ঢাকা, শনিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩২, ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

শ্রমিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে কারখানা কালো তালিকাভুক্ত করার হুঁশিয়ারি 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০২৩
শ্রমিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে কারখানা কালো তালিকাভুক্ত করার হুঁশিয়ারি 

ঢাকা: আন্দোলনরত শ্রমিকদের কালো তালিকাভুক্ত করলে বিদেশি বায়ারদের কাছে সে কারখানাকে কালো তালিকাভুক্ত করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন গার্মেন্টস শ্রমিকনেতারা।

বিজিএমইএ এর যে ডাটা বেজ আছে সেখানে শ্রমিকদের তথ্য- উপাত্ত দিতে বলেছে গার্মেন্টস মালিকরা।

আর এটাকেই গার্মেন্টস শ্রমিকনেতারা মনে করছেন এর মাধ্যমে মালিকরা শ্রমিকদের গণহারে কালো তালিকাভুক্ত করবেন। এর প্রতিবাদে শ্রমিক নেতারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এ তালিকার মাধ্যমে কোনো কারখানায় শ্রমিকদের যদি কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। তাহলে শ্রমিক নেতারা সে কারখানাকে বিভিন্ন বিদেশি বায়ারদের কাছে কালো তালিকা ভুক্ত করাবে।

বুধবার (১৫ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে সৃষ্ট শ্রমিক অসন্তোষ শ্রমিক হত্যা ও শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা, হয়রানি এবং সম্প্রতি বিজিএমইএ এর পদক্ষেপ নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়।

সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিল (আইবিসি)।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আইবিসির সাধারণ সম্পাদক কুতুবউদ্দিন আহমেদ।

লিখিত বক্তব্য পাঠ করলে কুতুবউদ্দিন আহমেদ বলেন, মজুরি বোর্ডে শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি মনোনীত করতে গার্মেন্টস সেক্টরের সর্বোচ্চ শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্বকারী জোট হিসেবে ইন্ডাট্রিজ বাংলাদেশ কাউন্সিল আইবিসির পক্ষ থেকে সর্ব সম্মতভাবে একজন সদস্যের নাম মনোনীত করে শ্রম মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। তারপরও আইবিসির মনোনীত সদস্যকে গ্রহণ না করে সরকার মালিকদের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে বেআইনিভাবে মজুরি বোর্ডে শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি মনোনীত করেন বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি শ্রমিক নেতা সিরাজুল ইসলাম রনিকে।

ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষের কারণ তুলে ধরে আইবিসির সাধারণ সম্পাদক বলেন, মজুরি বোর্ড গঠনের পর শ্রমিকদের মজুরির বিষয়টি তারা গুরুত্ব প্রদান না করে ঢিমেতালে এবং খেয়াল খুশিমতো মজুরি বোর্ডের সভা আহ্বান করেন এবং সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন। গত ৯ অক্টোবর মজুরি বোর্ড গঠনের ৬ মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও কোনো পক্ষ মজুরির প্রস্তাব দেননি। যা অতীতে কখনো দেখা যায়নি। শ্রমিক সংগঠনগুলো বারবার মজুরি বোর্ডের সামনে কর্মসূচি দেওয়াসহ মজুরি বোর্ডে স্মারকলিপি প্রদান ও মজুরি প্রস্তাবনা প্রদান করেন। সর্বশেষ গত ২২ অক্টোবর মজুরি বোর্ডে মালিকপক্ষ ১০ হাজার ৪০০ টাকার প্রস্তাবনা প্রদান করেন। যা অনেক কম হওয়ায় শ্রমিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলো মালিকপক্ষের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। মালিকপক্ষের কম মজুরি প্রস্তাব করার সাধারণ শ্রমিকদের মধ্যে হতাশা এবং ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। যার ধারবাহিকতায় বিভিন্ন কারখানায় শ্রমিক অপন্তোষ দেখা দেয় বলে আমরা মনে করি।

বিজিএমইএ বাংলাদেশ শ্রম আইনেরে ১৩(১) ধারা অপব্যবহার করে কারখানা বন্ধ করাসহ প্রায় ২০ হাজার অজ্ঞাতনামা শ্রমিকদের আসামি করে মামলা দিয়েছে অভিযোগ করে আইবিসির সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিজিএমইএ'র সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগুলিয়া, গাজীপুর, মিরপুর এলাকার গার্মেন্টস কারখানগুলো ১৩(১) ধারা অনুসারে বন্ধ করে দেওয়া হয়। কারখানার গেটে শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ নোটিশ টানিয়ে দেয় এবং মামলা করা শুরু করেন। এরই মধ্যে গাজীপুর এলকায় ২২টি ফৌজদারি মামলা করা হয়। আশুলিয়া ও সাভার এলাকায় ৪০টি মামলা হয়। এসব মামলায় প্রায় ২০ হাজার অজ্ঞাতনামা শ্রমিকদের আসামি করা হয়। এরই মধ্যে ওই মামলায় ৯৫ জন শ্রমিক গ্রেপ্তার হয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশ মুক্ত গার্মেন্টস শ্রমিক ইউনিয়ন ফেডারেশনের একজন, জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের দুইজন, একতা গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের একজনসহ আমাদের জানামতে ৬ জন স্থানীয় শ্রমিক নেতাকে পুলিশ মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করেছেন। যারা বর্তমানে জেলে আছেন। পাশাপাশি চলমান আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে ৩ জন এবং কারখানায় আগুনে পুড়ে ১ জনসহ মোট ৪ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। একইসঙ্গে আহত হয়েছেন অসংখ্য শ্রমিক।

তিনি আরও বলেন, বিজিএমইএ সার্কুলারের মাধ্যমে বাংলাদেশ শ্রম আইনেরে ১৩(১) ধারা অপব্যবহার করে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে এবং শ্রমিকদের কালো তালিকাভুক্ত করার জন্য তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করছেন। এর ফলে শ্রমিকদের মধ্যে আরও ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে।  


এ সময় আইবিসির পক্ষ থেকে ৬ দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো- 


১। গণহারে শ্রমিক ও শ্রমিক নেতাদের গ্রেপ্তার হয়রানি বন্ধ করতে হবে।


২। সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে এবং গ্রেপ্তার নেতা ও শ্রমিকদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।  


৩। ১৩(১) ধারায় বন্ধ রাখা কারখানার শ্রমিকদেরকে পূর্ণ মজুরি প্রদান করতে হবে, এ জন্য কোনো শ্রমিকের মজুরি কম দেওয়া যাবে না।


৪ । বন্ধ কারখানা অবিলম্বে খুলে দিতে হবে।


৫। কোনো শ্রমিককে কালো তালিকাভুক্ত করা যাবে না।


৬। যেসব শ্রমিক আহত হয়েছেন তাদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে হবে এবং যেসব শ্রমিক নিহত হয়েছেন তাদের পরিবারকে লস অব ইয়ার আনিং হিসাবে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন আইবিসির সভাপতি আমিরুল হক আমিন।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন আইবিসির কেন্দ্রীয় নেতা বাবুল আকতার, তৌহিদুর রহমান, সালাউদ্দিন স্বপন, জেডএম কামরুল আনাম, রুহুল আমিন, নুরুল ইসলাম, রাশেদুল আলম রাজু, চায়না রহমান, আবুল কালাম আজাদ, কামরুল হাসান, মো. শাহাদাত হোসেন ও কায়সারুন নবী রুবেল।


বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৩  ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০২৩
ইএসএস/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ