ঢাকা: জলবায়ু ন্যায্যতার দাবিতে আগামী ১৭-১৮ নভেম্বর সমাবেশ করবে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে কর্মরত কয়েকটি পরিবেশবাদী সংগঠন। দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জলবায়ু সম্মেলনে (কপ-২৮) বিশ্বনেতাদের কাছে জলবায়ু ন্যায্যতার ও অধিকারগুলো জোরালোভাবে উপস্থাপন করতে এই সমাবেশের আয়োজন করা হচ্ছে।
বুধবার (১৫ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ-২০২৩ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে ওয়াটার কিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরিফ জামিল এসব তথ্য জানান।
দুই দিনব্যাপী এ সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হবে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীর স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। আয়োজনে দেশি ও বিদেশি অংশীজনদের পাশাপাশি জীবাশ্ম জ্বালানিজনিত জলবায়ু সংকটের হুমকিতে থাকা উপকূলীয় ও অন্যান্য এলাকা থেকে প্রায় ৭০০ জন এই আয়োজনে সরাসরি অংশগ্রহণ করবে।
সমাবেশের আয়োজন করবে ব্ৰতী সমাজ কল্যাণ সংস্থা, সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, কোস্ট ফাউন্ডেশন, গ্লোবাল ল থিংকার্স সোসাইটি, ইন্ডিজিনাস পিপলস ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসেস, লোকাল এনভায়রনমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার সোসাইটি, ন্যাশনাল রিভার আলাইন্স, সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন, ইয়ুথ নেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস, এবং ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ। এছাড়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বেশ কিছু সংস্থা এই সমাবেশে সহ আয়োজক হিসেবে যুক্ত।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাংলাদেশের জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদনের কেন্দ্রগুলোর সংলগ্ন জনপদ ও জলবায়ু সংকটাপন্ন এলাকাগুলো থেকে স্থানীয় জনগণ বিভিন্ন দাবিতে জড়ো হয়ে সম্মিলিতভাবে তাদের দাবিগুলো তুলে ধরতে ও সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। জলবায়ু সংবেদনশীল এলাকায় কয়লা ও গ্যাসভিত্তিক বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণের ফলে স্থানীয়দের ক্ষতির পরিমাণ ও ভোগান্তি অভূতপূর্বভাবে চরমে পৌঁছেছে। এ কারণে স্থানীয় বহু জেলে, কৃষক এবং আদিবাসী পরিবার বাস্তুহারা হয়েছে। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের দায় আমাদের না থাকলেও, উন্নত দেশসমূহের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের পাশাপাশি নিজেদের প্রভাব বৃদ্ধির লাগামহীন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের মত ক্ষতিগ্রস্ত দেশসমূহ ঐতিহাসিকভাবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিরূপ প্রভাবের শিকার। তাই উন্নত দেশগুলোর প্রতি জোরালো চাপ সৃষ্টি ও ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সংহতি জানাতে এ সমাবেশ আয়োজন করা হয়েছে।
শরিফ জামিল বলেন, ২৭ বছর ধরে জলবায়ু সম্মেলনগুলোয় শুধু আলোচনাই হয়েছে। সমস্যা নিরসনে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। সারাবিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী জীবাশ্ম জ্বালানি। পরিবেশবাদীরা তা যৌক্তিকভাবে উপস্থাপন করেছেন। জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের ভূমিকা খুবই নগণ্য। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় সামনের সারিতে। জলবায়ু হুমকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর কথা আমরা সমাবেশে তুলে ধরতে চাই।
ব্রতীর নির্বাহী পরিচালক শারমীন মুরশীদ বলেন, পরিবেশ জলবায়ু মানবাধিকারের জায়গা ধ্বংস করে দিয়েছে। বর্তমানে যে পরিবর্তন ঘটছে, তাতে মানুষের নূন্যতম জায়গাটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ-২০২৩ এর আহ্বায়ক সুলতানা কামাল বলেন, জলবায়ু ন্যায্যতার অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তারা সমাবেশে কথা বলবেন। তাদের মতামতের ভিত্তিতে আমরা ঘোষণা দেওয়ার চেষ্টা করবো। জলবায়ু ন্যাযতার জন্য মানবাধিকারের জন্য আমরা দীর্ঘদিন কাজ করছি। আমরা তো নীতি তৈরি করতে বা বাস্তবায়ন করতে পারি না। মানবাধিকার নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, আমাদের সমাজে মানবাধিকার সংস্কৃতি সেভাবে গড়ে ওঠেনি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরামের সভাপতি কাওসার রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন, সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল ভদ্র, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিব দ্রং প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০২৩
ইএসএস/এমজে