ঢাকা: ‘আমরা গরিব মানুষ। এজন্য আমার মেয়েকে এখানে (ঢাকায়) কাজের জন্য পাঠিয়েছিলাম।
মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তব্য দিচ্ছিলেন তিনি। ‘গত ৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হক কর্তৃক চা শ্রমিকের সন্তান শিশু গৃহকর্মী প্রীতি ওরাং-এর হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে’ এ মানববন্ধনের আয়োজন করে সচেতন নাগরিক সমাজ নামে একটি সংগঠন।
মানববন্ধনে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে নমিতা ওরাং বলেন, ‘আমার মেয়েকে নির্যাতন করে মেরে ফেলা হয়েছে। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই। আমি আমার প্রীতি হত্যার বিচার চাই। সুষ্ঠু বিচার চাই। ’
প্রধানমন্ত্রীর বরাবর মেয়ের হত্যার বিচারের দাবি জানিয়ে প্রীতি ওরাংয়ের বাবা লোকেশ ওরাং বলেন, ‘আমার মেয়েকে কাজের জন্য ঢাকায় পাঠিয়েছিলাম। আমরা এখন প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার মেয়ের হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই। ’
আবেগাপ্লুত হয়ে প্রীতির দাদা সংকর তাঁতী বলেন, ‘আমরা চা শ্রমিক। আমরা সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকি। আমরা এখান থেকে অনেক দূরে থাকি। আমরা আমাদের সন্তানকে খাওয়াতে-পরাতে পারি না বলে ঢাকায় কাজ করতে পাঠাই। কিন্তু ও এখানে এসে যে নির্যাতিত হয়েছে, এটা আমরা মানতে পারি না। আমরা চাই প্রীতি ওরাংয়ের মতো আর কোনো শিশু যেন এমন নির্যাতনের শিকার না হয়। আমাদের আর কোনো বাচ্চা যেন পথে-ঘাটে পড়ে না মরে। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই। ’
প্রীতি ওরাংয়ের চাচাতো বোন কবিতা ওরাং বলেন, ‘আমরা চা শ্রমিক। আমরা গরিব-দুঃখী মানুষ। আমরা আমার বোনকে কাজের জন্য ঢাকাতে পাঠিয়েছিলাম। এখন আমরা এতদূর থেকে ঢাকায় এসেছি আপনাদের কাছে, সুষ্ঠু বিচার পাওয়ার জন্য। আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এর বিচার চাই। ’
এদিকে প্রীতি ওরাংয়ের মৃত্যুর ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের দাবি জানিয়েছে গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্ক নামের একটি সংগঠন। প্রেসক্লাবের সামনে পৃথক মানববন্ধন কর্মসূচিতে তারা এ ধরনের ঘটনা যেন আর না হয় সে বিষয়ে সরকার ও প্রশাসনকে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানায়।
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন ১২টি জাতীয় ট্রেড ইউনিয়নের জোট শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের (স্কপ) কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুল ওয়াহেদ। সঞ্চালনা করেন গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্কের ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী আবুল হোসেন।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় গার্হস্থ্য নারী শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মুরশিদা আক্তার নাহার, ব্লাস্টের সিনিয়র আউটরিচ অফিসার আমান উল্লাহ প্রমুখ।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি সকালে মোহাম্মদপুরের শাজাহান রোডের বহুতল বাড়ির নিচতলা থেকে গৃহকর্মী প্রীতিকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় স্থানীয়রা। চিকিৎসক জানান, হাসপাতালে নেওয়ার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। ওই ভবনের নবমতলায় থাকেন ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হক।
প্রীতির মৃত্যুর ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ওই মামলায় সৈয়দ আশফাকুল হক ও তার স্ত্রী তানিয়া খন্দকারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আদালত তাদের কারাগারে পাঠিয়ে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন। পুলিশ সেখানে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। পুলিশের তরফ থেকে বলা হয়েছে, মামলার তদন্তে অগ্রগতি হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৪
ইএসএস/এইচএ/