ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

অবরোধে আয় কমেছে রাজধানীর নিম্ন আয়ের মানুষের

সুব্রত চন্দ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২, ২০২৩
অবরোধে আয় কমেছে রাজধানীর নিম্ন আয়ের মানুষের

ঢাকা: বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবিতে সারাদেশে চলছে বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোটের টানা তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচি।

অবরোধের কারণে গতির ঢাকায় ধীরগতি নেমে এসেছে।

প্রথম দুদিন রাস্তায় যানবাহনও চলাচল করছে খুবই কম। চাকরিজীবী ও জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে খুব একটা বের হচ্ছে না।

তিন দিনের অবরোধের শেষ দিন বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর)। এই অবরোধে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে বেশ কয়েকটি বাসে। রাজনৈতিক এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে অনেকটাই আতঙ্কে রয়েছে সাধারণ মানুষ।

এমন পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় আয় কমেছে রাজধানীর রিকশাচালক, বাসচালক, সিএনজিচালক, চায়ের দোকানদার, ফেরি করে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করা নিম্ন আয়ের মানুষ ও শ্রমজীবীদের।

অবরোধের তিন দিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও এসব নিম্ন আয়ের মানুষ ও শ্রমজীবীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে।

এই সময়ে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে রিকশাভাড়া। তারপরও আয় কমেছে বলে দাবি করছেন রিকশাচালকরা।

রাজধানীর বিজয়নগর পানির ট্যাংক মোড়ে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় রিকশাচালক মঞ্জুর। তিনি বলেন, অবরোধের কারণে মানুষ বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় আসতে পারছে না। ঢাকায় যারা থাকেন তারাও বাসা থেকে বের হচ্ছে না। রাস্তা যেমন ফাঁকা, তেমনি মানুষও নাই। রিকশাভাড়া কিছুটা বেশি নিলেও যাত্রী না থাকায় আয় কমেছে।

তিনি বলেন, অবরোধের আগে প্রতিদিন গ্যারেজ খরচ দিয়ে ৬০০ টাকার মতো থাকতো। এখন ৩০০ টাকা রাখতেও কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। গত তিন দিন নিজের খরচ উঠাতেই কষ্ট হচ্ছে। বাড়িতে আর পাঠাব কী?

মগবাজার মধুবাগ এলাকায় চা-বিস্কুট বিক্রি করেন মজিবর রহমান। তিনি বলেন, অবরোধের আগে বিভিন্ন জায়গায় মানুষ কাজে আসত, চা খেত। কিন্তু এখন এলাকার ক্রেতা ছাড়া আর কোনো ক্রেতা নেই। অবরোধের আগে প্রতিদিন ১৫০-১৮০ কাপ চা বিক্রি করতাম, চায়ের সঙ্গে সিগারেট, বিস্কুটসহ অন্যান্য জিনিস কিনত মানুষ। এই তিনদিন ৮০-৯০ কাপের বেশি চা বিক্রি করতে পারিনি। আয় প্রায় অর্ধেক কমে গেছে।

রাস্তায় গণপরিবহনের সংখ্যা কম থাকায় যাত্রীর চাপ বেশি। রাস্তা ফাঁকা থাকায় স্বাভাবিকের তুলনায় বেশিবার ট্রিপ দিতে পারছেন বাস চালকরা। তারপরও আয় কমেছে বলে দাবি করছেন তারা।

৮ নম্বর বাসের হেলপার আবির বলেন, রাস্তা ফাঁকা থাকায় বেশি ট্রিপ মারতে পারছি, কথা সত্য। যাত্রীও বেশি আছে। তবে সেটা শুধু অফিস টাইমে। অন্য সময় গাড়ি পুরো খালি যাচ্ছে। আমরা যেহেতু গাবতলী থেকে সদরঘাট রুটে বাস চালাই, আমাদের যাত্রীর বেশিরভাগই ঢাকার বাইরের যাত্রী। কিন্তু অবরোধের কারণে দূরপাল্লার বাস না আসায় আমাদের যাত্রী কমেছে। আবার স্কুল-কলেজও বন্ধ থাকায় যাত্রী নেই। অনেকে আবার বাসে আগুন দেওয়ার কারণে আতঙ্কে আছে। তাই অনেকে বাসে উঠছেন না।

রাস্তায় ফেরি করে ডাব বিক্রি করেন রাম বাবু। তিনি বলেন, ফজরের নামাজের পর ৫০ পিস ডাব নিয়ে বের হইছি। বেলা ১২টা পর্যন্ত ২৫ পিসও বিক্রি করতে পারিনি। অন্য সময় হলে এতক্ষণে সবগুলো বিক্রি হয়ে যেতো। রাস্তায় মানুষের চলাচল কম, তাই বেচাবিক্রিও কম। আবার অবরোধের কারণে ডাবের দামও বেড়েছে। ৮০ টাকার ডাব হয়েছে ১০০ টাকা।

এভাবে অবরোধ চলতে থাকলে রাজধানী ছেড়ে বাড়ি চলে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই বলে জানিয়েছেন জয়পুরহাটের এই ডাব বিক্রেতা। তিনি বলেন, বিএনপির সমাবেশের পর থেকেই বেচা-বিক্রি কমে গেছে। এমনিতেই জিনিসপত্রের যে দাম, তাতে চলা মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। তার ওপর হরতাল-অবরোধে আয় আরও কমেছে। এভাবে চললে বাড়ি চলে যেতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২, ২০২৩
এসসি/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।