কক্সবাজার: মিয়ানমারের অভ্যন্তরে দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে সংঘাতের জেরে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ৩৩০ জনকে দুই দফায় ফেরত পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টার দিকে দ্বিতীয় দফায় ১৬৫ জনকে কক্সবাজারের ইনানীতে নৌবাহিনীর জেটিঘাট থেকে তাদের জাহাজে তুলে দেওয়া হয়।
এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে প্রথম দফায় ১৬৫ জনকে নিয়ে মিয়ানমার জলসীমার উদ্দেশে যাত্রা করে বাংলাদেশি পর্যটকবাহী জাহাজ এমভি কর্ণফুলী।
যেভাবে ফেরত পাঠানো হলো
বাংলাদেশে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের সেনাসহ ৩৩০ জনকে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়েছে বিজিবির অধীনে।
বিজিবির সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম জানিয়েছেন, গত ২ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সীমান্তের ওপারে আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির সংঘর্ষ শুরু হয়। এর জের ধরে ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন বিজিপির সদস্যসহ ৩৩০ জন। এর মধ্যে ৩০২ জন বিজিপি সদস্য, চারজন বিজিপি পরিবারের সদস্য, দুইজন সেনা সদস্য, ১৮ জন ইমিগ্রেশন সদস্য এবং চারজন বেসামরিক নাগরিক ছিলেন। তাদের ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশের তরফে মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দেশটি তাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের ফিরিয়ে নিতে সম্মত হয়।
শরীফুল ইসলাম বলেন, বিজিবির রামু সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মেহেদী হোসাইন কবীরের নেতৃত্বে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও পুলিশের প্রতিনিধির সমন্বয়ে ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রত্যাবাসন কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি মিয়ানমারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয় করে বৃহস্পতিবার হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে।
এর জন্য বৃহস্পতিবার ভোরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্ত ও টেকনাফ থেকে বিজিবির কড়া পাহারায় কক্সবাজারের ইনানীতে নৌবাহিনীর জেটিঘাটে ওই ৩৩০ জনকে আনা হয়। সেখানে সকাল ৮টা থেকে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার বিষয়ক পরিচালক মো. রাকিবুল ইসলাম, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব মো. রাশেদ হোসেন চৌধুরী, বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়ে, বিজিবির অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান, পুলিশ সুপার মো. মাহাফুজুল ইসলাম প্রমুখ।
সকাল সাড়ে ৯টার কিছুক্ষণ পরে কোস্টগার্ডের জাহাজ থেকে ইনানী জেটিতে আসে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির কর্নেল মিও থুরা নউংয়ের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল। সেখানে পৌঁছানোর পর উভয় রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের মধ্যে লিখিত কাগজে স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে শুরু হয় হস্তান্তরের আনুষ্ঠানিকতা। বেলা ১১টার দিকে বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী আনুষ্ঠানিকভাবে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়ের সামনেই ৩৩০ জনকে বিজিপির কর্নেল মিও থুরা নউংয়ের হাতে হস্তান্তর করেন।
এরপর একে একে ১৬৫ জনকে জেটি দিয়ে তোলা হয় সেন্টমার্টিন নৌ রুটে চলাচলকারী পর্যটকবাহী জাহাজ কর্ণফুলীতে। দুপুর ১২টার দিকে জাহাজটি ১৬৫ জনকে নিয়ে বাংলাদেশের সমুদ্র সীমান্তে অপেক্ষারত মিয়ানমারের নৌবাহিনীর জাহাজে পৌঁছে দেয়। পরে ফিরে ৪টার দিকে দ্বিতীয় দফায় আরও ১৬৫ জনকে নিয়ে পৌঁছে দেওয়া হয় মিয়ানমারের জাহাজে। এরপর মিয়ানমারের জাহাজটি যাত্রা শুরু করে মিয়ানমারের রাজধানীর দিকে।
এ সময় বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে জান্তা সরকারের বিভিন্ন বাহিনী ও সে দেশের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। যার প্রভাব বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের এপারে এসে পড়ে। এতে পালিয়ে আশ্রয় নেওয়া ৩৩০ জনকে বিজিবির পক্ষে সর্বোচ্চ সহায়তা ও সহযোগিদা দেওয়া হয়েছে। আহতদের দেওয়া হয়েছে চিকিৎসা। উভয় দেশের আন্তরিকতায় এবং নানা মহলের সহযোগিতায় তাদের মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হলো।
বাংলাদেশে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়ে বাংলাদেশ সরকার ও বিজিবির প্রতি কতৃজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে আন্তরিক সম্পর্ক আরও উন্নত হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২১১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৪/আপডেট: ১৭০৬ ঘণ্টা
এসবি/এমজেএফ