ঢাকা, বুধবার, ১২ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৬ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

পোস্তগোলার চাপ নিতে হিমশিম খাচ্ছে বাবুবাজার ব্রিজ

ইফফাত শরীফ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৪১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২৪
পোস্তগোলার চাপ নিতে হিমশিম খাচ্ছে বাবুবাজার ব্রিজ ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: পোস্তগোল ব্রিজ মেরামতের কাজের জন্য বিকল্প রাস্তা হিসেবে বাবু বাজার ব্রিজের উপর দিয়ে প্রায় ২২ জেলার যানবাহন চলাচল করছে। ফলে এই এলাকায় তীব্র যানজট দেখা দিচ্ছে।

যানজটের কারণে যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, বুড়িগঙ্গা সেতু-১ (পোস্তগোলা সেতু) মেরামতের জন্য পাঁচ দিন এ সেতু দিয়ে কোনো যানবাহন পারাপার হতে পারবে না। গত ২৪ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিকল্প রাস্তা হিসেবে বাবুবাজার সেতু ব্যবহার করায় ওই এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছিল। এ অবস্থায় আগামী ১, ৪ এবং ৮ মার্চ এই কদিনও বিকল্প হিসেবে বাবু বাজার ব্রিজ সড়ক ব্যবহারের জন্য উৎসাহিত করছে ডিএমপি।

তবে বিকল্প রাস্তা হিসেবে বাবু বাজার  ব্রিজকে ঠিক করা হলেও এ রাস্তায় এখনো যানচলাচলের জন্য প্রস্তুত নয়। এ সড়কের পাশে চলছে সিটি কর্পোরেশন সুয়ারেজ লাইন ও ফুটপাত মেরামতের কাজ। যে কারণে রাস্তায় তৈরি হয়েছে বিশাল খানা খন্দের। ফলে স্বাভাবিক যানচলাচল এক প্রকার ব্যাহত হচ্ছে।  

মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সরজমিন বাবুবাজার ব্রিজ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পোস্তগোলা সেতুর কাজ চলমান থাকায় নতুন করে গাড়ির চাপ বেড়েছে বাবু বাজার ব্রিজে। বাস, ট্রাক, পিকআপসহ বিভিন্ন যানের দীর্ঘ সারি ব্রিজের ওপর। দুই পাশে প্রায় কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ হয়েছে এ যানজট। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহন দাঁড়িয়ে আছে।

ফলে কেরানীগঞ্জ, নয়াবাজার, বংশাল, গুলিস্তানসহ বেশ কয়েকটি সড়কে যানজটের তীব্র প্রভাব পরেছে। বাবুবাজার দিয়ে আসা যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে বসে থাকতে হচ্ছে। অনেকে হেঁটে পার হচ্ছেন ব্রিজ। পাশাপাশি বাবু বাজার ব্রিজ সংলগ্ন সড়কের নানা অব্যবস্থাপনায় এই পথে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন কেউ কেউ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পোস্তগোলা সেতু রেট্রোফিটিংয়ের কাজ করায় যে গাড়ি গুলো যাত্রাবাড়ী থেকে পোস্তগোলা সেতু দিয়ে মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে যাতায়াত করে সেগুলোকে ধোলাইরপাড় বাসস্ট্যান্ড ও বাবুবাজার সেতু ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে সড়ক ও জনপথ (সওজ)। একইভাবে গাবতলী থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে যাতায়াত করা যানবাহনগুলোকে বাবুবাজার সেতু ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আগামী ৮ মার্চ পর্যন্ত পোস্তগোলা সেতুর মেরামতের কাজ চলবে।

এদিকে কেরানিগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসার পথে বাবু বাজার ব্রিজের এক পাশের রাস্তায় দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সড়ক মেরামতের ও সুয়ারেজ লাইনের কাজ চলছে। অন্য পাশ দিয়ে চলছে যানবাহন। পুরো এলাকাজুড়ে সড়ক মেরামতের জন্য সড়কের উপরেই ফেলে রাখা হয়েছে ইট, বালু ও পাথর।

পাশাপাশি রাস্তায় কাজের কারণে সৃষ্ট বিশাল গর্তের ফলে যান চলাচল অনেকটাই ব্যহত হচ্ছে। সড়ক মেরামতের কাজের মধ্যে দূরপাল্লার যানবাহনের চলাচল বেড়ে যাওয়ায় নয়াবাজার এলাকা ছেয়ে গেছে ধুলোয়। এরমধ্যেই যাতায়াত করতে হচ্ছে সবাইকে।

বাবুবাজার ব্রিজের পাশে সুয়ারেজ লাইনের ও ফুটপাতের কাজ করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান বিজনেস অবজেক্টস নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এর সাইট সুপারভাইজার মো কবির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, এ রাস্তার কাজ চলছে প্রায় আড়াই মাস যাবৎ। আরো তিন থেকে চার মাস সময় লাগবে কাজ শেষ হতে। তবে যেসকল স্থানে কাজ করলে মানুষের যাতায়তের অসুবিধার হয়, সে সকল স্থানের কাজ আমরা বন্ধ রেখেছি। পরে অন্য সময় সে স্থানের কাজ গুলো আমরা করব। পোস্তগোলা ব্রিজ বন্ধ থাকায় এ সড়ক দিয়ে গাড়ির চাপ বাড়ছে। যানচলাচল স্বাভাবিক রাখার জন্য যতটুকু ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে।  

এদিকে বাবু বাজার ব্রিজের উপর দীর্ঘ সময় জ্যামে বসে ছিলেন লেগুনা ড্রাইভার রিপন। কথা হলে তিনি বাংলানিউজকে জানান, আগে যেখানে ব্রিজ পার হতে সময় লাগতো সর্বোচ্চ  ২০ থেকে ২৫ মিনিট এখন সেখান সময় লাগছে ঘণ্টাখানেকের বেশি।  

যানজটের মধ্যেই বাবুবাজার ব্রিজ থেকে নেমেই সড়কের উপর বাস থামিয়ে যাত্রী নামাচ্ছে দূর পাল্লার বাস। এসকল স্থানীয় পরিবহন, আন্তজেলা বাস এবং লেগুনা গুলো বাবুবাজার ব্রিজের উপর থেকে যাত্রী উঠানোর কারণে রাস্তায় তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে।  

দুপুরে ব্রিজের উপর থেকে যাত্রী উঠানামা করছিল ডি এম পরিবহনের ঢাকা মেট্রো ব ১২-২৩০৯ সিরিয়ালের একটি বাস। বাসটিকে পুলিশের পক্ষ থেকে একবার সতর্ক করা হয় যেন ব্রিজের উপর কোন যাত্রী উঠানামা না করে। তবে কিছু দূর গিয়ে আবার যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করতে থাকলে এক পর্যায়ে বাসটিকে জরিমানা করা হয়।  

পরে কথা হলে বাসটির সুপার ভাইজার মো লিটন বাংলানিউজকে বলেন, পোস্তগোলা ব্রিজ প্রতিদিন প্রায় ১৭শ আন্তজেলা পরিবহন চলাচল করে। বাবু বাজার ব্রিজও অনেক পরিবহন চলাচল করে। এখন পোস্তগোলা ব্রিজ বন্ধ থাকায় এই সব পরিবহন গুলো বাবু বাজার ব্রিজ দিয়ে চলছে। সেজন্য আমরা যাত্রী কম পাচ্ছি। যে কারণে বাধ্য হয়ে রাস্তা থেকে যাত্রী উঠাতে হচ্ছে। অন্য সময় এ রাস্তায় তেমন একটা গাড়ির চাপ থাকে না। যদিও এ কয়েকদিন যাবৎ গাড়ির চাপ কিছুটা বেড়েছে।  

বাবু বাজার ব্রিজে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক এ.এস.আই বাংলা নিউজকে বলেন, ব্রিজ বন্ধ থাকার কারণে ২৪ এবং ২৬ ফেব্রুয়ারি বাবুবাজার ব্রিজ এলাকায় তীব্র যানজট ছিল। তবে সে তুলনায় আজকে গাড়ির চাপ ও যানজট কিছুটা কম। মানুষ যেন নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারে সে জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। ব্রিজের উপর আমরা নো পার্কিং এর সাইনবোর্ড লাগিয়েছি। কারণ এই ব্রিজের উপর অধিকাংশ বাস ও লেগুনা যাত্রী উঠানামা করে। ফলে এক প্রকার যানযটের সৃষ্টি হয়। তারপরও যদি কোন পরিবহন যাত্রী উঠানামা করে সে ক্ষেত্রে আমরা তাদের প্রাথমিক ভাবে সতর্ক করে ছেড়ে দিচ্ছি। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মামলা বা রেকার ব্যবহার করা হয় কিছু পরিবহনের বিরুদ্ধে। পাশাপাশি পরিবহন গুলোকে বলে দেয়া হচ্ছে যেন আগামী ৮ তারিখ পর্যন্ত ব্রিজের উপরে যেন কোন যাত্রী উঠানামা করানো না হয়, সে জন্য তাদের সতর্ক করে দিচ্ছি। আগামী ১, ৪ এবং ৮ মার্চ  পোস্তগোলা ব্রিজের কাজের জন্য এ সড়কে গাড়ির চাপ বেশি থাকতে পারে। সে জন্য সাময়িক অসুবিধার জন্য এ সড়কে চলাচলকারীদের প্রতি আন্তরিক ভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। এবং অনুরোধ থাকবে বিকল্প রাস্তা ব্যবহারের জন্য।

বাংলাদেশ সময়: ২৩২৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭,২০২৪
ইএসএস/এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।