ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

শাহজালালে শত কোটি টাকার কোকেনসহ আফ্রিকান নারী গ্রেপ্তার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০২৪
শাহজালালে শত কোটি টাকার কোকেনসহ আফ্রিকান নারী গ্রেপ্তার

ঢাকা: দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সলিড কোকেনের চালান জব্দ করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। আফ্রিকার দেশ মালাউইয়ের এক নারী চালানটি বাংলাদেশে আনেন।

জব্দ করা ৮ কেজি ৩০০ গ্রাম কোকেনের আনুমানিক দাম ১০০ কোটি টাকা।

বুধবার (২৪ জানুয়ারি) রাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মালাউইয়ের নাগরিক নোমথেনডাজো তাওয়েরা সোকোকে (৩৫) কোকেনের এ চালানসহ গ্রেপ্তার করা হয়।

ডিএনসি জানায়, কোকেনের এই চালানটি আফ্রিকার দেশ মালাউই অথবা ইথিওপিয়া থেকে বাংলাদেশে এসেছে। বাংলাদেশকে ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিলো চালানটি পাচার করার জন্য। কারণ এই পরিমাণ কোকেনের চাহিদা বাংলাদেশে নেই।

বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ডিএনসির উত্তর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন) তানভীর মমতাজ।  

তিনি বলেন, কোকেনের একটি বড় চালান আফ্রিকান নাগরিকের মাধ্যমে ঢাকায় আসবে এমন তথ্য পাই আমরা। এর পর থেকে আমরা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নজরদারি বাড়াই। বুধবার (২৪ জানুয়ারি) এপিবিএনকে সঙ্গে নিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি টিম হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৮ নম্বর টার্মিনালের বোর্ডিং ব্রিজ এলাকায় অবস্থান করে।  ফ্লাইটটিতে আসা বিদেশি যাত্রীদের আমরা ফলো করি।

এর মধ্যে দেখা যায়, নোমথেনডাজো তাওয়েরা সোকো নামে এক বিদেশি নারী বিমানবন্দরের নিচতলায় ভিসা অন অ্যারাইভাল ডেস্কে দীর্ঘক্ষণ ধরে অবস্থান করছেন। তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে সন্দেহজনক হওয়ায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেন লাগেজে অবৈধ মাদকদ্রব্য কোকেন আছে। পরে লাগেজের ভেতরে বিশেষভাবে রক্ষিত আট কেজি ৩০০ গ্রাম কোকেন জব্দ করা হয়।

তিনি আরও বলেন, নোমথেনডাজো তাওয়েরা সোকো আফ্রিকান দেশ মালাউইয়ের নাগরিক। তিনি প্রথমে মালাউই থেকে ইথিওপিয়া যান। পরে তিনি ইথিওপিয়া থেকে যান দোহা।  দোহা থেকে কাতার এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে বাংলাদেশে আসেন। আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি তার বাংলাদেশ থেকে আবারও মালাউইতে যাওয়ার কথা ছিল।

কোকেনের এ চালান পাচারের জন্য বাংলাদেশকে ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করছিল চক্রটি। এ চালান অন্য কোনো দেশে চলে যেতো। আমাদের ধারণা তাওয়েরা সোকো কোকেনের এ চালানটি মালাউই অথবা ইথিওপিয়া থেকে সংগ্রহ করেছেন।

জিজ্ঞাসাবাদে সোকো জানান, ২০২৩ সালে তিনি বাংলাদেশে একবার এসেছিলেন গার্মেন্টস ব্যবসার কথা বলে। এবারও তিনি বাংলাদেশের একটি গার্মেন্টসের আমন্ত্রণপত্র নিয়ে আসেন। অন অ্যারাইভাল ভিসা নেওয়ার জন্য তিনি নিজের পরিচয় লুকিয়ে গার্মেন্টস ব্যবসার নাম করে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছিলেন।

সোকো মালাউইতে পেশায় একজন নার্স। তিনি মূলত কোকেনের এ চালানের বহনকারী।  আরেক বিদেশি নাগরিকের কাছে এ চালান পৌঁছে দিয়ে তার নিজ দেশে চলে যাওয়ার কথা ছিল।

বাংলাদেশে সোকো কার কাছে কোকেনের চালান হস্তান্তর করতেন, তার বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএনসির এ কর্মকর্তা বলেন, আমরা এ বিষয়ে তদন্ত করছি। তবে বাংলাদেশে অবস্থারত কয়েকজন বিদেশি নাগরিকের কাছে এ কোকেন যাওয়ার কথা ছিল। আমরা এক বিদেশিকে সন্দেহ করছি। তদন্তের স্বার্থে এ বিষয়ে বেশি কিছু বলতে চাচ্ছি না, আমরা আশা করি চক্রটিকে ধরতে পারব।  

২০২৩ সালে সোকো বাংলাদেশে কোকেনের চালান নিয়ে এসেছিলেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, তখনো তিনি গার্মেন্টস ব্যবসার নাম করে এসেছিলেন। তিনি আসলে কীসের জন্য এসেছিলেন সেই বিষয়ে আমরা তদন্ত করে দেখব।  

কোকেনের এ আন্তর্জাতিক চক্রের সঙ্গে বাংলাদেশের কেউ জড়িত আছেন কি না- জানতে চাইলে ডিএনসির এ কর্মকর্তা বলেন, কোকেনের চালানের সঙ্গে দেশি এবং বিদেশি চক্র জড়িত আছে। এ চক্রটিকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি।

কোকেনের চালানটি বাংলাদেশ থেকে কোন দেশে যাওয়ার কথা ছিল- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলো আমরা আমাদের তদন্ত শেষে বলতে পারব। তবে এটা বলতে চাই, কোকেনের চালানটি বাংলাদেশের জন্য ছিল না। কারণ বাংলাদেশে এ পরিমাণ কোকেন কনজিউম করার মার্কেট নেই। এ কোকেনের আনুমানিক বাজার দর ১০০ কোটির ওপরে। দেশের ইতিহাসে সলিড কোকেনের এটিই সর্ববৃহৎ চালান।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০২৪
পিএম/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।