ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ শ্রাবণ ১৪৩২, ০১ আগস্ট ২০২৫, ০৬ সফর ১৪৪৭

জাতীয়

কক্সবাজারে রেলের পথ খুলতে কেবল সকালের অপেক্ষা 

নিশাত বিজয়, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০:১৪, নভেম্বর ১১, ২০২৩
কক্সবাজারে রেলের পথ খুলতে কেবল সকালের অপেক্ষা 

ঢাকা: আগামী শনিবার (১১ নভেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেলা ১১টায় সুধী সমাবেশ শেষে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ উদ্বোধন করবেন।  

এর মাধ্যমে ১৩৩ বছরের স্বপ্ন অবশেষে হাতের মুঠোয় এসেছে কক্সবাজারবাসীর।

এখন অপেক্ষা কেবল একটি সকালের।

কক্সবাজারের চকোরিয়ার বাসিন্দা আব্দুল করিম (৫৫) বাংলানিউজকে বলেন, ‘আঁর (আমার) দাদার মুখত (মুখে) তো শুনিতাম, রেল লাইন আইবো, এতদিন নআইয়ে (আসেনি)। এহন আঁরার (আমাদের) স্বপ্ন পূরণ হইব’।

শুধু আব্দুল করিম নয়, কক্সবাজারের মানুষের সন্দেহভরা চিন্তার পেছনে রয়েছে  ১৩৩ বছরেও কক্সবাজার রেলপথ না আসার বাস্তবতা। ১৮৯০ সালে ব্রিটিশ আমলে প্রথম পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার হয়ে মিয়ানমারের (সাবেক বার্মা) আকিয়াব বন্দর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ। তারপর ১৯১৭ থেকে ১৯২১ সালে চট্টগ্রাম-দোহাজারী পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মিত হয়।  

কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণে পরিকল্পনা অনুসারে কক্সবাজার পর্যন্ত বাদবাকি অংশে রেলপথ তৈরি হয়নি।

এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী সিদ্ধান্তে দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার-ঘুনধুম রেলপথ স্থাপনের জন্য ২০১০ সালে প্রথম প্রকল্প নেওয়া হয়। শুরুতে এটি ছিল ‘দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ’ প্রকল্প। এতে মোট ১২৯ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণের কথা ছিল।

পরে রামু থেকে ঘুমধুম অংশের কাজ স্থগিত করা হয়। এখন চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ শেষ হলো।

মোট ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকার এ প্রকল্পে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ১৩ হাজার ১১৫ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে। বাকি ৪ হাজার ১১৯ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে।

প্রকল্পের জন্য কক্সবাজার জেলায় ১ হাজার ৩৬৫ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা হয়েছে নয়টি রেলওয়ে স্টেশন, চারটি বড় ও ৪৭টি ছোট সেতু, ১৪৯টি বক্স কালভার্ট ও ৫২টি রাউন্ড কালভার্ট।

তারপর চলতি বছরের আগস্ট মাসের শুরুতে চট্টগ্রাম অঞ্চলে রেকর্ড বৃষ্টিপাতের কারণে পাহাড়ি ঢলে রেললাইনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তার জন্য এ প্রকল্প আরও পিছিয়ে যায় কয়েক মাস।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজারে ঝিনুকের আদলে আধুনিক রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণের পাশাপাশি দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মোট ৯টি স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া সংরক্ষিত বন এলাকায় রেললাইন স্থাপন করায় বন্যহাতি ও বন্যপ্রাণী চলাচলের জন্য ওভারপাস নির্মাণ করা হয়েছে, যা দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম।

সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, জেলা শহর থেকে তিন কিলোমিটার আগে ঝিলংজা ইউনিয়নের হাজিপাড়া এলাকায় ২৯ একর জমির ওপর দৃশ্যমান আইকনিক রেল স্টেশন। ঝিনুকের আদলে তৈরি দৃষ্টিনন্দন এ স্টেশন ভবনটির আয়তন এক লাখ ৮২ হাজার বর্গফুট। ছয় তলা বিশিষ্ট স্টেশনটি নির্মাণে বিশ্বের বিভিন্ন আধুনিক স্টেশনের সুযোগ-সুবিধা বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। চার বছরের শ্রমে আইকনিক রেলস্টেশন ভবনটি আজ সত্যিই চোখ জুড়ানো বাস্তবতা।  

এরপরের চ্যালেঞ্জ মিয়ানমারের আপত্তি নিষ্পত্তি করে ঘুমধুম পর্যন্ত রেলপথ সম্প্রসারণের মাধ্যমে চীনসহ দক্ষিণ-পূর্ব ও পূর্ব এশীয় দেশগুলোর সঙ্গে রেলপথ চালু।  

এর ফলে বিনিয়োগ-শিল্পায়ন ও বাণিজ্যিক বন্ধন সহজতর হয়ে উঠবে। কৃষি-খামার ও শিল্প-কারখানায় উৎপাদিত পণ্যসামগ্রীর বাজারজাত এবং রপ্তানি সুবিধার প্রসার ঘটবে। বৃহত্তর চট্টগ্রামের জনসাধারণের কর্মচাঞ্চল্য ও সচ্ছলতা বাড়বে।

বাংলাদেশ সময়: ০০১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০২৩
এনবি/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।