ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

শাহবাগে পুলিশি বাধা, মায়ের ডাকের সমাবেশ প্রেসক্লাবের সামনে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৯, ২০২৩
শাহবাগে পুলিশি বাধা, মায়ের ডাকের সমাবেশ প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘মায়ের ডাক’র সমাবেশ | ছবি: জি এম মুজিবুর

ঢাকা: আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে ‘গুম-খুন, ক্রসফায়ার, কারা নির্যাতন বন্ধ করো! মানবাধিকার লঙ্ঘন রুখে দাঁড়াও!’ আহ্বানে সমাবেশ করেছে গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’।

শনিবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে সমাবেশটি শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে হওয়ার কথা ছিল।

কিন্তু পুলিশের বাধার কারণে সেখানে সমাবেশ করতে পারেননি সংগঠনটির সদস্যরা। পরে মিছিল নিয়ে তারা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে সমাবেশ করেছেন।

সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে মায়ের ডাকের সমন্বয়কারী আফরোজা ইসলাম আঁখি বলেন, গত ১০-১২ বছর ধরে আমরা আমাদের স্বজনদের ফিরে পাওয়ার জন্য, যাদের খুন করা হয়েছে তাদের বিচারের দাবিতে রাজপথে আছি। এখন যাদের গায়েবি মামলা দিয়ে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, কারাগারে নির্যাতন করা হচ্ছে, যাদের না পেয়ে তাদের স্বজনদের, বাবাকে, ভাইকে, স্ত্রীকে সন্তানসহ কারাগারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাদের বিচারের দাবিতে, তাদের ফিরে পাওয়ার দাবিতে রাজপথে দাঁড়িয়েছি। এই সরকারের নিপীড়নের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য আমরা রাজপথে দাঁড়িয়েছি।

তিনি আরও বলেন, আমরা শাহবাগে দাঁড়িয়েছিলাম, সেখানে আমাদের কথা বলতে দেওয়া হয়নি, আমাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করি এই অবস্থার উন্নতি হবে, আমরা আমাদের স্বজনদের ফিরে পাবো, এই নির্যাতনের অবসান হবে।

মায়ের ডাকের আহবায়ক সানজিদা ইসলাম তুলি বলেন, গুমের শিকার ব্যক্তিদের ৪৪টি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আমরা সমাবেশ আয়োজন করেছিলাম, আমাদের মাইক কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এই দেশে আমাদের দুঃখের কথাগুলো বলার অধিকার পর্যন্ত নেই।

সুত্রাপুর থানা ছাত্রদলের সভাপতি সেলিম রেজা পিন্টুর বোন রেহানা বানু মুন্নী বলেন, আমার ভাইকে ২০১৩ সালের ১১ ডিসেম্বর মাঝরাতে বাসা থেকে তুলে নেওয়া হয়। তাকে ৭-৮ জন অস্ত্রধারী প্রশাসনের লোক দিয়ে তুলে নেওয়া হয়েছিল। আজকে দশ বছর আমার ভাইয়ের কোনো খোঁজ নাই। আমরা রাস্তায় রাস্তায় ভাইয়ের জন্য কাঁদি। আমার বাবা মারা গেছেন, মা মৃত্যু পথযাত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আপনি তো মাদার অব হিউম্যানিটি, মানবতার মাতা, আপনি রোহিঙ্গাদের সাহায্য করেছেন। আমাদের কান্না কি আপনি শোনেন না? আমাদের কান্না কি আপনার কানে যায় না? আজকে ১০ বছর ধরে আমরা কাঁদছি, কেন আপনি দেখছেন না?

২০১৩ সালে গুম হওয়া বংশাল থানা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ সোহেলের মেয়ে সাফা বলে, ২০১৩ সালের ২ ডিসেম্বর আমার বাবাকে রাস্তা থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে, গুম করা হয়েছে। গত ১০ বছর ধরে আমি আমার বাবাকে দেখিনি। বাবাকে আমি রাস্তায় রাস্তায় খুঁজেছি, পাইনি। প্রতিদিন বড় হচ্ছি বাবার আদর ছাড়া। বাবাকে কখনো বাবা বলেন ডাকতে পারিনি। সরকারের কাছে আমার একটাই দাবি, আমার বাবাকে ফিরিয়ে দিন। বাবাকে ছাড়া আর কিচ্ছু চাই না।

নিউমার্কেট থানা ছাত্রদলের সভাপতি বাচ্চুর বোন ঝুমুর আক্তার বলেন, আমার ভাইকে ২০১৪ সালে নির্যাতন করে মেরে ফেলা হয়েছে, আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমার ভাইকে মারার জন্য আমাকে ছয় মাস জেলে রাখা হয়েছে। আমরা কেমন স্বাধীন দেশে বাস করি, যেখানে ভাইয়ের জন্য বোন, ভাইয়ের জন্য ভাই, বাবার জন্য ছেলে জেল খাটে? আমার ভাইকে তো মেরে ফেলা হয়েছে। যাদের ভাই এখনো গুম রয়েছে, তাদের আমরা ফেরত চাই।

গুমের শিকার বংশাল থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মো. পারভেজ হোসেনের স্ত্রী ফারহানা আক্তার বলেন, আমার অধিকারের কথাটা বলতে, আমাকে কেন বাঁধা দেওয়া হয়েছে? আমার বাচ্চাটাকে গাড়ি থেকে নামতে দেওয়া হয় নাই। কেন আমাদের বাচ্চাটাকে গাড়িতে রেখে আসতে হয়েছে। আমরা কী অন্যায় করেছি যে, আমার স্বামীকে গুম করা হয়েছে। আমার স্বামীর কী দোষ আমি এটা জানতে চাই।

গাড়িচালক কাউসার হোসেনের মেয়ে লামিয়া আক্তার মীম বলেন, আজ ১১ বছর হয়ে গেছে আমি আমার বাবাকে দেখি না। আমি আমার বাবাকে ফেরত চাই। আমার আবাবকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিন। আমি আমার বাবাকে একটু দেখতে চাই।

সমাবেশে ভুক্তভোগীর পরিবার ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, আমরা আজকে দেখতে পাচ্ছি, কীভাবে একটি ফ্যাসিস্ট দানবীয় সরকার মানুষের বুকের রক্তের উপর দিয়ে, মানুষের লাশের উপর দিয়ে ক্ষমতাকে ধরে রাখার চেষ্টা করছে। তারা হেলমেট বাহিনী, লাঠিয়াল বাহিনী বানিয়ে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে ঘরে ঘরে মানুষকে অত্যাচার করছে, হত্যা করছে। এর কোনো বিচার নেই। এই যে শ্রমিক আন্দোলনে ৩-৪ জন শ্রমিক হত্যা হয়েছে, সেই শ্রমিক আন্দোলনে পুলিশ মারা গেলে সেটি নিয়ে কথা হচ্ছে। কিন্তু যেসব শ্রমিক মারা গেছে, তাদের পরিবার নিয়ে কোনো কথা হচ্ছে না। এই হলো আজকে আমাদের অবস্থা।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, পুলিশসহ এই সরকারের যত বাহিনী আছে, যত অত্যাচারই করুক, মায়ের ডাক তারপরও তাদের লড়াই অব্যাহত রাখছে। এই লড়াই অব্যাহত রাখতে হবে। কারণ সরকার কোনো কথা শুনবে না। গত ১০ বছরে আমরা কতবার প্রেসক্লাবের সামনে দাঁড়িয়েছি, কতবার কথা বলেছি। আমাদের মানবতার ডাক সরকারের কানে যায়নি। এখন মানুষের সমস্ত মানবিক অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার, মৌলিক অধিকার, ভোটের অধিকার হরণ করে তারা (সরকার) একটি তামাশা তৈরির চেষ্টা করছে।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, গুম-খুন চলছে, বিনা বিচারে হত্যাকাণ্ড চলছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে কিংবা জেলের ভেতরে হত্যাকাণ্ড চলছে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গায়েবি, মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করে নির্যাতন করা হচ্ছে, আটক করে রাখা হচ্ছে এবং নিম্ন আদালতকে নির্দেশ দিয়ে ফরমায়েশি সাজা দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনি ১৫ বছর ধরে একটানা ক্ষমতায় আছেন, এর আগেও পাঁচ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। আপনার ১০ বছরের ক্ষমতা মানুষের ভোটের ভিত্তিতে হয়নি। আপনি ক্ষমতায় আছেন জবরদস্তি করে। ক্ষমতায় থাকার জন্য আপনি সমস্ত বিরোধী দলকে জেলে পাঠাতে চাইছেন। পুরো দেশকে বিরোধী দলের জন্য কারাগারে পরিণত করতে চাইছেন। এটা আপনার জন্য কোনো গৌরব নয়।

সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি নুরুল হক নুর, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সিনিয়র সহ-সভাপতি তানিয়া রব প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০২৩
এসসি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।