ঢাকা: মুক্তিপণের জন্য ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থেকে মাদরাসা ছাত্র মো. তাওহীদ ইসলামকে (১০) অপহরণ করেন প্রতিবেশী রাজমিস্ত্রি মকবুল হোসেন। ভুক্তভোগীর পরিবারের কাছ থেকে অর্থও আদায় করেন তিনি।
গত শনিবারের এ ঘটনার পর রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) মুক্তিপণের অর্থ সহ মকবুলকে রাজধানীর শ্যামপুর থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব-১০)।
সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার বাহিনীর মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, মকবুল পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। তাওহীদের পরিবার ও তিনি একই এলাকায় বসবাস করতেন। কিছুদিন আগে তাওহীদের বাসায় রাজমিস্ত্রির কাজ করার সুবাদে তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে মকবুলের। তাওহীদের বাবা সৌদি প্রবাসী। এটি জানার পর অর্থের লোভ হয় মকবুলের। মুক্তিপণের আশায় তাওহীদকে অপহরণের চেষ্টা করতে থাকেন মকবুল। বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে ছয় মাসের চেষ্টায় নিজের আকাঙ্ক্ষা পূরণও করেন তিনি। পরবর্তীতে অপহরণ, মুক্তিপণ আদায় শেষে তাওহীদকে হত্যা করেন মকবুল।
তিনি বলেন, গত শনিবার রাতে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের আব্দুল্লাহপুর এলাকার রসুলপুর জামি’আ ইসলামিয়া মাদরাসা ও এতিমখানায় নাজেরা বিভাগে ছাত্র তাওহীদ নিখোঁজ হয়। পরিবার তাকে বহু খোঁজাখুঁজি করেও পাচ্ছিল না। এর মধ্যেই তাওহীদের বাসায় পড়ে থাকা একটি মোবাইলে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি কল করেন। জানান, তাওহীদকে অপহরণ করা হয়েছে। মুক্তিপণ হিসেবে তিন লাখ টাকা দিতে হবে। উল্লেখ্য, ফোনটি তাওহীদের বাসায় মকবুলই রেখে যান।
এ ঘটনায় তাওহীদের মা বাদী হয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। র্যাবের কাছেও অভিযোগ করেন তিনি।
এসব ঘটনার মধ্যই মকবুলকে চিনে ফেলে অপহৃত তাওহীদ। নিজেকে রক্ষায় মকবুল তার শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন এবং মরদেহ একটি সেপটিক ট্যাংকে ফেলে রাখেন। পরবর্তীতে তাওহীদের পরিবারের কাছ থেকে তিন লাখ টাকা আদায়ও করেন মকবুল।
মঈন বলেন, মামলা ও অভিযোগ আমলে নিয়ে গতকাল রাতে র্যাব-১০ এর একটি দল মকবুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে। তার কাছ থেকে মুক্তিপণের ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা জব্দ করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মকবুল অপহরণ ও হত্যার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেন।
আসামির বয়ানের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, তাওহীদ সকালে মাদরাসার জন্য বের হতো, ফিরতো প্রায় সন্ধ্যায়। এটি জানতো মকবুল। শনিবার মাদরাসা থেকে ফেরার পথে তাওহীদকে অপহরণ করবেন বলে মকবুল ওঁত পাতেন। রাত ৮টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছলে তাওহীদকে অপহরণ করেন মকবুল। পরে একটি নির্জন জায়গায় নিয়ে কলাগাছের সঙ্গে তার হাত, পা ও মুখ বেঁধে রাখেন।
তাওহীদদের বাসায় মকবুল যে মোবাইলটি ফেলে রেখেছিলেন, সেটিতে কল করে মুক্তিপণ না দিলে বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নিলে তাওহীদকে হত্যা করার হুমকি দেন।
মকবুল র্যাবকে বলেছেন, কলা গাছে বেঁধে রাখা অবস্থায় মুখের বাঁধন খুলে গেলে তাকে চিনে ফেলে তাওহীদ। পরে সে ডাক-চিৎকার শুরু করলে তাওহীদের মুখ ও গলায় মাফলার দিয়ে পেঁচিয়ে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন মকবুল। লাশ গুম করতে ঘটনাস্থলের আশপাশে একটি সেপটিক ট্যাংকের ভেতরে ফেলে রেখে পালিয়ে যান।
র্যাব জানায়, হত্যার পরও তিনি মুক্তিপণের টাকা চান। মকবুলের কথা মতো তাওহীদের মামা দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের রাজেন্দ্রপুরে ঢাকা-মাওয়া হাইওয়ের ফুটওভার ব্রিজের ৪ নম্বর পিলারের গোড়ায় তিন লাখ টাকা রেখে আসেন। মকবুল মুক্তিপণের টাকা নিয়ে পোস্তগোলা এলাকায় একটি আবাসিক হোটেলে অবস্থান করে। সেখান থেকেই র্যাব তাকে গ্রেপ্তার করে।
এক প্রশ্নের জবাবে মঈন বলেন, প্রাথমিকভাবে মকবুলের আগের কোনো অপরাধের তথ্য পায়নি র্যাব৷ তবে এ ধরণের ইউনিক অপরাধের ধরণ দেখে আমরা ধারণা করছি তার আগের অপরাধের ইতিহাস থাকতে পারে৷ এটা মামলার বিস্তারিত তদন্তে উঠে আসবে। আসামির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৪
এমএমআই/এমজে