ঢাকা: আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে চলছে নির্বাচনী প্রচারণা। এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি।
এবারের প্রচারণায় নেই আগের মতো উত্তাপ। তবে বিষয়টি মানতে নারাজ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
সাধারণ মানুষ বলছেন, আগের মতো নির্বাচনের প্রচারণার উত্তাপ নেই। শুধু প্রচারণা চোখে পড়ছে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর। তারাই (আওয়ামী লীগ) নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন।
বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ঢাকা-১৬ আসন ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
এবারে নির্বাচনে ঢাকা-১৬ আসনে সংসদ সদস্য প্রার্থী হচ্ছেন ছয়জন। এই আসনে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের চারটি ওয়ার্ডের (২, ৩, ৫ ও ৬ নম্বর) বাসিন্দারা ভোট দেবেন। আসনটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৮৮ হাজার ২৪৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৯৫ হাজার ৬৯২ জন, নারী ভোটার ১ লাখ ৯২ হাজার ৫৪৪ ও হিজড়া ভোটার ৯ জন।
ঢাকা-১৬ আসনের ৬ প্রার্থীরা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীক প্রার্থী ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা, জাতীয় পার্টির মনোনীত লাঙ্গল প্রতীক প্রার্থী আমানত হোসেন, ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট মনোনীত টেলিভিশন প্রতীক প্রার্থী সজীব কায়সার, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি মনোনীত একতারা পথিক প্রার্থী তৌহিদুল ইসলাম, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি মনোনীত আম প্রতীক প্রার্থী তরিকুল ইসলাম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সালাউদ্দিন রবিন।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ২, ৩, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি ওয়ার্ডেই আছে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীক প্রার্থীর একাধিক নির্বাচনী প্রচারণা ক্যাম্প।
দুই নম্বর ওয়ার্ড এলাকার কমিউনিটি সেন্টার সংলগ্ন রোডে আছে একটি অস্থায়ী প্রচারণা ক্যাম্প। মিরপুর ১২ নম্বর, সি ব্লক, ১২ নম্বর রোডে বসেছে আরও একটি ক্যাম্প। সেখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পোস্টার লাগিয়ে মাইক বাজিয়ে কর্মীদের প্রচারণা চালাতে দেখা যায়। এছাড়াও এই ওয়ার্ডের পল্লবী মহিলা ডিগ্রি কলেজ সংলগ্ন রোডে আরও একটি অস্থায়ী প্রচারণা ক্যাম্প দেখা যায়। দুই নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর মোট তিনটি অস্থায়ী প্রচারণা ক্যাম্প। এই ওয়ার্ডে অন্য কোনো প্রার্থীর নির্বাচনি প্রচারণা বা ক্যাম্পের দেখা মেলেনি। শুধু পল্লবী মহিলা ডিগ্রি কলেজ সংলগ্ন রোডের ২-৩ জায়গায় দেখা গেছে ২০-৩০ টা জাতীয় পার্টির লাঙ্গল মার্কার পোস্টার।
তিন নম্বর ওয়ার্ডেও আছে তিনটি অস্থায়ী প্রচারণা ক্যাম্প। অ্যাভিনিউ ফাইভ মিরপুর আইডিয়াল স্কুল সি-ব্লক, রোড-৩ এ একটি প্রচারণা ক্যাম্প, প্যারিস রোড সংলগ্ন মিরপুর উদয়ন স্কুল কেন্দ্রে একটি ও তিন নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের মূল অফিসে নির্বাচনী প্রচারণার ক্যাম্প বসানো হয়েছে।
পাঁচ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার লাল মাইট্টা টেম্পু স্ট্যান্ড এলাকায় দুইটি আওয়ামী লীগ প্রার্থীর অস্থায়ী প্রচারণা ক্যাম্প। এছাড়া কালশী ট্র্যাক স্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় একটি, বাউনিয়াবাদ ঈদগাহ মাঠের পূর্ব পাশে একটি, বাউনিয়াবাদ ডি-ব্লক মসজিদের পাশে একটি অস্থায়ী নির্বাচনী প্রচারণা ক্যাম্প ও খিচুড়ি পট্টি এলাকায় আছে আরও একটি ক্যাম্প।
পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডে দেখা মিলেছে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ছয়টি অস্থায়ী ক্যাম্প। এছাড়া এ ওয়ার্ডে অন্য কোনো প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণা ক্যাম্প দেখা যায়নি। তবে লাল মাইটা টেম্পু স্ট্যান্ডেয় লাঙ্গল প্রার্থীর পোস্টার দেখা গেছে আর খিচুড়ি পট্টি এলাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল মার্কার কিছু পোস্টার দেখা যায়।
৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ের সামনে বসেছে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর অস্থায়ী প্রচারণা ক্যাম্প। এই ওয়ার্ডেও প্রচারণা ক্যাম্প বসেছে প্রায় তিনটি। এছাড়াও ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে রিকশায় করে মাইক বাজিয়ে একাধিক স্থানে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জন্য ভোট চাইতে দেখা গেছে। এছাড়া এ ওয়ার্ডে অন্য কোনো প্রার্থীর অস্থায়ী নির্বাচনী প্রচারণার ক্যাম্প দেখা যায়নি। এছাড়া একটি-দুটি ক্যাম্প ছাড়া সবগুলো বসানো হয়েছে সড়ক ও ফুটপাতের জায়গা দখল করে। অথচ নির্বাচন কমিশনারের আচরণবিধি অনুযায়ী সিটি কর্পোরেশন এলাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে একটির বেশি ক্যাম্প স্থাপনার কোনো সুযোগ নেই।
দুই নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. কবির হোসেন বলেন, এবারের নির্বাচনে প্রচারণার তেমন উত্তাপই নেই। দেশের রাজনৈতিক বড় একটি দল বিএনপি অংশগ্রহণ করছে না বলে এমনটি হতে পারে। এ জন্য নির্বাচনের উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। নির্বাচনের মাঠে শুধু নৌকার প্রার্থীদেরই প্রচারণা করতে দেখা যাচ্ছে। এছাড়া আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নেতাকর্মীরা প্রতিনিয়তই নির্বাচনী আচরণবিধি ভাঙছেন। রাত ৮টার পরেও মাইকে জোরে জোরে গান বাজিয়ে তারা প্রচারণা চালাচ্ছেন। কিন্তু আচরণবিধি অনুযায়ী রাত ৮টার পরে মাইকে গান বাজানো তো নিষেধ। কে মানছে এই নিয়ম? এই বিষয়গুলো নজরদারিতে আনার কেউ নেই।
পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. ফরিদ বলেন, এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছাড়া কারো ক্যাম্প আমি দেখিনি। সত্যি কথা বলতে অন্য প্রার্থীরা নির্বাচনে টাকা খরচ করতে চাচ্ছেন না। নির্বাচনী ক্যাম্প তৈরির লোকও পাচ্ছে না। এ জন্যই হয়ত অন্য প্রার্থীদের অস্থায়ী নির্বাচনী প্রচারণা ক্যাম্প দেখা যাচ্ছে না।
পল্লবী থানা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানা ও পল্লবী থানা পাঁচ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান খলিলের সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের। তারা দুইজনই বলেন, এই আসনে প্রচারণা শুধুই আওয়ামী লীগের হচ্ছে। অন্য কোনো প্রার্থী তেমন প্রচারণা করছেনই না। আওয়ামী লীগ প্রার্থী ১৫ বছর ধরে এই আসনে সংসদ সদস্য। এই আসনে তার সমতুল্য অন্য কেউ হতে পারে না।
বাংলাদেশ সময়: ১১০১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০২৩
এমএমআই/এফআর