ঢাকা: মেডিকেল ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ পদের ব্যক্তিদের নীতি-নৈতিকতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে দেশে বর্তমান উন্নয়ন এবং অগ্রগতি ধরে রাখা বড় চ্যালেঞ্জ বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদক্ষেপ প্রত্যাশা করেছেন তিনি।
রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ ক্ষোভ ও প্রত্যাশার কথা জানান।
হানিফ বলেন, বাংলাদেশ এখন সফলতার রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিত হয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৫ বছরের বিচক্ষণতা, প্রাজ্ঞতা, মেধা ও দক্ষতা এই রাষ্ট্র পরিচালনা করে দেশকে আজ এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন। উন্নয়ন আমাদের যথেষ্ট হয়েছে, এখন প্রয়োজন উন্নয়নকে ধরে রাখা। এই উন্নয়নকে ধরে রাখা এখন আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এই উন্নয়নকে ধরে রাখার জন্য সরকারের সামনে দেশের সামনে চেয়ে বড় সমস্যা, জাতির সমস্যা হলো আমাদের মানুষের সততা, নীতি-নৈতিকতা, মূল্যবোধের চরম অবক্ষয়ের দিকে জাতি চলে যাচ্ছে। এখন থেকে যদি বের হয়ে আসতে না পারি তাহলে এই উন্নয়ন কিন্তু ধরে রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। গত কয়েকদিন ধরে আপনারা দেখেছেন দুইজন শিশু খতনা করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছে। কয়েকদিন আগে আরেক শিশুর এই অবস্থায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে মৃত্যুঝুঁকিতে ছিল। আমরা লক্ষ্য করছি, যেসব শিশুর খতনার বিষয় আছে তাদের পরিবার শঙ্কিত। এই যে চিকিৎসকদের কোনো গাফিলতির কারণে তারা প্রাণ হারালো যেটা নিয়ে অনেকেই শঙ্কিত আছে। এ অবস্থা কেন হয়েছে, তাতে জাতি অবাক হলেও আমি কিন্তু খুব একটা বিস্মিত হইনি। চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান হচ্ছে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, যে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের একমাত্র মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের যখন শীর্ষ কর্নধারদের নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে লেখালেখি হয়, তার অনৈতিকতা, স্বজনপ্রীতি নিয়ে, নিয়োগ বাণিজ্য নিয়ে নানা ধরনের লেখালেখি হয় তখন কিন্তু চিকিৎসার ওপরের মানুষের আস্থা আস্তে আস্তে কমে যায় বা সেই চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপরে মানুষের আস্থা হারিয়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক।
তিনি বলেন, এই ধরনের শীর্ষ পর্যায়ে লক্ষ্য করে দেখুন আজকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ যে পদ উপাচার্য সেই উপাচার্যেও বিষয়ে কিন্তু বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য চলে আসছে। কেউ স্বজনপ্রীতির সঙ্গে জড়িত, কেউ নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত এমনকি অনেক উপাচার্যের অডিও রেকর্ডও চলে আসছে গণমাধ্যমে যারা যারা নিয়োগের জন্য সরাসরি প্রার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করছেন আর্থিক সুবিধা নেওয়া জন্যে। এটাই যদি সর্বোচ্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পদধারী ব্যক্তিদের কাছ থেকে হয় তাহলে সেই জাতির ভবিষ্যৎ নিয়ে তার নীতি-নৈতিকতা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করা ছাড়া কিছুই থাকে না। গ্রিক দার্শনিক প্লেটো এক উক্তিতে বলেছিলেন, একটি দেশের মানুষ যেমন হবে রাষ্ট্র তেমনি হবে। মানুষের চরিত্র দ্বারাই রাষ্ট্র গঠিত হয়। আজ আমাদের শিক্ষিত ও সর্বোচ্চ ব্যক্তিদের যদি এই নীতি-নৈতিকতার অবস্থা হয় তাদের যদি এই মূল্যবোধ হয় তাহলে সেই ক্ষেত্রে এই রাষ্ট্রের চরিত্র আস্তে আস্তে অবক্ষয়ের দিকে যাবে এটাই স্বাভাবিক। আমি সেই কারণে মনে করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন, অগ্রগতি করেছেন। এই উন্নয়ন অগ্রগতি ধরে রাখার জন্য এখন দরকার হচ্ছে আমাদের এই সমাজের যে নীতি-নৈতিকতা, সততার যে অবক্ষয়ের মধ্যে যাচ্ছে সেইটাকে কীভাবে আবার আমরা ফিরিয়ে আনতে পারি, মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করতে পারি সেই লক্ষ্যে আমাদের কাজ করা প্রয়োজন। আশা করি, এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ দেবেন, দেশের জনগণের এখনও বেশিরভাগ মানুষের ভরসা, আস্থার জায়গা, ভরসার জায়গা আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমাদেরও সেইটাই ভরসার জায়গা, আমরাও আশা করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে সঠিক পদক্ষেপ নেবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৪
এসকে/এএটি