ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ জুলাই ২০২৪, ০১ মহররম ১৪৪৬

জাতীয়

আমার নয়, এটি জনগণের বিজয়: শেখ হাসিনা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৮, ২০২৪
আমার নয়, এটি জনগণের বিজয়: শেখ হাসিনা দেশি-বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী। ছবি: ফোকাস বাংলা

ঢাকা: ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ জয়কে জনগণের বিজয় বলে মন্তব্য করেছেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের দৃষ্টান্ত সৃষ্টি হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সোমবার (৮ জানুয়ারি) বিকেলে গণভবনে দেশি-বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানের সূচনা বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

৭ জানুয়ারির নির্বাচনে টানা চতুর্থবার জয়ের পর দেশি-বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনটা যে অবাধ, সুষ্ঠু হতে পারে সেই দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করতে পেরেছি।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এ বিজয়টা হচ্ছে জনগণের বিজয়। এ বিজয়টা আমার বিজয় না। আমি মনে করি জনগণের বিজয়। কারণ এখানে জনগণের যে অধিকার আছে, সরকার গঠন করার ক্ষমতা আছে তাদের হাতে; যেটা নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন সংগ্রাম করেছি, জনগণের ভোটের অধিকার, সেটা তারা নিজেরা প্রয়োগ করবে; সেটা সুষ্ঠুভাবে হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এবারের নির্বাচনটা আরেকটু ব্যতিক্রমী। সাধারণত আমরা দলকে প্রার্থী ঠিক করে দিই বা সব দল তাদের প্রার্থী নির্বাচন করে দেয়। এবার আমরা আমাদের প্রার্থী নির্বাচিত করেছি, পাশাপাশি এ নির্বাচনটা উন্মুক্ত করে দিয়েছি, যার যার ইচ্ছামত দাঁড়াতে পারে।

বিএনপি-জামায়াত জোটের নির্বাচন বর্জন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা দেখেছেন একটি দল হয়তো অংশগ্রহণ করেনি। কারণ তারা নির্বাচন করতে চায় না। সে দলগুলো মিলিটারি ডিক্টেটরের হাতে তৈরি হয়। ফলে তারা নিজেরা চলতে পারে না, নিজেদের জনসমর্থন থাকে না। সে জন্য নির্বাচনকে ভয় পায়।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমাদের দল হলো জনগণের দল, এবারের নির্বাচনে জনগণ যে ভোট দিয়েছে, নির্বাচিত করেছে এবং আমাদের অনেক স্বতন্ত্রও নির্বাচিত হয়েছে, অন্য দলগুলোরও বেশকিছু নির্বাচিত হয়েছে। এ দেশের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে এবং নির্বাচনকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য সব ব্যবস্থা নিয়েছি।

নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসা বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের ধন্যবাদ জানিয়ে টানা চতুর্থবার সরকার গঠন করতে যাওয়া শেখ হাসিনা বলেন, আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, আমাদের দেশটাকে দেখতে এসেছেন। আমি মনে করি আমাদের দেশের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য এটা অত্যন্ত যুগান্তকারী ঘটনা। আমি অনেকবারই নির্বাচন করেছি। সেই ১৯৮৬ সাল থেকে আটবারই আমার নির্বাচন করা হয়ে গেছে। তবে এত মানুষের আগ্রহ আগে দেখিনি।

তিনি বলেন, আপনারা যার যার দেশে ফিরে যাবেন, বাংলাদেশের কথা বলবেন। আপনাদের আগমন আমাদের গণতান্ত্রিক বিধি ব্যবস্থাকে আরও মজবুত করবে, শক্তিশালী করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

দেশের ইতিহাসে পঞ্চমবার প্রধানমন্ত্রী হতে যাওয়া শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সবসময় এ চেষ্টা ছিল, নির্বাচনটাকে সুষ্ঠু করা, মানুষের যে ভোটের অধিকার অর্থাৎ সে যাকে চায়, কে সরকারে থাকবে, সেটা মানুষই সিদ্ধান্ত নেবে, সে জন্য নির্বাচনের সিস্টেমকে সংস্কার করেছি।

সূচনা বক্তব্যের পর শেখ হাসিনা বেশ কয়েকজন বিদেশী সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের প্রশ্নের জবাব দেন।

প্রশ্নোত্তর পর্বে বিবিসির সাংবাদিক সামিরা হুসেইন শেখ হাসিনাকে বলেন, ২০১৮ সালের পর আপনি প্রধান বিরোধী দলকে সংলাপে অন্তর্ভুক্ত করেননি। তাদের অনুপস্থিতিতে রোববারের নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন। যেখানে ৬০ শতাংশ মানুষ ভোট দেয়নি। আপনার সরকার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সীমিত করেছে, মানবাধিকারকর্মীরা এমন সমালোচনা করছেন। আপনি কি এখনো বিশ্বাস করেন, কোনো বিরোধী দল ছাড়া বাংলাদেশে একটি গতিশীল গণতন্ত্র থাকবে?

বিবিসির সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নিজেদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আছে। যদি কোনো দল নির্বাচনে অংশ না নেয়, তার মানে এটা বোঝায় না যে, সেখানে গণতন্ত্র নেই। আপনাকে বিবেচনা করতে হবে জনগণ অংশ নিয়েছে কি, নেয়নি।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, দলটি (বিএনপি) নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। তারা চেষ্টা করেছে, বাধা দিয়েছে, জনগণ যাতে ভোট দিতে না যায়। কিন্তু জনগণ তাদের কথা শোনেনি। কারণ আমাদের জনগণ এখন তাদের অধিকার নিয়ে খুবই সচেতন, ভোটের অধিকার, ভাতের অধিকার।

শেখ হাসিনা বলেন, গণতন্ত্রের যদি আলাদা কোনো সংজ্ঞা থাকে, সেটা ভিন্ন কথা। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি এটা জনগণের অধিকার। যখন জনগণ অংশগ্রহণ করে, তারা তাদের সরকারের জন্য ভোট দেয়। সুতরাং জনগণের অংশগ্রহণই মূল বিষয়।

ভারতের টেলিগ্রাফের সাংবাদিক দেভাদ্বীপ পুরোহিত বলেন, আপনি যখন গণতন্ত্রের কথা বলছেন, তখন বাংলাদেশে আপনার বিরোধী দলেরও প্রয়োজন হবে। এ নিয়ে আপনি কী ভাবছেন?

জবাবে শেখ হাসিনা বলেন,  আপনি কি চান, আপনি কি বলছেন আমার উচিত একটি বিরোধী দল গঠন করা? আমি তা করতে পারি? আমি নিজেও বিরোধী দলে ছিলাম দীর্ঘ সময়। আমরা আমাদের দলকে সংগঠিত করেছি। সুতরাং বিরোধীদেরও তাদের নিজেদের দলকে সংগঠিত করতে হবে। তারা যদি তা করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তার জন্য কে দায়ী?

আওয়ামী লীগ সভাপতি আরও বলেন, আপনি যদি আমাকে বলেন বিরোধী দলের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে সংগঠিত করতে, যদি আপনি চান আমরা সেটা করতে পারি। কিন্তু সেটা সত্যিকারের বিরোধী দল হবে না।

গণভবনের সবুজ লনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে দেশ-বিদেশের শতাধিক সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষক উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে তিনি ঘুরে ঘুরে সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।  

রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ হয়। ৩০০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ভোট হয় ২৯৯টি আসনে। এক প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে নওগাঁ-২ আসনে ভোটগ্রহণ স্থগিত ছিল।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। ২৯৯টি আসনের মধ্যে সোমবার দুপুর পর্যন্ত ২৯৮টি আসনের বেসরকারি ফলাফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে ২২৩টি আসনে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের পর সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। ৬২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।
 
গত দুই মেয়াদে জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসা জাতীয় পার্টি শেষ পর্যন্ত ১১ আসনে জয় পেয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে জাসদ একটি, ওয়ার্কার্স পার্টি একটি এবং বিএনপির জোট থেকে বেরিয়ে আসা কল্যাণ পার্টি একটি আসনে জয় পেয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৮, ২০২৩
এমইউএম/এসকে/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।