ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বেশি বেতনের আশ্বাসে তরুণীকে ডাকা হয় বাসায়, মেরে মরদেহ ফেলা হয় নদীতে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০২৩
বেশি বেতনের আশ্বাসে তরুণীকে ডাকা হয় বাসায়, মেরে মরদেহ ফেলা হয় নদীতে র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার দুই আসামি এনামুল সানা (২৭) ও সোহাগ রানা (২৮)। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: নরসিংদীর পলাশ এলাকায় একটি গার্মেন্টসে চাকরি করতেন রুবিনা খাতুন (২৪)। ছয় মাস আ‌গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয় হয় হয় ঢাকার আশুলিয়ার বাসিন্দা এনামুল সানার (২৭) সঙ্গে।

এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়। এনামুল প্রায়ই রুবিনাকে অধিক বেতনে অন্যত্র চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে আশুলিয়ায় আসতে বলতেন।  

একদিন এনামুলের স্ত্রী-সন্তানেরা খুলনার গ্রামের বাড়ি চলে গেলে রুবিনাকে আশুলিয়ার বাসায় ডাকেন এনামুল। রুবিনা সে ফাঁদে পা দেন। তিনি ওই বাসায় গিয়ে কয়েকদিন থাকেন। এরপর এনামুলকে বিয়ের কথা বলেন। কিন্তু এনামুল বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানালে দুজনের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। এরই জেরে রুবিনাকে বা‌লিশচাপা দি‌য়ে হত্যা করেন এনামুল। পরে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও আত্মীয় সোহাগ রানাকে (২৮) ডেকে সেই মর‌দেহ গুম করতে বংশাই নদীতে ভা‌সি‌য়ে দেন।

তবে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় সোমবার (১১ ডিসেম্বর) রা‌তে আশুলিয়া থানার টেংগুরী এলাকায় অভিযান চা‌লি‌য়ে এনামুল ও সোহাগকে গ্রেপ্তার করা হয়। মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) দুপু‌রে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আ‌য়ো‌জিত এক সংবাদ সম্মেলনে পুরো ঘটনা তুলে ধরেন বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, গত ৯ ডিসেম্বর বিকেলে ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানার শিমুলিয়া ইউনিয়নের বিক্রমপুর এলাকায় বংশাই নদীতে একটি মরদেহ ভাসতে দেখে স্থানীয় লোকজন নৌ-পুলিশ ও র‌্যাবকে জানায়। প‌রে র‌্যাব-৪ এর গোয়েন্দা দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ভাসমান নারীর মরদেহের নাম ও পরিচয় শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। র‌্যাব জানতে পারে, দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর থানার রঘুনাথপুর দোলাপাড়া গ্রামের আব্দুল ওয়ারেছের মেয়ে রুবিনা খাতুনের মরদেহ এটি। পরে তার স্বজনদের খবর দেওয়া হয়। এখানে এসে রুবিনার ভাই আশুলিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।  

আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে খন্দকার আল মঈন ব‌লেন, রুবিনা খাতুন নরসিংদীর পলাশ এলাকার একটি গার্মেন্টসে চাকরি করতেন। ছয় মাস আ‌গে এনামুলের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার পরিচয় হয় এবং এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়। এনামুল সপরিবারে আশুলিয়ায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। তিনি আ‌গে গার্মেন্টসে সুপারভাইজারের চাকরি কর‌লেও বর্তমানে নিজের মোটরসাইকেল ভাড়ায় চালাতেন। এনামুল প্রায়ই তরুণীকে বেশি বেতনে অন্যত্র চাকরি দেওয়ার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে আশুলিয়ায় আসতে বলতেন। গত ৩ ডিসেম্বর এনামুলের স্ত্রী ও সন্তান গ্রামের বাড়ি খুলনার পাইকগাছায় চলে যান। এনামুল সুযোগ বুঝে রুবিনা খাতুনকে তার আশুলিয়ার ভাড়া বাসায় নিয়ে আসেন এবং বিভিন্ন মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত তার বাসায় রাখেন। এ সময় রুবিনা বারবার এনামুলকে বিয়ের কথা বললে তিনি তাতে অস্বীকৃতি জানান। এ নিয়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য ও ঝগড়া হয়। রুবিনা এরপরও বিয়ের কথা বলতে থাকলে তাদের মধ্যে বাক-বিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে এনামুল ক্ষিপ্ত হয়ে রুবিনার মুখে বালিশ চাপা দিয়ে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। তবে ওই সময় রুবিনার হাতে মেহেদীতে আঁকা নিজের নাম দেখে সেটা মুছে দিতে মেহেদী কিনে আনেন এবং নিজের নামটি ঢেকে দেন।

খন্দকার আল মঈন ব‌লেন, আসামিরা জানান—রুবিনাকে হত্যার পর এনামুল ঘটনা ধামাচাপা দিতে তার আত্মীয় ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু সোহাগকে মোবাইল ফোনে বিষয়টি জা‌নি‌য়ে তার বাসায় আসতে বলেন। প‌রে এনামুলের বাসায় আসেন সোহাগ এবং রুবিনার মরদেহ গুম করতে নদীতে ফেলে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযা‌য়ী, এনামুল ও সোহাগ রাত ৩টার দি‌কে রুবিনার মরদেহ চাদরে পেঁচিয়ে বাসার নিচে নামিয়ে আনেন। এরপর মোটরসাইকেলের মাঝখানে বসিয়ে আনুমানিক পাঁচ কিলোমিটার দূরত্বে বংশাই নদীর ওপর রাঙ্গামাটি ব্রিজে এনে তা নদীতে ফেলে দেন। প‌রে তারা নিজ নিজ বাসায় গিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন শুরু করেন।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, তাদের মধ্যে এই বিশ্বাস জন্মায় যে, যেহেতু তারা গোপনে মরদেহ নদীতে ফেলে দিতে সক্ষম হয়েছেন, ভিকটিমের মরদেহটি খুঁজে পাওয়া গেলেও তার হত্যাকারীকে শনাক্ত করা যাবে না। সুতরাং তারা গ্রেপ্তার এড়াতে সক্ষম হবে। কিন্তু র‌্যাব প্রযু‌ক্তির ব্যবহা‌রের মাধ্যমে তা‌দের গ্রেপ্তার কর‌তে সক্ষম হয়।

আসামিদের বিষয়ে র‍্যাব জানায়, এনামুল আনুমানিক ৭-৮ মাস আ‌গে নারীকেন্দ্রিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে আশুলিয়ার আগের বাসা থেকে বিতাড়িত হন। এছাড়াও তিনি একাধিক নারীঘটিত বিষয়ে জড়িত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে খুলনার পাইকগাছা থানায় শিশু অপহরণ, চুরি ও মারামারি সংক্রান্ত একাধিক মামলা রয়েছে। সোহাগ গত দুই বছর ধরে ঢাকায় অবস্থান করছেন। তিনি পেশায় বাসের হেলপার। এনামুলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হওয়ায় তার যাবতীয় অপকর্মের অন্যতম সহযোগী হিসেবে পাশে থাকতেন সোহাগ। আ‌গে ঢাকার ধামরাই থানায় মাদক মামলায় এক মাস কারাভোগ করেছেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০২৩
এমএমআই/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।