লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চররমনী মোহন ইউনিয়নের মেঘনা নদীর বুকে জেগে ওঠা বিভিন্ন চরে সবজির আবাদ করেছে কৃষকেরা। বাণিজ্যিকভাবে সবজি চাষ করে লাভের মুখ দেখছেন তারা।
চরের ফসলি মাঠ থেকে প্রতিদিন গড়ে কয়েকশ টন সবজি সংগ্রহ করা হয়। যা বেপারীদের হাত ধরে জেলাসহ বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। তবে চাষাবাদে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে চাষিদের। দুর্গম চর থেকে পরিবহন এবং বাজারজাতে নানামুখী সমস্যার মধ্যে পড়তে হয় তাদের।
জানা গেছে, এক সময়ের পরিত্যক্ত চরগুলো কৃষি জমিতে পরিণত করে নিয়েছে কৃষকেরা। শুরুতে ধান এবং সয়াবিনের চাষাবাদ করলেও গত চার থেকে পাঁচ বছরের ধরে ওইসব জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজির আবাদ করে আসছেন কৃষকেরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চরের সেই অনাবাদি জমিতে এখন নানা জাতের সবজির সমারোহ ঘটেছে। বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপক পরিসরে চাষিরা চিচিঙ্গা, তরী, করলা, কুমড়া, শসাসহ নানা জাতের সবজির আবাদ করেছেন। বিস্তীর্ণ চর জুড়ে শুধু সবজির মাচা লক্ষ্য করা গেছে।
বিচ্ছিন্ন চরের সবজি চাষিরা মূল ভূখণ্ড মজুচৌধুরীর হাটের প্রায় তিন কিলোমিটার পশ্চিমে বিচ্ছিন্ন মেঘার চরে। ওই চরে প্রায় শতাধিক কৃষক ৫০০ একর জমিতে সবজির চাষাবাদ করেছেন বলে জানা গেছে।
কৃষকরা করে অভিযোগ বলেন, দুর্গম চরের বুকে সবজির হাসি ফুটলেও কৃষি বিভাগের কোনো নজরদারি বা সহযোগিতা নেই। আর কৃষি বিভাগের কাছেও চরের চাষাবাদে কোনো তথ্য নেই। প্রতিবন্ধকতা দূর করা এবং কৃষি বিভাগের নজরদারি হলে চরে সবজির বিপ্লব ঘটানো সম্ভব হবে।
সবজি চাষি জসিম বাংলানিউজকে বলেন, আগে অন্য পেশায় ছিলাম। গত তিন থেকে চার বছর ধরে আমি বাণিজ্যিকভাবে আট একর জমিতে সবজির আবাদ শুরু করেছি। শুরুতে জমির পরিমাণ কম ছিল, তবে চাষাবাদে সফলতা আসায় এবার জমির পরিমাণ বাড়িয়েছি।
তিনি আরও বলেন, চরের কৃষকেরা করলা, চিচিঙ্গা, বরবটি, শসা ও কুমড়াসহ নানা জাতের উচ্চ ফলনশীল সবজির আবাদ করেন। প্রতি একরে উৎপাদন খরচ পড়ে তিন লাখ টাকার মতো। সবজির আবাদ করতে হলে বাঁশ ও জাল দিয়ে মাচা তৈরি করতে হয়। এগুলোর আগে দাম কম ছিল, এখন দাম বেড়েছে। এছাড়া মাঠ থেকে মজুচৌধুরীর হাট ঘাটে ট্রলারে করে সবজি নিয়ে আসতে চাষিদের অতিরিক্ত খরচ পড়ে।
চরের কৃষক সাদ্দাম বলেন, আমাদের আড়াই কানি জমিতে চিচিঙ্গার আবাদ হয়েছে। খরচ হয়েছে প্রায় নয় লাখ টাকা। আমরা প্রতি মণ চিচিঙ্গার দাম পাই ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা। কিন্তু বাজারেই প্রতি কেজি চিচিঙ্গা বিক্রি হয় ৫০ টাকা। বেপারীরা হাতবদল করে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করে। কিন্তু আমরা দাম পাই না।
ক্ষোভ প্রকাশ করে কৃষক জসিম ও সাদ্দম বলেন, কৃষি বিভাগ থেকে আমাদের চরের কৃষকদের কোনো খবর রাখে না। আমরা কোনো সহযোগিতা বা পরামর্শ পাই না। সবজি বাজারজাত সংকট দূর করাসহ কৃষি বিভাগ আমাদের দিকে নজর দিলে সবজির বিপ্লব ঘটানো যাবে।
কৃষক মজিবুল হক বলেন, চার বছর আগে থেকে চরের জমি মালিকদের কাছ থেকে লিজ নিয়ে চাষাবাদ শুরু করেছি। আগে ধান চাষ করতাম। কিন্তু চরের জমিতে তেমন একটা ধান হতো না। গত দুই বছর ধরে ধানের চাষ বাদ দিয়ে সবজির আবাদ শুরু করেছি। এ মৌসুমে বাণিজ্যিকভাবে শসা ও চিচিঙ্গার আবাদ করেছি। শসা শেষ হয়েছে। কয়দিন পর চিচিঙ্গাও বাজারে তুলতে পারব।
তিনি জানান, খেতেই সবজি বিক্রি করতে পারলে আমরা আরও লাভবান হতাম। কিন্তু সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় বেপারীরা খেতে আসে না। মজুচৌধুরীর হাটেই তাদেরকে সবজি দিয়ে আসতে হয়। এতে আমাদের খরচ বেশি পড়ে। শশার দাম বাজারে বেশি হলেও আমরা দাম পেয়েছি মণ প্রতি ৪০০ থেকে ৯০০ টাকা।
চররমনী মোহন ইউনিয়নের মধ্য চররমনী মোহন ব্লকের দায়িত্বরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. রাকিবুল ইসলাম বলেন, বিচ্ছিন্ন চরে কৃষকরা সবজির আবাদ করলেও ওই এলাকা কৃষিতে ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সেগুলোর হিসেব আমাদের কাছে নেই।
তিনি জানান, কৃষি বিভাগের হিসেব অনুযায়ী চরে এক হেক্টর জমিতে শসা, এক হেক্টর জমিতে চিচিঙ্গা, পাঁচ হেক্টর জমিতে সয়াবিন ও দুই হেক্টর জমিতে মরিচের আবাদ হয়েছে। যদিও সরেজমিনে গিয়ে প্রতিটি কৃষককে অন্তত আট থেকে ১০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করতে দেখা গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০২৪
এসএম