ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বেলকুচিতে বোমা বানাতে গিয়ে মৃত্যু: ৪ দিনেও হয়নি মামলা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০২৩
বেলকুচিতে বোমা বানাতে গিয়ে মৃত্যু: ৪ দিনেও হয়নি মামলা

সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে বোমা বিস্ফোরণে ফজলু শেখ (৪৫) নিহত হওয়ার চারদিনেও মামলা হয়নি। উদ্‌ঘাটন হয়নি ওই বিস্ফোরণের ঘটনার মূল রহস্য।

সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় কুষ্টিয়া সদর উপজেলার মিলপাড়া কবরস্থানে ফজলুর দাফন সম্পন্ন হয়েছে। তিনি ওই গ্রামের তোফাজ্জল শেখের ছেলে।  

এদিকে এ ঘটনায় মামলা দায়ের নিয়ে এখনও সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছে পুলিশ। পরিবারও মামলা দায়েরে অনীহা প্রকাশ করেছে। বাবা নিহত হলেও কোনো মামলার ঝামেলা জড়াতে চান না ছেলে রাশেদ।  

নিতের ছেলে মো. রাশেদ শেখ বাংলানিউজকে বলেন, আমরা জানি না, শুনি না কার নামে মামলা করবো। আমি বাবার একমাত্র ছেলে। আমার বয়স ২২/২৩ বছর বয়স। আমার পাশে দাঁড়ানোর মতো লোক নাই। আমি না জেনে শুনে কোনো ঝামেলার মধ্য যেতে চাই না। আমার শুধু মা আছে। মা নিয়ে শান্তিমতো কাজকাম করে খেতে চাই। আমি সবাইকে বলেছি যদি কোনো সময় মনে হয় বাবা কারও সঙ্গে গিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। তখন সবাইকে জানাবো।  

তিনি আরও বলেন, আমার দাদার বাড়ি কুষ্টিয়া সদর উপজেলার মিলপাড়া। বর্তমানে আমরা রাজবাড়ীর পাংশা থানার সর্দার বাসস্ট্যান্ডে এলাকায় বসবাস করি। আমার বাবা জেল থেকে বেরিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছিলেন। তিনি ঢাকার নবীনগরে ঝালমুড়ি বিক্রি করতেন। আমাদের খোঁজ-খবর নিতেন। গত মঙ্গলবার আমরা হঠাৎ করেই খবর পাই দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন বাবা। কোথায় কীভাবে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে বিষয়টি আমরা জানি না।  

শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সানারুল হক বলেন, মামলা বিষয়টি বেলকুচি থানা দেখবে। তারা বার্তা দিয়েছে ময়নাতদন্ত করে মরদেহ হস্তান্তরের জন্য। রোববার বিকেলে আমরা মরদেহ হস্তান্তর করেছি।  

বেলকুচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনিছুর রহমান জানান, আমাদের অনুসন্ধান চলছে। পরিবার মামলা করবে কিনা সেটা আমরা শিওর না। যদি তারা মামলা করতে না চায় পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. আরিফুর রহমান মণ্ডল বলেন, আজকে নিহতের দাফন হয়েছে। আমরা পরিবারের সঙ্গে সবসময় যোগাযোগ রাখছি। তাদের জন্য ওয়েট করছি। তারা বলছে আসবে। এ ঘটনায় অবশ্যই মামলা হবে। পরিবার না করলে পুলিশ বাদী হবে।  

প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) সিরাজগঞ্জ-৫ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী মমিন মণ্ডলের সমর্থক শ্রমিক লীগ নেতা বেলকুচি পৌর এলাকার সুবর্ণসাড়া গ্রামের মোতালেব সরকারের বাড়িতে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিকট শব্দে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়রা সেখানে জড়ো হলেও বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তবে বিস্ফোরণের কিছুক্ষণ পর কালো রঙের একটি মাইক্রোবাসে আহত অবস্থায় দুজনকে নিয়ে যেতে দেখেছেন স্থানীয়রা। ওইদিন দিন সাংবাদিক ও পুলিশকে প্রেশার কুকার বিস্ফোরণ হয়েছে বলে শ্রমিকলীগ নেতা মোতালেব জানান।  

ঘটনার তিনদিন পর শুক্রবার (২২ ডিসেম্বর) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ফজলু শেখের মারা যান। পরদিন শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) তার মৃত্যুর বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ ও সাংবাদিকরা অনুসন্ধান শুরু করে। প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন মহল থেকে দাবি করা হয় শ্রমিকলীগ নেতা মোতালেব সরকারের বাড়িতে বিস্ফোরণের ঘটনাতেই আহত হয়েই মারা গেছেন ফজলুল হক।  

তবে শ্রমিকলীগ নেতা মোতালেব সরকার সাংবাদিকদের বলেন, আমরা নৌকার ভোটের জন্য কাজ করছি। মঙ্গলবার দুপুরে বাড়িতে রান্নার সময় প্রেশার কুকারটি বিস্ফোরিত হয়। বোমা বিস্ফোরণে নিহত ফজলুকে তিনি চেনেন না বলে জানান।  

শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শাহ আলম বলেন, ঘটনার দিন ভিকটিমের মোবাইল ফোন লোকেশন বেলকুচিতেই দেখাচ্ছে। এ থেকে বোঝা যায় বিস্ফোরণের ঘটনা সেখানেই ঘটেছে।

আরও পড়ুন: নৌকা সমর্থকের বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণে আহত ব্যক্তির মৃত্যু

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০২৩
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।