ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

জয়পুরহাটে প্রশিক্ষণ শেষে সেলাই মেশিন পেলেন ৪০ অসচ্ছল নারী

প্রান্তিক দরিদ্র নারীদের স্বাবলম্বী করছে বসুন্ধরা গ্রুপ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৪
প্রান্তিক দরিদ্র নারীদের স্বাবলম্বী করছে বসুন্ধরা গ্রুপ জয়পুরহাটে প্রশিক্ষণ শেষে সেলাই মেশিন পেলেন ৪০ অসচ্ছল নারী

‘আমরা বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে বসুন্ধরা শুভসংঘের মাধ্যমে সারা দেশের অসচ্ছল নারীদের সচ্ছল করতে বিনা মূল্যে সেলাই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছি। প্রতিটি জেলায়ই সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু হবে।

বর্তমানে ৪০টির মতো সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু আছে। এখানে প্রশিক্ষণ নেওয়া দরিদ্র অসচ্ছল নারীদের প্রশিক্ষণ শেষে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে সেলাই মেশিন উপহার দিচ্ছি।

এই সেলাই মেশিনটি দিয়ে তাঁরা তাঁদের সংসারের সচ্ছলতা আনতে পারবেন। বসুন্ধরা গ্রুপের মাননীয় চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের নির্দেশনায় সারা দেশে আমরা এই কাজগুলো করছি। ’ জয়পুরহাটে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে দরিদ্র প্রশিক্ষিত নারীদের হাতে সেলাই মেশিন তুলে দিয়ে কথাগুলো বলছিলেন দেশ বরেণ্য কথাসাহিত্যিক, বসুন্ধরা শুভসংঘের প্রতিষ্ঠাতা ও কালের কণ্ঠ’র প্রধান সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল ও পাঁচবিবি উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে পৃথক আয়োজনে ৪০ অসচ্ছল নারীর মাঝে বিনা মূল্যে সেলাই মেশিন বিতরণ করা হয়।

বসুন্ধরা শুভসংঘের আয়োজনে সেলাই মেশিন বিতরণ অনুষ্ঠানে ইমদাদুল হক মিলন আরো বলেন, “বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় আমরা আমাদের নিজস্ব ভবন তৈরি করব। সেখানে প্রশিক্ষণকেন্দ্র থাকবে, স্কুল থাকবে, পাঠাগার থাকবে এবং কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থাকবে। এগুলো সবই আমরা মানুষের কল্যাণের জন্য করছি। বসুন্ধরা গ্রুপের স্লোগান হচ্ছে, ‘দেশ ও মানুষের কল্যাণে’। আমরা সেই কাজগুলোই করতে চাই। আমরা মানুষের পাশে থাকতে চাই। ”

বিনা মূল্যে দীর্ঘ পাঁচ মাস প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে সেলাই মেশিন পেয়ে খুশি ক্ষেতলাল উপজেলার রোয়াইর গ্রামের মোর্শেদা বেগম, পৌর সদরের দীঘিপাড়া মহল্লার স্বপ্না আক্তার, পাইকপাড়ার আফরোজা বেগম, মছনদাইল গ্রামের লিমা খাতুনসহ ২০ অসচ্ছল নারী। তাঁদের স্বামীরা কেউ ভ্যানচালক, কেউ দিনমজুর আবার কেউ বা দোকানের কর্মচারী। স্বামীর স্বল্প আয় দিয়ে তাঁদের দিন কাটে অনাহারে-অর্ধাহারে।

প্রশিক্ষণ শেষে সেলাই মেশিন পেয়ে প্রত্যেকেই সেলাইয়ের কাজ করে স্বামীর পাশে দাঁড়াতে চান। এমন সুযোগ করে দেওয়ার জন্য বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তাঁরা।

একইভাবে পাঁচবিবি উপজেলার ২০ নারীর হাতেও ওই দিন তুলে দেওয়া হয় সেলাই মেশিন। তাঁদেরই একজন পাঁচবিবির বাজিতপুর গ্রামের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পরিবারের সন্তান সুমিতা তির্কী। তিনি বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপের সহযোগিতায় বসুন্ধরা শুভসংঘের মাধ্যমে আমাদের বিনা মূল্যে পাঁচ মাস সেলাই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এখন আমাদের বিনা মূল্যে সেলাই মেশিনও দিয়েছে। বসুন্ধরা গ্রুপ আমাদের মতো অসচ্ছল নারীদের পাশে এভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে, তা কখনো ভাবিনি। ’ একই অনুভূতি ব্যক্ত করেন পাঁচবিবির দমদমা গ্রামের লিমা আক্তার, অর্পণা রানী, আটুল গ্রামের নাজনীন আক্তার প্রমুখ। বিনা মূল্যে সেলাই মেশিন পেয়ে উপকারভোগীরা বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সেলাই মেশিন বিতরণ অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন পাঁচবিবি উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আফজাল রাজন, ক্ষেতলাল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ারুজ্জামান তালুকদার নাদিম, থানার ওসি আনোয়ার হোসেন, বসুন্ধরা শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান, বগুড়া শুভসংঘের উপদেষ্টা মাহমুদ শাওন, নওগাঁ শুভসংঘের সভাপতি মহিদুর রহমান, কালের কণ্ঠ’র নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি ফরিদুল করিম, ধামুরহাট প্রতিনিধি হারুনুর রশিদসহ বসুন্ধরা শুভসংঘ কেন্দ্রীয় এবং জেলা ও উপজেলা কমিটির সদস্যরা।

সেলাই মেশিনই হবে ভাগ্যবদলের হাতিয়ার
উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়েই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয় দরিদ্র পরিবারের মেয়ে বর্ষা আক্তারকে। স্বামীর বাড়ি জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল পৌর সদরের কলেজ রোড এলাকায়। স্বামী সোলায়মান আলী প্রতিবন্ধী। সদরের একটি কেজি স্কুলে শিক্ষকতা করেন সোলায়মান। বেতন সামান্য হওয়ায় সংসারে অভাব-অনটন লেগেই থাকে। এ জন্যই বাড়তি রোজগারের চেষ্টা করেন বর্ষা। অনেক জায়গায় ধরনা দিয়ে ব্যর্থ হন। শেষে বসুন্ধরা শুভসংঘের সেলাই প্রশিক্ষণে অংশ নেন। পাঁচ মাস প্রশিক্ষণ নিয়ে বর্ষা দরজির কাজ রপ্ত করেন। প্রশিক্ষণ শেষে বিনা মূল্যে সেলাই মেশিন দেওয়ার কথা জানলেও বিশ্বাস হয়নি তাঁর। সম্প্রতি ক্ষেতলাল উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে সেলাই মেশিন গ্রহণের জন্য ডাক পেয়ে কিছুটা হকচকিয়ে যান বর্ষা। কিছুতেই যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। অবশেষে মেশিন পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হন বর্ষা। সেলাই মেশিন পাওয়ার অনুভূতি ব্যক্ত করে বর্ষা বলেন, ‘আমাদের মতো অসচ্ছল ও অসহায় নারীদের স্বাবলম্বী করার ব্রত নিয়ে যাঁরা পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা আমার জানা নেই। এই মেশিনের মাধ্যমে আমি স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করব। আশা করি, সংসারের অভাব দূর করতে পারব। ’

 

ইটাখোলা হাটের হরিজন সম্প্রদায়ের এতিম মেয়ে আঁখি বাঁশফোঁড়। ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছেন। অনেক কষ্টে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন। অভাবের কারণে পড়ালেখা আর চালানো সম্ভব হয়নি। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর তাগিদে অংশ নেন বসুন্ধরা শুভসংঘের সেলাই প্রশিক্ষণে। প্রশিক্ষণ শেষে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয় সেলাই মেশিন। আঁখি বলেন, ‘এখন সামনে এগোনোর পালা। সেলাইয়ের কাজ করে মাকে সহযোগিতা করতে পারব। এই সেলাই মেশিনই হবে আমার ভাগ্যবদলের হাতিয়ার। আমি প্রাণ থেকে প্রার্থনা করি, আমাকে যাঁরা এ কাজে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন, ভগবান যেন তাঁদের মঙ্গল করেন। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৪
নিউজ ডেস্ক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।