ডে এনে এ বিষয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করবো।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০২৩
এসজেএ/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।