ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নির্মাণ অসমাপ্ত রেখেই ২৪২ কোটি টাকার বাঁধ হস্তান্তর

এস.এস শোহান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০২৪
নির্মাণ অসমাপ্ত রেখেই ২৪২ কোটি টাকার বাঁধ হস্তান্তর

বাগেরহাট: বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৫/১ পোল্ডারের মোরেলগঞ্জ-শরণখোলায় ৬২ কিলোমিটার টেকসই বেরিবাঁধ নির্মাণ কাজ অসমাপ্ত রেখেই হস্তান্তর করা হয়েছে।  

নির্মাণ কাজ পুরোপুরি শেষ হওয়ার আগেই হস্তান্তর এবং বাঁধের একাধিক স্থানে ভাঙন ও ব্লক ধসে যাওয়ায় অসন্তোষ বিরাজ করছে স্থানীয়দের মধ্যে।

বাঁধ রক্ষায় বর্ষার আগেই নদীশাসন করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।  

ভাঙন ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো রক্ষা এবং নদীর তীর প্রতিরক্ষা কাজ বাস্তবায়নে একটি প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ও প্রকল্প কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সুপার সাইক্লোন সিডরের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালে মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা এলাকায় বাঁধ নির্মাণের জন্য উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্প (সিইআইপি) নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এ প্রকল্পের অধীনে ২৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৫/১ পোল্ডারের বলেশ্বর নদীর তীরে মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা উপজেলার বগী-গাবতলা পর্যন্ত ৬২ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ শুরু করে চায়না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান “দি ফার্স্ট ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যুরো হেনান ওয়াটার কনজারভেন্সি”।  

প্রতিষ্ঠানটি একই প্রকল্পের অধীনে ৩৫/৩ বাগেরহাট সদর ও রামপাল অংশে ১০২ কিলোমিটার টেকসই বাঁধ নির্মাণ করেছে। ৩৫/১ পোল্ডারের শরণখোলা উপজেলার বগী, গাবতলা, মোরেলগঞ্জের আমতলা, ফাসিয়াতলাসহ সাতটি স্থানে ভাঙন ও বাঁধের ব্লক ধসে বিলীন হয়েছে। এর মধ্যেই  কাজ শেষ না হতেই ২০২৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর নির্মাণাধীন বাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেন সিইআইপি প্রকল্পের কর্তা ব্যক্তিরা। তবে সাতটি স্থানের মধ্যে একটি স্থানে জরুরি ভিত্তিতে জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর কাজ শুরু করেছে বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড। বাঁধ হস্তান্তরের ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে দেখা দিয়েছে ভাঙন আতঙ্ক ও জমি-ঘর হারানোর ভয়। তাদের অভিযোগ, বাঁধ নির্মাণের সময় মাটির বদলে বালু দেওয়ায় ঝুঁকিতে পড়েছেন তারা।  

শরণখোলা উপজেলার উত্তর সাউথখালী গ্রামের হালিম শাহ বলেন, দুই পাশে মাটি দিয়ে মাঝখানে বালু দেওয়া হয়েছে যার কারণে বাঁধে ফাটল ও ধস শুরু হয়েছে। শুনেছি কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু এখনও তো তিন কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন রয়েছে।

শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের গাবতলা এলাকার বাসিন্দা জাকির হোসেন বলেন, বলেশ্বর নদীতে ভাঙনে ভিটা বাড়ি সব কিছু হারিয়েছি। ২০০৭ সালের সিডরে পরিবারের সদস্যদেরও হারিয়েছি। এরপরে আমাদের একমাত্র দাবি ছিল, টেকসই বেরিবাঁধ। কিন্তু বাঁধের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই নিম্নমানের এবং নদীশাসন না করার কারণে নতুন করে বাঁধের ব্লক ধসে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছি।  

সাউথখালী ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রিয়াদুল পঞ্চায়েত বলেন, সব কিছু ত্যাগের বিনিময়ে একটি টেকসই বেরিবাঁধের দাবি ছিল এলাকাবাসীর। কিন্তু বেরিবাঁধ হয়েছে ঠিকই, নদীশাসন না করার ফলে ভাঙন শুরু হওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। আগামী বৃষ্টি মৌসুমের আগে ভাঙন ঠেকানোর দাবি জানাচ্ছি।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক সাউথখালী এলাকার এক ব্যক্তি বলেন, কাজ নিয়ন্ত্রণ করেছেন চীনের লোকজন। যার কারণে আমরা কোনো খোঁজ খবর নিতে পারিনি। যেভাবে ইচ্ছা, সেভাবে কাজ করে গেছেন। এছাড়া নদীর মধ্য থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ঝুঁকিতে পড়েছে বাঁধ।

শরণখোলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রায়হান উদ্দিন শান্ত বলেন, বাঁধ নির্মাণ হওয়ায় মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছিল। কিন্তু নির্মাণ সম্পন্ন না করে কেন্দ্রীয়ভাবে হস্তান্তর ও বাঁধে ভাঙন শুরু হওয়ায় এলাকাবাসীর স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিআইপি প্রকল্পের দূরদর্শিতার অভাবে নদীশাসন না করেই বাঁধ নির্মাণের ফলে বাঁধটি হুমকির মধ্যে রয়েছে। খুব শিগগিরিই নদীশাসন করে বাঁধের অসম্পন্ন কাজ সম্পন্ন করার দাবি জানান এ জনপ্রতিনিধি।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি সূত্র জানায়, প্রকল্পটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে হলেও এটি নিয়ন্ত্রণ করা হতো কেন্দ্রীয়ভাবে। প্রকল্পের বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্থানীয় কার্যালয় পানি উন্নয়ন বোর্ড, বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তরকে কিছুই জানানো হয়নি। স্থানীয় দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় না করে কাজ করায় তারাও কাজের বিষয়ে কোনো খোঁজ নিতে পারেননি। ফলে কাজে কিছুটা সমস্যা রয়েছে।  

পানি উন্নয়ন বোর্ড, বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান মোহাম্মদ আল বিরুনী বলেন, প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ায় ২০২৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর ঢাকায় প্রকল্পটি হস্তান্তর করা হয়। ৩৫/১ ও ৩৫/৩ পোল্ডারের ১০২ কিলোমিটার বাঁধ হস্তান্তর করা হয় এদিন। পরে সরেজমিন পরিদর্শন করে ৩৫/১ পোল্ডারের সাতটি স্থানে দুই দশমিক ৬৮ কিলোমিটারে বাঁধ অতি ঝুঁকিপূর্ণ পাই। নদীর তীর প্রতিরক্ষা মূলক কাজ বাস্তবায়নের জন্য ২১ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে প্রধান কার্যালয়ে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবনাটি পাস হলে কাজ বাস্তবায়ন করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০২৪
এসআই


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।