ঢাকা, শনিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৮ মে ২০২৪, ০৯ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

কিশোর গ্যাংয়ে জড়াচ্ছে বিত্তবানের সন্তানরাও: ডিবি হারুন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪১ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০২৪
কিশোর গ্যাংয়ে জড়াচ্ছে বিত্তবানের সন্তানরাও: ডিবি হারুন

ঢাকা: রাজধানীর তেজগাঁও, গুলশান, উত্তরা ও মতিঝিল এলাকায় অভিযান চালিয়ে গত দুইদিনে কিশোর গ্যাংয়ের ৭৫ সদস্যকে আটক করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা (ডিবি) বিভাগ।  

ডিবি বলছে, বর্তমানে ধনীর সন্তানরাও কিশোর গ্যাংয়ে জড়িয়ে যাচ্ছে।

তারা মারামারিসহ হত্যার মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে।

বুধবার (৬ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

তিনি বলেন, মঙ্গলবার (৫ মার্চ) থেকে বুধবার (৬ মার্চ) পর্যন্ত কিশোর গ্যাংয়ের ৭৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আপনারা জানেন কিশোর গ্যাং একটি ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। তাদের দৌরাত্মের কারণে সমাজের শান্তি শৃঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে। কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা ছিনতাই, ইভটিজিং, হুমকি দেওয়া, স্কুল-কলেজ ছাত্রীদের ভয় দেখানো ও বিভিন্ন সময়ে উত্তেজনাকর পরিস্থিত সৃষ্টি হচ্ছে। এ কাজগুলো তারা দলবদ্ধ হয়ে করে থাকে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নানা নামে প্রভাব বিস্তার করে আসছে এসব কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। রাজধানীর উত্তরা এলাকায় ইয়ং স্টার, বিগবস, ডিস্কো বয়েজ, বন্ধু মহল, শীল বিষু গ্যাং, পারভেজ গ্রুপ, রুস্তম গ্রুপ, ইয়ং স্টার গ্রুপ, নাইনএমএম গ্রুপ, নাইন স্টার গ্রুপ ও রামপুরা উজ্জল গ্রুপ।

তিনি বলেন, কিশোর গ্যাং গ্রুপগুলো মাদক, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করে আসছে। কতিপয় বড় ভাইয়ের ছত্রছায়ায় এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে আসছে। এমন কি এরা চুরি ছিনতাই করে আসছে। এসব কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় গত দুই বছরে ৩৪ কিশোর নিহত হয়েছে।

হারুন অর রশীদ বলেন, আমরা এক সময়ে মনে করতাম ভাসমান ও নিম্ন আয়ের পরিবারের সন্তানরা কিশোর গ্যাং চক্রে জড়িত হচ্ছে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, উচ্চ মধ্যবিত্ত, ধনীদের আলালের ঘরে দুলালরাও কিশোর গ্যাং চক্রে জড়িয়ে যাচ্ছে। তাদের পোশাক, চুলে কাটিং চলাফেরা সবই ভীতিকর। এসব ধনীর সন্তানরা প্রথমে মাদক সেবন, পরবর্তীতে মাদক বিক্রিতেও জড়িয়ে যাচ্ছে।  

এছাড়া তারা এলাকায় স্থানীয় রাজনৈতিক বড় ভাই আবার কখনো কাউন্সিলরদের নিয়ন্ত্রণে থেকে তারা হত্যার মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। বর্তমান ও সাবেক কাউন্সিলরদের ছত্রছায়ার অভিযোগ রয়েছে। গ্রেপ্তার ৭৫ জন কিশোর গ্যাং সদস্যদের মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও রয়েছে। সবাই কিশোর গ্যাং চক্রে জড়িত থাকার কথা আমাদের কাছে স্বীকার করেছে।

কিশোর গ্যাং সামাজিক অবক্ষয়ের কারণ উল্লেখ করে অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, এখন যে সামাজিক অবক্ষয় ঘটছে। এই সকল কিশোররা স্কুলে পড়ালেখা বাদ দিয়ে মাদক সেবনের মতো উশৃঙ্খল জীবন যাপন করছে। আমরা গোয়েন্দা পুলিশ কাজ করছি। তবে আমি মনে করি অভিভাকদের উচিত তার সন্তান কোথায় যায়, কার সঙ্গে মিশে তার খোঁজ রাখা উচিৎ। পাশাপাশি মা-বাবার উচিৎ সন্তানদের সময় দেওয়া। আসলে গ্রেফতার করে কিশোর গ্যাং দমন করা যাবে না। সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। সন্তানদের ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে।  

কিশোর গ্যাংয়ের আশ্রয় দেওয়া বড় ভাইদের পরিচয় প্রকাশ করা হবে কি না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা বর্তমানে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের গ্রেফতার করেছি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে আমরা অনেকের নাম পেয়েছি। এই সকল নাম তদন্ত করে আমরা দেখবো কারা কারা কিশোর গ্যাং সদস্যদের আশ্রয় প্রশ্রয় দেয়। তবে আমি মনে করি এই সকল কিশোর গ্যাংয়ের নানা অপরাধ করার তথ্য তো কান্সিলররা জানে।  

হারুন অর রশীদ বলেন, মাহফিল ও সংস্কৃতি অনুষ্ঠানের নামে এক হচ্ছে কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যা। নানা গ্রুপের সদস্যরা কিন্তু বড় বা রাজনৈতিক নেতাদের পরিচয় দিয়ে এলাকায় চাঁদাবাজি করে। মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধ করে। কিশোর গ্যাংয়ের এমন দৌড়াত্বের কারণে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। পাশাপাশি স্থানীয় রাজনৈতি নেতা ও পরিবারের সদস্যদের কিশোর গ্যাং দমনে এগিয়ে আসতে হবে। তবে কিশোর গ্যাং বিরোধী ধারাবাহিক অভিযান চলবে। এই বিষয়ে কেউ সুপারিশ নিয়ে আসলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪০ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০২৪
এসজেএ/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।