ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তে গোলযোগ, এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে সতর্কাবস্থা

কৌশিক দাশ, বান্দরবান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৪
ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তে গোলযোগ, এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে সতর্কাবস্থা

বান্দরবান: নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখার ওপারে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গত কয়েকদিন ধরেই ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে। দেশটির অভ্যন্তরীণ সংঘাতে সৃষ্ট গোলাগুলির কারণে বাংলাদেশের সীমান্তও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

ওপার থেকে গুলি, আরপিজি, মর্টারশেল এসে পড়ছে দেশের অভ্যন্তরে।

বোমার বিকট আওয়াজ ও অস্ত্রের বিশেষাংশ বাংলাদেশে এসে পড়ায় সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর জনগণ ভীত, উদ্বিগ্ন। এ অবস্থায় ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্ত এলাকার শিক্ষা কার্যক্রম বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এসএসসি পরীক্ষা নিয়েও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন।

জানা গেছে, নিরাপত্তার কারণে রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু ও ঘুমধুম ইউনিয়নের পাঁচটি প্রাথমিক বিদ্যালয় জরুরি ভিত্তিতে বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন।

বন্ধ বিদ্যালয়গুলো হলো- ভাজাবনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাইশফাঁড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম কুল তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দক্ষিণ ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তা ছাড়া মিয়ানমারের সংঘাতের কারণে সীমান্ত জুড়ে ভীতিকর পরিস্থিতি বেড়ে চলেছে।

বান্দরবান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্য অনুযায়ী, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় মোট ৫৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটির শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুল মান্নান বাংলানিউজকে বলেন, নিরাপত্তার কারণে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে নাইক্ষ্যংছড়ির পাঁচটি প্রাথমিক বিদ্যালয় আপাতত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে প্রতিষ্ঠানগুলোয় ফের পাঠদান কার্যক্রম শুরু হবে। আমরা সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে সার্বক্ষণিক জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।

এদিকে সীমান্তে গোলযোগপূর্ণ সময়ের মধ্যেই নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ে আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার একটি কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে। ওই কেন্দ্রে পরীক্ষা গ্রহণের সব প্রস্তুতিও নিয়ে ফেলেছে প্রশাসন।

জেলা প্রশাসনের জানিয়েছে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি সারা দেশের মতো বান্দরবানেও এসএসসি পরীক্ষা শুরু হবে। এবারের পরীক্ষায় বান্দরবানের সাত উপজেলায় ১৫টি কেন্দ্র রয়েছে। মোট পরীক্ষার্থী ৫ হাজার ২২৫ জন। নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্তবর্তী এলাকা ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ে মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৫০০।

বর্তমান পরিস্থিতিতে এসএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. রাশেদের কাছে। সে জানায়, তাদের বাড়ি ও স্কুল সীমান্ত এলাকার একেবারে কাছে। গত কয়েকদিন মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গোলাগুলি, গোলার আওয়াজ আসা, গুলি, আরপিজি, মর্টারশেল এসে পড়ায় গ্রামে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। এতে তার ও তার মতো আরও বহু পরীক্ষার্থীর পড়াশোনা বিঘ্ন ঘটছে। চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছে তারা।

ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের কেন্দ্র সচিব ও প্রধান শিক্ষক খাইরুল বশর বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে কখন কি হয়, তা নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায়। এর মধ্যে পরীক্ষা এসে পড়েছে। সবার মনেই নতুন নতুন আতঙ্ক। তারপরও প্রাথমিকভাবে আমরা ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনা রেখেছি। পরিস্থিতি আবারোও উত্তপ্ত হয়ে উঠলে আমরা কেন্দ্র পরিবর্তন করব।

বান্দরবান জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (মাধ্যমিক) মুহাম্মদ ফরিদুল আলম হোসাইনী বাংলানিউজকে বলেন, সীমান্তে গোলাগুলি বেড়ে যাওয়ায় পরপরই আমরা সর্তক অবস্থান নিয়েছি। আমাদের শ্রেণি কার্যক্রম চলমান। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি এসএসসি পরীক্ষার জন্য সার্বিক ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেলে ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের পরীক্ষা কেন্দ্র পরিবর্তন করে অন্য কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ায় সার্বিক প্রস্তুতিও প্রশাসনের রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সীমান্ত এলাকায় আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের বাসায় গিয়ে তাদের লেখাপড়ার খবরাখবর নিচ্ছি। তাদের শিক্ষার উন্নয়নে সার্বিক সহযোগিতাও বিদ্যমান।

বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু ও ঘুমধুম সীমান্তের বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বর্ডার গার্ডের (বিজিবি) টহল আরও জোরদার করা হয়েছে। শিক্ষা কার্যক্রম যাতে বিনষ্ট না হয় সেজন্য শিক্ষা কর্মকর্তাদের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নে মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে দুজন নিহত হয়েছেন। নিহত দুজনের মধ্যে একজন বাংলাদেশি নারী, অন্যজন রোহিঙ্গা পুরুষ। গত ৫ ফেব্রুয়ারি বিকেল পৌনে তিনটার দিকে ঘুমধুম ইউনিয়নের জলপাইতলী গ্রামের একটি রান্নাঘরের ওপর মর্টার শেলটি এসে পড়ে।

এর আগে গত রোববার রাত থেকে সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর ঢেঁকিবনিয়া থেকে তীব্র গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। রাখাইন রাজ্যের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) বিজিপির ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরে হামলা চালালে লড়াই শুরু হয়। লড়াইয়ে দুই পক্ষই মর্টার শেল, রকেট লঞ্চার, মেশিনগানসহ ভারী অস্ত্র ব্যবহার করছে। তার আগে গত ২৯ ও ৩১ জানুয়ারি ঘুমধুম সীমান্তের ওপার থেকে গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। সে সময় মর্টার শেল ও গোলার অন্তত চারটি অংশ তুমব্রু, কোনারপাড়া ও পশ্চিম ঘুমধুমে এসে পড়ে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৪
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।