ঢাকা: নাইজেরিয়ান নাগরিক ডন ফ্রাঙ্কি ওরফে জ্যাকব ফ্রাঙ্কি; মাদক চোরাচালান চক্রের কাছে তিনি পরিচিত বিগ বস নামে। তিনি আবার করতেন বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের বিভিন্ন পণ্যের ব্যবসা।
এই বিগ বস মূলত একজন মাদক কারবারি। তৈরি পোশাক শিল্পের বিভিন্ন পণ্যের ব্যবসার আড়ালে করতেন এ অপকর্ম। ঢাকায় বসেই তিনি নিয়ন্ত্রণ করতেন আন্তর্জাতিক মাদক রুট।
পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন বিগ বস। গ্রেপ্তার হয়েছেন আরও কজন। গত ২৪ জানুয়ারি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) কর্তৃক শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন থেকে ৮ কেজি ৩০০ গ্রাম কোকেনসহ মালাউইয়ের এক নাগরিককে গ্রেপ্তার হন। গত ২৫ জানুয়ারি রাতে ২০০ গ্রাম কোকেনসহ তানজানিয়ার আরেক নাগরিক গ্রেপ্তার হন।
বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বাধিক কোকেন উদ্ধারের এ ঘটনার পর জড়িতদের ধরতে অভিযানে নামে ডিএনসি। তারপরই আঁধারে থাকা ডন ফ্রাঙ্কি ওরফে জ্যাকব ফ্রাঙ্কির ওরফে বিগ বসের সূত্র মেলে।
জানা গেছে, ডিএনসির ধারাবাহিক অভিযানে দুই বাংলাদেশিসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন- সাইফুল ইসলাম রনি, আসাদুজ্জামান আপেল, ক্যামেরুনের নাগরিক কেলভিন ইয়েং, নাইজেরিয়ান নাগরি ননসো ইজিমা পেটার ওরফে অস্কার ও নুডেল ইবুকা স্টানলি ওরফে পডস্কি। গ্রেপ্তারের এ ঘটনার পরই মূলত বেরিয়ে আসে দেশে গার্মেন্টস ব্যবসার আড়ালে এক নাইজেরিয়ানের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালান চক্রের তথ্য।
রোববার (২৮ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় ডিএনসির উত্তরা কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির মহাপরিচালক মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী।
তিনি বলেন, মালাউই ও তানজানিয়ার দুই নাগরিককে গ্রেপ্তারের পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ, ডিজিটাল ডিভাইস ও সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে কোকেন চোরাচালান চক্রের অন্যান্য সদস্যসহ মূল হোতা নাইজেরিয়ান নাগরিক ডন ফ্রাঙ্কির সন্ধান পাওয়া যায়। গার্মেন্টস ব্যবসার আড়ালে তিনি আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালানের নিয়ন্ত্রণ করতেন। চক্রের সদস্যদের কাছে তিনি ‘বিগ বস’ নামে পরিচিত।
ফ্রাঙ্কি বাংলাদেশ-নাইজেরিয়ান কমিউনিটির প্রেসিডেন্ট। গত ৯ বছর ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করা ফ্রাঙ্কি ৯ মাস আগে বাংলাদেশ ছেড়ে নিজ দেশে পাড়ি জমিয়েছেন।
মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী বলেন, বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে রাজধানীর ভাটারা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ক্যামেরুনের নাগরিক কেলভিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। কেলভিন গত ২০ জানুয়ারি আরেক বিদেশি নাগরিক মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে বাংলাদেশে ঢোকেন। কেলভিন মাদক চক্রের অন্যতম সদস্য। তিনি বাংলাদেশে বসে মাদকের দেশি-বিদেশি সদস্যদের সমন্বয় করতেন। গত ২৪ তারিখ কোকেনসহ মালাউইর নাগরিক গ্রেপ্তারের খবরে দেশ ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন কেলভিন। এর মধ্যেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মাদক চক্রের মূল হোতা ডন ফ্রাঙ্কির বাংলাদেশি সহযোগী রনি। তিনি এই সিন্ডিকেটের বাংলাদেশি সমন্বয়কারী। তিনিও গার্মেন্টস শিল্পের বিভিন্ন ব্যবসার আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে মাদক চোরাচালান করতেন। তার কাজ ছিল মাদক বহনকারীদের দেশে প্রবেশের প্রয়োজনীয় ইনভাইটেশন, হোটেল বুকিং ও ভিসা পাওয়ার কার্যক্রমে সহযোগিতা করা।
ম্যাসপেক্স লিমিটেড নামে কথিত একটি প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে এই আমন্ত্রণ পত্র ইস্যু করা হতো। রনির মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ ও অন্যান্য প্রযুক্তির ডিভাইস বিশ্লেষণ করে একাধিক ভূয়া ইনভাইটেশন লেটার পাঠানো ও চক্রের মূলহোতা ফ্রাঙ্কির সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়া ফ্রাঙ্কির অফিসে অভিযান চালিয়ে কোকেন চোরাচালান সিন্ডিকেটের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং কোকেন পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন ল্যাগেজ পাওয়া গেছে।
সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও বাড়ির মালিকদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ফ্রাঙ্কি ৯ মাস আগে বাংলাদেশ ত্যাগ করেছে। তার অবর্তমানে ফ্রাঙ্কির ভাই উইসলি ও তাদের ম্যানেজার আসাদুজ্জামান আপেল ওই বাসায় থেকে ব্যবসা দেখাশোনা করতেন। কোকেন চালান আটকের সংবাদ পেয়ে আপেল আত্মগোপনে যান, পরবর্তীতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আর উইসলি কয়েকদিন আগে বাংলাদেশ ছেড়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদে আপেল ডিএনসিকে জানিয়েছে, বাংলাদেশে কোকেনের চালান প্রবেশের পরে পুনঃপ্যাকেজিং, নিরাপত্তা নিশ্চিতে সহায়তার দায়িত্ব ছিল তার। তার ডিজিটাল ডিভাইস বিশ্লেষণ করে এ সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া গেছে। আর আপেলের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ভাটারা এলাকায় অভিযান চালিয়ে অস্কার ও পডস্কিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে ডিএনসি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০২৪
পিএম/এমজে