ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ শিক্ষা কর্মকর্তা জাহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০২৪
দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ শিক্ষা কর্মকর্তা জাহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে 

সাতক্ষীরা: নিজের পদকে হাতিয়ার বানিয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসকে লুটপাটের আখড়া বানানোর অভিযোগ উঠেছে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জাহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে। সাতক্ষীরা সিটি কলেজে নিয়ম বহির্ভূতভাবে দিয়েছেন স্ত্রীর চাকরি।

একই স্টেশনে সাত বছর থাকার সুবাদে ১০ কোটি টাকা লুটপাট করারও অভিযোগ রয়েছে।  

তার দুর্ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে শিক্ষকরা একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হলেও এক অদৃশ্য খুঁটির জোরে তিনি বহাল-তবিয়তে গেড়ে আছেন সাতক্ষীরা সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে।

জানা গেছে, সাতক্ষীরা সিটি কলেজে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে অনিয়মের জেরে দুদকের মামলায় বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন সাবেক অধ্যক্ষ আবু সাইদসহ পাঁচজন শিক্ষক। নাশকতার একাধিক মামলায় জেলহাজতে যাওয়া আসামি জাহাঙ্গীর আলম ২০১৫ সালে দর্শন বিভাগে অনার্স শাখায় চতুর্থ শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। পরে রেজুলেশন জালিয়াতি করে তিনি ডিগ্রি স্তরে ২০১৭ সালে দ্বিতীয় শিক্ষক হিসেবে এমপিওভুক্ত হন। ২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত জাহাঙ্গীর আলমসহ ২১ জন অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও ৬৩ লাখ টাকার বিনিময়ে তাদের ফাইল ছাড় করান জাহিদুর রহমান। একই সময়ে প্রভাষক থেকে পদোন্নতি পাওয়া ১৫ জন সহকারী অধ্যাপকের কাছ থেকে তিনি ঘুষ নিয়েছিলেন সাড়ে সাত লাখ টাকা।

এমপিওভুক্তির পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর সাতক্ষীরা সিটি কলেজে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা শেষে ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে জাহাঙ্গীর আলমসহ ২১ জন শিক্ষকের এমপিও বিধিসম্মত নয় বলে উল্লেখ করে তাদের বেতন-ভাতা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এছাড়া ২০২১ সালে ১৫ জুন দুদকের নির্দেশে মাউশি, খুলনার আঞ্চলিক পরিচালক প্রফেসর হারুণ-অর-রশিদ সিটি কলেজের যে তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন, তাতে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান তার দুর্নীতির দায় এড়াতে পারেন না বলে স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন।

অর্থ আর ক্ষমতার জোরে অবৈধভাবে সাতক্ষীরা সিটি কলেজে গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগে প্রভাষক পদে চাকরি বাগিয়ে নেন জাহিদুর রহমানের স্ত্রী জেসমিন নাহার। ২০০৫ সালের ১৯ জানুয়ারি বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ আইন কার্যকর হওয়ার আগের দিন তড়িঘড়ি করে একই দিনে স্ত্রীর নিয়োগ বোর্ড গঠন ও যোগদান করার নজির স্থাপিত হয়েছে জাহিদুর রহমানের কলাকৌশলে। যেটি বিধিসম্মত নয় বলে শিক্ষা পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে।

সাতক্ষীরা সিটি কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক বিধান চন্দ্র দাশ জানান, আমাকে বঞ্চিত করে বিধি বহির্ভূতভাবে রুনা লায়লা নামের একজন শিক্ষককে নিয়োগ ও এমপিও বন্ধের জন্য ২০১৭ সালের ০৯ ফেব্রুয়ারি আমি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর আবেদন করি। তিনি আবেদনটি গ্রহণ না করে আমাকে রীতিমতো অপমান করেছিলেন।

সরকারি সেবা পেতে জাহিদুর রহমানকে পরতে পরতে দিতে হয় ঘুষ।

সরকারের দেওয়া বিনামূল্যের বই পেতে তাকে দিতে হয় স্কুল প্রতি চার থেকে পাঁচশ টাকা। সদর উপজেলার ১০২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠানো পাঠ্যপুস্তকের পরিবহন ব্যয় বাবদ সরকারি ৯৮ হাজার টাকা পকেটস্থ করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের সময় মাউশির প্রতিনিধি হিসেবে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা বাধ্যতামূলকভাবে তাকে ঘুষ দিতে হয়। এছাড়া নতুন এমপিওভুক্তিকরণে তাকে প্রতিজনের জন্য ঘুষ দিতে হয় ১০ হাজার টাকা। এছাড়া শিক্ষক-কর্মচারীদের অপমান করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগে সম্প্রতি যশোর শিক্ষা বোর্ড থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার হয়েছেন ধুলিহর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক রবিউল ইসলাম মন্টু। তিনি জানান, রিপোর্ট পক্ষে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য তার কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন জাহিদুর রহমান।

এসব অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জাহিদুর রহমান বলেন, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার সাবেক সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবি নির্বাচনে ফেল করায় একটা গ্রুপ আমাকে নিয়ে এসব কুৎসা রটাচ্ছেন।  

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, একই স্টেশনে সাত বছর থাকার নিয়ম নেই। সাতক্ষীরা সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়ালে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জাহিদুর রহমানের মত কর্মকর্তাদের দায় মাউশি নেবে না।

প্রসঙ্গত, মীর মোস্তাক আহমেদ রবি সাতক্ষীরা-২ আসনের সংসদ সদস্য থাকাকালে নিজের ভাই-বোন-পিএ-সিএ-ছাতাধরা ব্যক্তিদের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বানিয়ে ও সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জাহিদুর রহমানকে দিয়ে স্কুল-কলেজ-মাদরাসাগুলো নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।