ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

নড়াইলের পুঁটি মাছের শুঁটকি যাচ্ছে বিদেশে

এমএম ওমর ফারুক, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৪
নড়াইলের পুঁটি মাছের শুঁটকি যাচ্ছে বিদেশে

নড়াইল: জেলার কালিয়া উপজেলার হাড়িয়ারঘোপ গ্রামের সনজিত হাজরা প্রায় ৪০ বছর ধরে মাছ কেনাবেচা করে সংসার চালাচ্ছেন।  

পাশাপাশি গত আট বছর ধরে তিনি দেশি পুঁটি মাছের শুঁটকি বানিয়ে বিক্রি করছেন।

বর্তমানে তার পুঁটির শুঁটকি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে যাচ্ছে বিদেশে।

বিল প্রধান নড়াইলে ছোট-বড় সব মিলিয়ে প্রায় ৫৭টি বিল রয়েছে। এসব বিলে বছরের চার মাস পুঁটিসহ বিভিন্ন জাতের প্রচুর ছোট মাছ ধরা পড়ে। সংগৃহীত পুঁটি মাছ কয়েক দফা শুকিয়ে বস্তায় ভর্তি করে পাঠানো হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। সেখান থেকে বড় সাইজের পুঁটি মাছ প্রক্রিয়াজাত করে পানি ও তেল মিশ্রিত চ্যাপা শুঁটকি তৈরি হচ্ছে। দেশের বাজার ছাড়িয়ে এখন তা যাচ্ছে ভারতের বিভিন্ন স্থানে। আর ছোট সাইজেরগুলো যায় মাছের খাবার তৈরির কারখানায়।

এসব কাজে যুক্ত হয়েছেন নড়াইলের কয়েকশ জেলে ও ব্যবসায়ী। এজন্য শলুয়া, মাইজপাড়া, শিংগাসোলপুর, মির্জাপুর বিল এলাকায় চলছে দেশি মাছের শুঁটকি তৈরি।

জেলায় প্রতি বছর প্রায় দেড় থেকে দুই কোটি টাকার শুঁটকি মাছ কেনাবেচা হচ্ছে। প্রতি মণ শুঁটকি মাছ বর্তমানে সাত হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।  

জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলার মাইজপাড়া এবং শিংগাসোলপুর এ দুটি ইউনিয়নে মোট ছয়টি মাছের খোলা (মাছ শুকানোর লম্বা মাচা) রয়েছে। এখান থেকে মৌসুমে প্রায় আড়াই হাজার মণ শুঁটকি মাছ উৎপাদন হয়। পাইকারি ক্রেতারা আসেন ফারিদপুর, গোপালগঞ্জ, বরিশাল, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন জেলা থেকে। পরে শুঁটকি মাছ ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লার দাউদকান্দি হয়ে ভারতের ত্রিপুরা ও অন্য রাজ্যে চলে যায়।

এ দুই ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, সদর উপজেলার মির্জাপুর এলাকায় দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের মাঠের এক পাশে ১১টি বিশাল মাচা তৈরি করে রোদে পুঁটি মাছ শুকানো হচ্ছে। চারজন শ্রমিক মাছ শুকাতে ব্যস্ত। গ্রামের বিভিন্ন বাজার থেকে পুঁটি মাছ কিনে এনে রোদে শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করা হচ্ছে।

এ খোলার মালিক সদর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের ভীম বিশ্বাস। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, মাছের শুঁটকি তৈরিতে কোনো ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় না। যে কারণে বর্তমানে জেলার গন্ডি পেরিয়ে দেশের অন্যান্য জেলায় ও ভারতে যাচ্ছে আমার শুঁটকি। মৌসুমে প্রায় ১৫০ মণ শুঁটকি মাছ উৎপাদন হয় এখানে।

সনজিত হাজরার শোলপুর গ্রামের খোলায় গিয়ে দেখা যায়, আটটি মাচার পাঁচটিতে পুঁটি মাছ শুকানো হচ্ছে। বাকি তিনটি খালি। তার ছেলে সমর হাজরা ও একজন শ্রমিক কাজ করছেন সেখানে। সমর হাজরা বাংলানিউজকে বলেন, এ বছর বিলে মাছ কম থাকায় সবগুলো মাচায় মাছ তোলা যায়নি। আকার ভেদে প্রতি মণ পুঁটি মাছ দুই থেকে তিন হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে। বেশি দামে মাছ কেনার কারণে এ বছর লাভ কম হচ্ছে। এক মৌসুমে প্রায় ৮০ থেকে ১০০ মণ শুঁটকি উৎপাদন হয় এখান থেকে।

এ বিষয় জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এইচ. এম. বদরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, শুঁটকির ব্যবসা বাড়াতে জেলা মৎস্য অধিদফতর সব ধরনের সহযোগিতা করছে, ভবিষ্যতেও করবে। সব কিছু মিলিয়ে নড়াইল শস্য ও মৎস্য ভাণ্ডার নামে খ্যাত। এ অঞ্চলের ফসলাদি ও মাছ সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সংরক্ষণ করতে পারলে দেশের অর্থনীতি ব্যাপক উন্নতি লাভ করবে বলে আশা করি।

বাংলাদেশ সময়: ১২১৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৪
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।