ঢাকা, রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মশামুক্ত হয়ে আলোচনায় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০২৩
মশামুক্ত হয়ে আলোচনায় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা

ঢাকা: রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় এখন মশা খুঁজে পাওয়া মুশকিল। আর সে কারণে মশা তাড়াতে বা মশার আক্রমণ থেকে বাঁচতে এখানকার অধিবাসীদের কয়েল, ব্যাট বা স্প্রে ব্যবহার করতে হয় না, টানাতে হয় না মশারিও।

বসুন্ধরা কর্তৃপক্ষের বিশেষ উদ্যোগের কারণে এই অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন সম্ভব হয়েছে।  

ঢাকার অন্যান্য এলাকায় মশার ব্যাপক উপদ্রবের কারণে ডেঙ্গু ভয়াবহ আকার ধারণ করলেও বসুন্ধরা এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। এ এলাকায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।  

পরিকল্পিত ও পরিবেশবান্ধব বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় রয়েছে চওড়া সড়ক, পর্যাপ্ত উন্মুক্ত জায়গা। এখানে বসুন্ধরা ওয়েলফেয়ার সোসাইটির মাধ্যমে নিয়মিত মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

মশা নিয়ন্ত্রণে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- খাল ও জলাশয় প্রবহমান রাখা এবং নিয়মিত পরিষ্কার করা, নর্দমাগুলো সচল রাখা ও নিয়মিত পরিষ্কার করা। খালি প্লটগুলোও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হচ্ছে। সকালে মশার লার্ভা নিধন ও বিকেলে উড়ন্ত মশা নিধনের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে নিয়মিত। এতেই সুফল মিলেছে।

ঢাকা ও ঢাকার বাইরে সমানতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। ডেঙ্গুর ভয়াবহতা এবারই সবচেয়ে বেশি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ডেঙ্গুতে সারা দেশে মারা গেছে সাড়ে ১২শ’ মানুষ। এমন অবস্থার মধ্যেও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় মশা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, পুরো ঢাকা শহরে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলেও  বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় তা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

১৯৮৭ সালে গড়ে ওঠা এ আবাসিক এলাকায় প্রথমে চারটি ব্লক থাকলেও এখন ২০টিতে উন্নীত হয়েছে। এখানে প্রায় ৮ লাখ মানুষ বাস করছে।

মশা নিয়ন্ত্রণে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করলেও সফলতা ধরা দিচ্ছে না। অন্যদিকে একই শহরে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় বসুন্ধরা মশা নিয়ন্ত্রণে সফল হওয়ায় বিষয়টি এখন আলোচনায়।

১৫৯ বছর আগে ১৮৬৪ সালে ঢাকা পৌরসভা গঠিত হয়। সে সময় পৌরসভার মাধ্যমে মশা নিয়ন্ত্রণ বা পরিচ্ছন্নতার কাজ করা হতো। পৌরসভা গঠনের ১৩৬ বছর পর ঢাকা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন গঠন করা হয়। ১৯৯০ সালে ঢাকা সিটি করপোরেশন হয়। নাগরিক সেবা সহজ করতে সরকার ২০১১ সালে করপোরেশনকে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ নামে দুই সিটিতে ভাগ করে। ঢাকার নগর সংস্থার ১৫৯ বছরে মশা নিয়ন্ত্রণের সফলতার গল্প তেমন নেই। শুধু গত শতকের চল্লিশের দশকে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাবীবুল্লাহ বাহার ঢাকার মশা নিয়ন্ত্রণ করে সাড়া ফেলেছিলেন। আর এখন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার মশা নিয়ন্ত্রণে সফলতার ঘটনা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন মশক-বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, সব হাউজিং সোসাইটিকে বসুন্ধরার মতো মশা নিয়ন্ত্রণে এগিয়ে আসতে হবে।

বসুন্ধরা আই-ব্লকের ৯ নম্বর সড়কের ১৮৭ নম্বর বাড়ির বাসিন্দা মিসেস রঞ্জনা কাশেম বলেন, গত তিন বছরে মশা নিয়ন্ত্রণে বসুন্ধরা কর্তৃপক্ষ বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে, যার সুফল এখন সবাই ভোগ করছে। এখন মশা নেই বললেই চলে।

বসুন্ধরা ডি-ব্লকের ৭ নম্বর সড়কের ১২৯ নম্বর বাসার তত্ত্বাবধায়ক মো. আবদুল গনি  বলেন, ‘প্রায় আট বছর ধরে এ বাসার দায়িত্ব পালন করছি। ২৪ ঘণ্টাই বাসায় থাকি। শুরুর দিকে মশা থাকলেও এ বছর মশা আছে বলে মনে হয় না।

বসুন্ধরা ডি-ব্লকের বাসিন্দা গৃহবধূ সৈয়দা শাকিলা হায়দার বলেন, এখন স্বস্তিতে আছি। মশা নেই বললেই চলে।  

বসুন্ধরা গ্রুপের প্রেস উপদেষ্টা আবু তৈয়ব বলেন, প্রায় তিন বছর ধরে বসুন্ধরা কর্তৃপক্ষ মশা নিয়ন্ত্রণে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। সরকার অনুমোদিত ও পরিবেশবান্ধব ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে। মশার প্রজননক্ষেত্র চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়াতে মিলেছে সাফল্য। সকালে লার্ভা ও বিকেলে উড়ন্ত মশা মারতে ওষুধ ছিটানো হয়।

তিনি বলেন, বসুন্ধরায় মশা ছিল। কিছু খাল প্রবহমান ছিল না। পর্যায়ক্রমে সেগুলোকে প্রবহমান করা হয়েছে। খালি প্লটগুলোর জলাবদ্ধতা, জঙ্গল পরিষ্কার করা হয়েছে। বসুন্ধরা চেয়ারম্যান বিশেষ উদ্যোগী হয়ে নিজেই মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করেন। এখন আমরা বাসায় মশারি ছাড়াই ঘুমাই।

কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. করিরুল বাশার বলেন, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা মশা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে এটা ভালো সংবাদ। তাদের মতো অন্য হাউজিং সোসাইটিগুলোও উদ্যোগী হতে পারে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০২৩
আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।