ঢাকা, সোমবার, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ মে ২০২৪, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

গাজীপুরে গুলি ও শ্রমিক অঞ্চলে হামলার নিন্দা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০২৩
গাজীপুরে গুলি ও শ্রমিক অঞ্চলে হামলার নিন্দা মজুরি বোর্ডের সামনে ‘মজুরি বৃদ্ধিতে গার্মেন্ট শ্রমিক আন্দোলনের’ বিক্ষোভ

ঢাকা: মজুরি বোর্ডের ৫ম বৈঠক চলাকালে প্রতিবাদী অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে আন্দোলনরত শ্রমিক সংগঠনগুলোর জোট ‘মজুরি বৃদ্ধিতে গার্মেন্ট শ্রমিক আন্দোলন’। সমাবেশ থেকে শ্রমিক নেতারা গাজীপুরে গুলি ও দেশের বিভিন্ন শ্রমিক অঞ্চলে সরকার দলীয় সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানান।

বুধবার (১ নভেম্বর) মজুরি বোর্ডের সামনে মজুরি বৃদ্ধিতে গার্মেন্ট শ্রমিক আন্দোলনের আহ্বায়ক তাসলিমা আখতারের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব সাদেকুর রহমান শামীমের পরিচালনায় বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

এতে বক্তব্য রাখেন গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি মন্টু ঘোষ, বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম আবু সাঈদ, ওএসকে গার্মেন্টস অ্যান্ড টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশন সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ দত্ত, গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ, গার্মেন্ট শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম সবুজ, বিপ্লবী গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির কেন্দ্রীয় নেতা সাইফুল ইসলাম, গার্মেন্টস শ্রমিক মুক্তি আন্দোলনের সভাপতি শামীম ইমাম, জাতীয় সোয়েটার গার্মেন্টস ফেডারেশনের সভাপতি এ এম ফয়েজ হোসেন ও গার্মেন্ট শ্রমিক আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা বিপ্লব ভট্টাচার্য প্রমুখ। এছাড়াও সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন চিকিৎসক ডা. হারুনুর অর রশীদ।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, আজ ৫ম বৈঠকেও মজুরি বোর্ড শ্রমিকদের জন্য কোনো কাঙ্ক্ষিত মজুরি প্রস্তাব না করে চরম দাযিত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে। শ্রমিকরা বর্তমান বাজারে চলতে না পেরে এবং মালিকদের কম মজুরি প্রস্তাবে যখন গাজীপুর-আশুলিয়া-সাভার-মিরপুরে আন্দোলনে বিক্ষুব্ধ, যখন রাসেল হাওলাদার এবং ইমরানের মৃত্যু ঘটেছে তখন মালিকরা শ্রমিকদের দাবি উপেক্ষা করেছে। এর মধ্য দিয়ে মালিকপক্ষ শ্রমিকদের আরও বিপদের মধ্যে নিক্ষেপ করলো।

শ্রমিক নেতারা বলেন, প্রতিদিন জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। এ অবস্থায় শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি না করে মালিকপক্ষ লে-অফ-ছাঁটাই-নির্যাতনকে সমাধানের পথ হিসেবে বেছে নিয়েছে। মালিকদের বর্তমান অবস্থান প্রমাণ করে শ্রমিকদের বর্তমান বাজারে নাভিশ্বাস পরিস্থিতিকে তারা কোনো রকম গুরুত্ব না দিয়ে কৌশলে কীভাবে কম মজুরি দেওয়া যায়, তার পরিকল্পনা আঁটছেন। স্থানীয় ক্ষমতাসীনদের দিয়ে নির্যাতন করে শ্রমিকদের ন্যায্য দাবির আন্দোলনকে তারা দমন করতে চাচ্ছে। গুলিতে রাসেল হাওলাদারের নির্মম মৃত্যু তারই প্রমাণ।

সমাবেশে বক্তারা আরও বলেন, গত পাঁচ বছরে শ্রমিকদের মজুরি বাড়েনি। অন্যদিকে দেশে মুদ্রাস্ফীতি ও বাজারের অবস্থা ভয়াবহ। ৫ বছর পর মজুরি বোর্ড গঠন হয়েছে এবং তার মেয়াদ ৬ মাস পার হলেও মজুরি বোর্ড এখনো মজুরি ঘোষণা করেনি। মালিকরা এই সময়ে এসে নির্বাচনী ডামাডোলে শ্রমিকদের মজুরি আরও অনিশ্চতার মধ্যে ফেলেছে। মালিকপক্ষের বর্তমান কঠোর অবস্থান শিল্প এবং শ্রমিক উভয়ের জন্য ক্ষতিকর।

নেতৃবৃন্দ বলেন, বাজারে যেখানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১২০ টাকা, আলুর দাম ৬০ টাকা সেখানে শ্রমিকদের বেঁচে থাকা কঠিন। এই কঠিন সময়ে শ্রমিকরা ২৫ হাজার টাকার দাবি করলেও মালিকরা ২২ অক্টোবরে মাত্র ১০৪০০ টাকার প্রস্তাব করে। মালিকদের প্রস্তাব শ্রমিকদের মনে আশঙ্কা ও বিক্ষোভ তৈরি করে। মালিকদের কালক্ষেপণ এবং কম মজুরি প্রস্তাবের কারণে শ্রমিকরা গাজীপুর আশুলিয়া মিরপুরে বিক্ষুব্ধ হয়। অথচ শ্রমিকদের যৌক্তিক মজুরির নিশ্চয়তা না দিয়ে মালিকপক্ষ সরকারের পুলিশি এবং লাঠিয়ালবাহিনী-স্থানীয় মাস্তানবাহিনী কর্তৃক শ্রমিকদের ওপর যে হামলা-নির্যাতন চালায়, তা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক।

আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত শ্রমিক রাসেল ও ইমরানের মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত, দোষীদের গ্রেপ্তার ও সর্বোচ্চ শাস্তি এবং ক্ষতিপুরণ দাবি করেন পোশাকশ্রমিক নেতারা। একইসাথে বিলম্ব না করে ২৫ হাজার টাকা নিম্নতম মজুরি ঘোষণা করার দাবি জানিয়ে আগামী ১০ নভেম্বর সকাল ১১টায় মজুরি বৃদ্ধিতে গার্মেন্ট শ্রমিক আন্দোলনের সমাবেশের ঘোষণা দেন তারা।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০২৩
এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।