মৌলভীবাজার: ‘রেকর্ড’ মানেই গভীর আনন্দ। পরিশ্রমের পর একটা বিশেষ কিছু প্রাপ্তিতেই আসে প্রশান্তি।
এখানে রেকর্ড কথাটির অর্থ প্রকৃতির নতুন কিছুর ছবি ধারণ। তারপর সেই ছবিটি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মাঝে আলোচনা, পর্যালোচনা আর বিশ্লেষণ। সর্বশেষে সেখান থেকেই আসে সুখের বার্তা। অর্থাৎ রেকর্ডের স্বীকৃতি। একজন বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রীর কাছে এই প্রাপ্তি সীমাহীন আনন্দ বার্তা বহন করে।
বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রী শামীম আলী চৌধুরী সম্প্রতি একটি প্রজাপতির ছবি তুলেছেন বৃহত্তর সিলেট থেকে। যা রেকর্ডর খাতায় যোগ হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওয়াইল্ডলাইফ দিয়েই ফটোগ্রাফি শুরু করি। প্রকৃতিতে সবচেয়ে বেশি পাখির ছবি তুলেছি। চোখের নজরে পড়লে বন্যপ্রাণীর ছবিও তুলতাম। কিন্তু প্রজাপতির ছবি কখনোই তোলা হয়নি। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে আমরা ৫ জন ফটোগ্রাফার ছবি জন্য ঢাকা থেকে সিলেট ডিভিশনের শ্রীমঙ্গল, কুলাউড়া ও মাধবকুণ্ডের উদ্দেশ্যে রওনা হই। ডিসেম্বর মাসের ১৫ তারিখে পাখির উদ্দেশ্যে কুলাউড়ার সাগরনাল চা বাগানে যাই। প্রায় ১৬০ ফুট উঁচু একটা পাহাড়ে উঠি। কোনো পাখির দেখা না পেয়ে হতাশ হয়ে যাই। তবে বনের ছোট ছোট গাছে বেশ প্রজাপতির ওড়াউড়ি দেখি। প্রজাপতি সম্পর্কে আমার বিন্দুমাত্র জ্ঞান নেই। পাখির দেখা না পাওয়ায় অবশেষে প্রজাপতির ছবি তুলি।
রেকর্ড প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঢাকায় এসে প্রজাপতির ছবিগুলি ‘বাটারফ্লাই বাংলাদেশ’ নামে একটি গ্রুপে পোস্ট দিয়ে জানতে পারি- ১৯৬২ সালে আলম নামে একজন ফটোগ্রাফার পূর্ব পাকিস্তান আমলে চট্টগ্রাম থেকে প্রথম এই প্রজাপতির ছবি তোলেন। দীর্ঘ ৬১ বছরের মধ্যে আর কোনো ফটোগ্রাফার এই প্রজাপতির ছবি তুলতে পারেননি। সেদিন আমরা তিনজন ফটোগ্রাফার এই প্রজাপতির ছবিটি তুলে বাংলাদেশে প্রথম রেকর্ড গড়ি। এটা জানার পর খুব আনন্দিত হই। সাগরনালে পাখি শূন্য ট্যুরে আমার তোলা এই প্রজাপতির ছবি বাংলাদশে প্রথম রেকর্ড হওয়ায় সব দুঃখ-কষ্ট ভুলে যাই।
এ প্রজাপতির ইংরেজি নাম Black Forester এবং এর বৈজ্ঞানিক নাম Lethe vindhya. ব্ল্যাক-ফরেস্টার ইনসেক্টা শ্রেণি নিমফালিডি পরিবারের লেথে গোত্রের একটি প্রজাপতি।
এই প্রজাপতি মূলত ভারত ও ইন্দো-চীনে পাওয়া যায়। এদের দৈর্ঘ্য ৬৫-৭০ মি.মি.। উভয় লিঙ্গের ডানাগুলি গোলাকার। লেজ ছোট। সামনের পাখার শীর্ষ বেগুনি এবং উভয় ডানার তৃতীয় প্রান্ত বেগুনি রঙের হয়। এরা মূলত পাহাড়ি বনে ছোট ছোট গাছে বিচরণ করে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৪
বিবিবি/এমজে