ঢাকা: আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে তৎপর হয়ে উঠেছে কিছু প্রতারকচক্র। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের হোয়াটসঅ্যাপে কল করে এনএসআই পরিচয় দিয়ে প্রতারণা ফাঁদ পাতেন তারা।
এমন প্রতারণার জালে আটকে পড়ে ৫০ লাখ টাকা খুইয়েছেন মনোনয়নপ্রত্যাশী ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের জেলা সাধারণ সম্পাদক দীপক কুমার রায়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী দীপক কুমার রায় বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার অভিযোগের ভিত্তিতে ওই প্রতারকচক্রের তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
ভুক্তভোগী দীপক কুমার রায় জানিয়েছেন, তার মোবাইল ফোনে মেসেজ আসে, ‘আমি এনএসআই এর ডিডি হিসাবে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে কাজ করি। আমি জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন সংক্রান্ত ইস্যুতে কাজ করছি। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আমি কয়েক জন বিভিন্ন আসনে মনোনয়ন পাইয়ে দিয়েছে। ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ইতিমধ্যে কয়েকজনের মনোনয়নের বিষয়টি আমি নিশ্চিত করছি। ’
এরপর হোয়াটসঅ্যাপে কল করে এনএসআই পরিচয়ধারী প্রতারক বলেন- ‘আপনার মনোনয়নের বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে। তাই আপনাকে ৫০ লাখ টাকা নগদ দিতে হবে। ’
এরপর ভুক্তভোগীকে প্রধানমন্ত্রীর কন্যা পুতুল নামীয় একজন মহিলা কণ্ঠের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেয় চক্রের সদস্যরা।
এভাবে প্রতারণার ফাঁদ পেতে গত ৩ সেপ্টেম্বর দীপক কুমার রায়ের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারকচক্ররা।
পরে ২৬ নভেম্বর মনোনয়ন চূড়ান্তভাবে প্রকাশ হলে সেখানে তার নাম না থাকায় ভুক্তভোগী বুঝতে পারেন তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এরপর ভুক্তভোগী দীপক কুমার রায় বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলার অভিযোগের ভিত্তিতে তথ্য প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের সহায়তায় শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ও ঠাকুরগাঁও জেলার রুহিয়া থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রতারকচক্রের ৩ সদস্যতে গ্রেপ্তার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগ।
গ্রেপ্তার প্রতারকরা হলেন- নুরুল হাকিম (৩১), হাসানুল ইসলাম জিসান (২২) ও মো. হারুন অর রশিদ (২৯)।
শনিবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের টার্গেট করে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র দেশব্যাপী সক্রিয় হয়। এর ধারাবাহিকতায় চক্রটি দেশের বিভিন্ন স্থানে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের টার্গেট করে। ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের অভিযানে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
হারুন অর রশীদ বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার আসামীরা আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাথে প্রতারণার কথা স্বীকার করেছে।
নির্বাচন তফসিল ঘোষণার পর গ্রেপ্তার আসামি নুরুল হাকিম নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর সচিব মোহাম্মদ সালাউদ্দিন ও অপর আসামী হাসানুল ইসলাম জিসাননিজেকে একান্ত সচিব-২ জয় মোর্শেদের পরিচয় দিয়ে ৩টি নম্বরে হোয়াটসঅ্যাপ থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ফোন করেন। মনোনয়ন পাইয়ে দেবে বলে তাদের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা দাবি করেন তারা৷
এছাড়া গ্রেপ্তার আসামিরা নিজেদের সমাজসেবা কর্মকর্তা ঢাকা জেলা সমাজ সেবা উপ-পরিচালক শেখ কামাল হোসেন এবং সাভার উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার মোহাম্মদ শিবলী জামান পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন এলাকার স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করেন। এরপর বিভিন্ন সরকারি ভাতা কার্ড প্রদান করা হবে বলেও তালিকা করিয়ে প্রলোভনের মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ করতেন।
প্রতারক চক্রের সদস্য নুরুল হাকিমের বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে ৩টি মামলা চলমান থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) হারুন অর রশীদ বলেন, এবিষয়ে প্রতারণার শিকার হয়ে ভুক্তভোগী নিজেই অনেক অনুতপ্ত হয়েছেন। তিনি (ভুক্তভোগী) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বিষয়টি জানান। এরপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবিষয়ে আমাদের দেখার জন্য বললে আমরা দুই দিনের মধ্যে প্রতারকদের গ্রেপ্তার করি।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে হারুন অর রশীদ বলেন, মনোনয়নপ্রত্যাশীদের অনেকেই প্রতারকদের ফাঁদে পা দিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তবে যারা আমাদের কাছে অভিযোগের বিষয়টি জানিয়েছেন আমরা গুরুত্বের সঙ্গে প্রতারকদের আইনের আওতায় নিয়ে আসছি।
তিনি বলেন, এমন প্রতারণার শিকার আরও কেউ থাকলে আমাদের জানাবেন। অবশ্যই আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিবো৷
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৯, ২০২৩
এসজেএ/এসএএইচ