ঢাকা: ‘ও বাজান আমারে একটা সুইপারের চাকরি দেবেন। ও বাজান আমারে একটা ঝাড়ু দেবার কাম দেবেন।
এভাবেই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের কাছে আকুতি জানাচ্ছিলেন তৃতীয়লিঙ্গের ঝিনুক।
আজ (বুধবার) বেলা বারোটার দিকে যাত্রাবাড়ী উড়াল সড়কের নিচের চার রাস্তার মোড়ে সড়ক বিভাজনের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ পরিদর্শন করতে গেলে মেয়রকে সামনে পেয়ে এভাবেই বিলাপ করে চাকরির আবদার জানান ঝিনুক।
যদিও চারিদিকে সরকারি কর্মকর্তারা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এবং নেতাকর্মীরা ঘিরে থাকায় তার এই আবদার মেয়রের কান পর্যন্ত যেতে পারেনি।
পরিদর্শন শেষে মেয়র যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে চলে যান।
তবে ঝিনুক আশা হারাননি। তার আশা মেয়র তার আবদার জানতে পারলে অবশ্যই তিনি তার জন্য একটা ভালো ব্যবস্থা করবেন।
ঝিনুকের মতে, সমাজে তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিরা যেভাবে আয় করেন সেটা সঠিক পদ্ধতি নয়। কারও কাছে হাত পেতে বা চাঁদা নিয়ে নয়, শ্রম দিয়ে আয় করে জীবিকা নির্বাহ করতে চান তিনি।
কথা হলে ঝিনুক বাংলানিউজকে বলেন, আমি রাস্তাঘাট ঝাড়ু দেওয়ার কাজ খুঁজছি। কর্ম করে ভাত খেতে চাই, আমি হিজড়াদের মতন চাঁদা তুলি না। আবার মা নাই, বাপ নাই, ছোট দুইটা বোন আছে।
চট্টগ্রামের বাসিন্দা হলেও ঢাকায় সায়দাবাদ জনপথের মোড়ে থাকেন বলে জানান ঝিনুক। সঙ্গে দুই ছোট বোনও থাকে। তাদের বড় করে ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা তার। সেজন্য প্রয়োজন নিশ্চিত একটি চাকরির।
ঝিনুক বলেন, আমার আসল নাম হচ্ছে মোহাম্মদ নূর হোসেন শিকদার। আর হিজড়ার খাতায় নাম দিছি ঝিনুক। সায়দাবাদ জনপথের আশপাশের এলাকায় আমাকে পাওয়া যাবে। আমার ইচ্ছা আমি রাস্তাঘাট পরিষ্কারের কাজ করব। যাতে করে আমি দুই বোনকে সঙ্গে নিয়ে তিন বেলা শান্তিমতো খেতে পারি। ঘর ভাড়া এবং খাওয়া দাওয়ার খরচ দিয়ে যেন চলতে পারি।
তিনি বলেন, ঝাড়ু দেওয়ার চাকরি যদি নিতে পারি এই আশায় মেয়রের কাছে আবদার করতে আসছি। পাঁচ হাজার টাকা ঘর ভাড়া দিতে পারি না, ভাঙারি টুকাইয়া খাই আমি। আমি হিজড়াদের মতো চাঁদাও উঠাই না। আর বাসা বাড়ি থেকে টাকাও নেই না। আমি রাস্তাঘাটে ভাঙারি টুকাইয়া খাই। আমারে কেউ ঝাড়ুদার এবং মেথরের কাজ দেয় আমি উপরওয়ালার কাছে প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয়া করব।
আপনার এই আবদার কী মেয়র শুনেছে? ঝিনুক বলেন, আমি বলেছি যদি না শুনতে পায় আমার তো কিছু করার নাই আর। তবে আমাকে একটা চাকরি দিলে অনেক খুশি হতাম। ছোট বোন দুইটারে বিয়ে দিতে হবে। সিটি করপোরেশনের যারা ময়লার কাজ করে তাদের কাছে গিয়েছিলাম ঝাড়ুদারের চাকরির জন্য। তারা বলেছে, আমাদের কাছে বলে লাভ নাই, মেয়রের কাছে বলতে হবে চাকরি দিলে তিনি পারবেন।
সমাজ বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান সময়ে হিজড়া বা তৃতীয় লিঙ্গের অনেকে ভিক্ষাবৃত্তি করতে চায় না। এমন চিন্তা ধারণ করে হিজড়াদের সংখ্যা দিন দিন উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। যারা কাজ বা চাকরি করতে চান। সমাজে বৈষম্য রোধ করতে চাইলে নারী-পুরুষের পাশাপাশি ট্রান্সজেন্ডার মানুষদের কর্মক্ষেত্রে নিয়ে আসতে হবে। এমন কর্মক্ষেত্র তৈরি করতে হবে, যেখানে ট্রান্সজেন্ডার মানুষেরা সহজে যুক্ত হতে পারেন। ফলে সমাজে বৈষম্য অনেকটাই দূর হতে পারে। মানুষের মানবিক গুণাবলি পরিবার থেকেই তৈরি হয়। সে জন্য বৈষম্য রোধে পরিবারের সমর্থন, শিক্ষা ও চাকরির ব্যবস্থা করা জরুরি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপ অনুযায়ী দেশে ট্রান্সজেন্ডার জনগোষ্ঠীর মানুষের সংখ্যা ১২ হাজার ৬২৯ জন। ২০১৬ সালে এক জরিপে এ সংখ্যা ছিল ১১ হাজার ৯৩। এসকল জরিপ করা হয় ডাক্তারি পরীক্ষার ভিত্তিতে। পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকে সারা দেশে ২ হাজার ৬০০ জন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে ভাতা দেওয়া হচ্ছে। ১ হাজার ২২৫ জন ট্রান্সজেন্ডার শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে প্রতিবছর কর্মক্ষম ১ হাজার ২০ জন ট্রান্সজেন্ডারকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০২৩
ইএসএস/এসএএইচ