ফরিদপুর: জীবিকার তাগিদে সুদের ওপর টাকা নিয়ে গত ছয় মাস আগে দালালের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় যান ফরিদপুরের সালথা উপজেলার বল্লভদী ইউনিয়নের ফুলবাড়িয়া গ্রামের চার যুবক। তবে ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে এখনও মেলেনি তাদের কোনো কাজকর্ম।
এ অবস্থায় দেশ থেকে দেনা হয়ে বিদেশে গিয়ে বেকার হয়ে বসে থাকায় তাদের ঋণের বোঝা আরও ভারি হচ্ছে। অন্যদিকে দেনাদারদের চাপে নিজ বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে তাদের পরিবারগুলো। শেষমেশ কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে অভিযুক্ত দালালের বিরুদ্ধে গত ২০ ডিসেম্বর সালথা থানায় আলাদা দুটি অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী পরিবার।
ভুক্তভোগীদের পরিবার জানান, ভাগ্য বদলের আশায় ছয় মাস আগে ফুলবাড়িয়া গ্রামের আদম ব্যবসায়ী (দালাল) আতিক মোল্যার মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান একই গ্রামের আলমগীর মোল্যা (৪৫), হেমায়েত মোল্যা (৪২), সোনা মিয়া (৩৫) ও সামিউল (৩৮) নামে চার যুবক। মালয়েশিয়ায় পাঠাতে জনপ্রতি পাঁচ লাখ করে টাকা নেন দালাল। চুক্তি ছিল এক সপ্তাহের মধ্যেই তাদের কাজ দেবে। কিন্তু এরই মধ্যে ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও পায়নি কাজ। আটকে রাখা হয়েছে তাদের পাসপোর্ট।
ভুক্তভোগী হেমায়েত মোল্যার স্ত্রী মর্জিনা বেগম বলেন, ছয় মাস আগে দালাল আতিক মোল্যা আমাদের বাড়িতে এসে আমার স্বামী হেমায়েতকে কোম্পানির ভিসায় মালয়েশিয়ায় পাঠানোর প্রস্তাব দেয়। ভালো বেতনে কাজ দেওয়ার প্রলোভন দেখায়। জীবিকার তাগিদে আমার স্বামী চুক্তি অনুযায়ী জমি বিক্রি করে ও ধারদেনা করে দালালকে পাঁচ লাখ টাকা দেয়। পরে তাকে সাপ্লাই ভিসায় মালয়েশিয়ায় পাঠানো হয়। সেখানে কিছু দিনের জন্য কাজ দেওয়া হলেও কোনো বেতন দিতো না। বিনা বেতনে কাজ করায় ঠিকমতো খেতেও পারতেন না তিনি। বর্তমানে তিনি বেকার।
তিনি আরও বলেন, মালয়েশিয়ায় আমার স্বামীর দুরবস্থার বিষয় দালাল আতিককে বলা হলে, তিনি নানাভাবে আমাকে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখায়। এমনকি আমাকে মারধরও করেছে। অন্যদিকে দেনাদারদের চাপে সন্তানদের নিয়ে আমি বাড়িতে থাকতে পারছি না।
আরেক ভুক্তভোগী আলমগীর মোল্যার পরিবার জানান, চড়া সুদের ওপর পাঁচ লাখ টাকা এনে দালাল আতিকের মাধ্যমে আলমগীর মোল্যাকে মালয়েশিয়ায় পাঠানো হয়। ভালো বেতনে কোম্পানির ভিসায় কাজ দেওয়ার কথা থাকলেও সাপ্লাই ভিসায় পাঠানোয় কোনো কাজ পাচ্ছেন না। গত চার মাস ধরে বিদেশ গেলেও বাড়িতে কোনো টাকা পাঠায়নি আলমগীর। পরে জানতে পারি কাজ না থাকায় আলমগীর সেখানে মানবতার জীবন-যাপন করছে। অন্যদিকে প্রায় প্রতিদিন পাওনাদারেরা বাড়িতে হাজির হন। তাদের চাপে চার মেয়ে নিয়ে আলমগীরের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
অপর ভুক্তভোগী সোনা মিয়ার পরিবার জানান, দালাল আতিকের মাধ্যমে ৫ লাখ টাকা চুক্তিতে মালয়েশিয়ায় যান সোনা মিয়া। এনজিও থেকে ঋণ তুলে ও সুদের ওপর টাকা এনে দালালকে দেয় সোনা মিয়া। কিন্তু ছয় মাস ধরে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করলেও কোনো কাজ তার ভাগ্যে জুটেনি। খেয়ে না খেয়ে বিদেশে বেকার জীবন পার করছেন। এতে তিনি বিদেশেও দেনা হচ্ছেন। অন্যদিকে দেনাদাররা বাড়িতে ভিড় করায় সোনা মিয়ার স্ত্রী বাড়ি ছাড়া। এসব বিষয় দালাল আতিককে কিছু বললেই বলে সামনে মাস থেকে কাজে দেবে বলে এড়িয়ে যান।
সামিউলকেও কোম্পানির ভিসা দেওয়ার কথা থাকলেও তাকেও সাপ্লাই ভিসায় মালয়েশিয়ায় পাঠানো হয়। বর্তমানে সামিউল ও তার পরিবার কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। ভুক্তভোগী পরিবারের দাবি, দালাল আতিক স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলে না। তার বিরোধিতা কেউ করলে তাকে মামলা-হামলার হুমকি দেয়।
এ বিষয় অভিযুক্ত আদম ব্যবসায়ী আতিক মোল্যার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার মাধ্যমে তারা বিদেশে গেছে। তবে কোম্পানি তাদের পাসপোর্ট রেখে ফটোকপি দিয়েছে। কাজ না থাকায় কোম্পানি তাদের বসিয়ে খাওয়াচ্ছে। কোনো প্রবাসীর পরিবারের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হয়নি। আমি আরও তাদের পরিবারকে চাল ডাল কিনে দিচ্ছি।
অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ফায়েজুর রহমান বলেন, অবৈধ প্রক্রিয়ায় বিদেশে নিয়ে থাকলে অভিযুক্ত দালালের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০২৩
এসএম