বরিশাল: এক যুগে আগে বাড়ি থেকে বের হয়ে হারিয়ে যাওয়া সুনামগঞ্জের আলম নূর (৪৫) এর সন্ধান পাওয়া গেল বরিশালে। আর এক যুগ পর তাকে ফিরে পেয়ে স্বজনরাও আত্মহারা।
জানা গেছে, সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ফয়জুর রহমানের ছেলে আলম নূর। যার স্ত্রী ও একটি কন্যা সন্তানও রয়েছে। কিছুটা মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় এক যুগে আগে বাড়ি থেকে বের হয়ে হারিয়ে যায় সে। এরপর স্বজনরা তার সন্ধান চালিয়েও দীর্ঘ ১২ বছরে কোনো খোঁজ পাননি।
সর্বশেষ বরিশাল জেলার উজিরপুর মডেল থানা পুলিশ তাকে বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে উদ্ধার করে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে উজিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাফর আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, আলম নূর বৃহস্পতিবার রাতে উজিরপুরের সাতলা এলাকার একটি বাড়ির আঙ্গিনায় সন্দেহজনকভাবে প্রবেশ করে। ওই বাড়ির লোকজন চোর সন্দেহে তাকে আটক করে থানায় খবর দেন।
তিনি বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ সদস্যরা গিয়ে তাকে থানায় নিয়ে আসেন। থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে অসংলগ্ন কথাবার্তায় বোঝা যায় আলম নামের ওই ব্যক্তি কিছুটা মানসিক প্রতিবন্ধী।
তিনি বলেন, আমরা তার খাবার ও পোশাকের ব্যবস্থা করি। পরবর্তীতে আবারও জিজ্ঞাসা করলে সে তারা বাবার নাম ফয়জুর রহমান এবং ছাতক থানা এলাকার কথা বললেও গ্রামের নাম একাধিক বলতে থাকে। এরপর ছাতক থানায় বার্তা পাঠালে তারা নোয়াপাড়াসহ কয়েকটি গ্রামে অনুসন্ধান চালায়। যদিও অল্প সময়ের মাঝেই নোয়াপাড়া গ্রামে আলম নূরের স্বজনদের খোঁজ মেলে।
ওসি বলেন, স্বজনদের খোঁজ মেলার পর ওই ব্যক্তির সঙ্গে তাদের কথা বলানো হয়, এরপর স্বজনরা নিশ্চিত হয়ে বরিশালের উদ্দেশে রওনা করেন।
এদিকে শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৩টার দিকে উদ্ধার হওয়া আলম নূরকে স্বজনরা নিয়ে সুনামগঞ্জের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন জানিয়ে ওসি জাফর আহমেদ বলেন, নুর আলমের বড় ভাইয়ের ছেলে হাবিবুর রহমান এসেছিলেন। তিনি আসার পর নূর আলম তার একমাত্র মেয়ের সঙ্গে কথা বলেছে। যে হারিয়ে যাওয়ার সময় শিশু থাকলেও এখন ইন্টারমিডিয়েট দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। বাবা-মেয়ের কথোপকথনের সময় এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
এদিকে চাচাকে ফিরে পেয়ে নুর আলমের বড় ভাইয়ের ছেলে হাবিবুর রহমানও আবেগ-আপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি জানান, এ চাচার সন্ধান স্বজনরা অনেক জায়গায় করেছেন। অনেকে তো ভেবেই নিয়েছেন আর বেঁচে নেই, এভাবে তার দেখা মিলবে কেউ বুঝতে পারেনি। এ সময় তিনি থানা পুলিশকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, মানসিক প্রতিবন্ধী ভেবে যে পুলিশ ছেড়ে দেননি সেটাই ভাগ্য ভালো, পুলিশ যাচাই করার কারণে আজ চাচার খোঁজ পেলাম।
এদিকে আলম নূরের স্ত্রী সিলেট এলাকার একটি হাসপাতালে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে কাজ করে সন্তানের পড়ালেখা করাচ্ছেন বলে জানান স্বজনরা।
আর পুলিশের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন স্থানীয়রা। স্থানীয় সাংবাদিক এমদাদুল হক সেন্টু বলেন, মানসিক প্রতিবন্ধী ওই ব্যক্তিকে উদ্ধারের পর তাকে নতুন পোশাক কিনে দিয়েছে পুলিশ। তারপর চুল কাটিয়ে গোসল করিয়ে খাবারের ব্যবস্থা করেছে। আবার সড়কপথে আড়াইশত কিলোমিটারেরও বেশি দূরত্বের সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রাম থেকে আসা স্বজনদেরও আপ্যায়নের ব্যবস্থা করেছে পুলিশ। তাদের বিদায় দেওয়া পর্যন্ত অভিভাবকের ভূমিকা রেখেছেন থানার ওসি। সত্যিই এটি মানবিকতার একটি উদাহরণ হয়ে থাকলো।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৪
এমএস/জেএইচ