স্থপতি রাজীব আহমেদের অকাল মৃত্যুতে তার পরিবার, স্থপতি এবং সহপাঠীরা সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তাদের অভিযোগ, চর্মরোগের চিকিৎসা নিতে গিয়ে ভুল চিকিৎসায় তার মৃত্যু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ তুলে ধরেন রাজীব আহমেদের স্ত্রীর বড় ভাই চিকিৎসক আরেফ উদ্দিন আহমেদ।
চিকিৎসক আরেফ অভিযোগ করে বলেন, দেড় বছর ধরে রাজীব চর্মরোগের চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। গত ২৮ জানুয়ারি তিনি চিকিৎসকের কাছে গেলে নতুন ওষুধ দেওয়া হয়। সেই ওষুধ খেয়ে প্রচণ্ড পেটব্যথা নিয়ে রাজীব ৭ ফেব্রুয়ারি বেসরকারি একটি হাসপাতালে ভর্তি হন। ডা. এম ইউ কবির চৌধুরীর প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী একই সময়ে সেবন করা দুটি ওষুধের মিথস্ক্রিয়ায় তার লিভার ড্যামেজ হয়ে যায়, যা সকল স্বীকৃত ওষুধ সংস্থার গাইডলাইনে সুস্পষ্টভাবে বলা আছে। ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাজীবের অবস্থার অবনতি হলে পরের দিন তাকে বেসরকারি আরেকটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে তাকে আরও অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়।
আরেফ অভিযোগ করে আরও বলেন, মাত্রাতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিকের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় রাজীবের কিডনি অকার্যকর হয়ে যায়। ১৪ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
একজন চিকিৎসক হিসেবে তাকে যে ভুল চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে, তার ব্যাখ্যা তুলে ধরে আরেফ উদ্দিন বলেন, দুই হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালে অব্যবস্থাপনা ছিল। চিকিৎসকেরা অনেক তথ্য পরিবারের সদস্যদের কাছে আড়াল করেছেন। চিকিৎসকদের কাছে রাজীবের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা সব সময় ধৈর্য ধরতে বলেছেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চেয়ে আমরা বিএমডিসিতে (চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রতিকারের জন্য তদারকি সংস্থা বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল) অভিযোগ করেছি। আশা করছি ন্যায়বিচার পাব।
সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন, স্থপতি রাজীব আহমেদের স্ত্রী স্থপতি সারাওয়াত ইকবাল, রাজীবের ছোট বোন তানিয়া শবনম, বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সহসভাপতি মাহফুজুল হক জগলুল, সাধারণ সম্পাদক নবী নেওয়াজ খান, রাজীব আহমেদের ব্যবসায়িক পার্টনার মনন বিন ইউসুফ, আর্কিটেক্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বুয়েট-এর সভাপতি এন আর খান ও রাজীবের সহপাঠীরা।
তানিয়া শবনম বলেন, চিকিৎসকদের ভুল চিকিৎসায় আমার ভাই মারা গেছেন। আমি চাই সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিচার হোক, যাতে আর কোনো সন্তান এভাবে তার বাবাকে না হারায়, কোনো বোন তার ভাইকে না হারায়।
বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সহসভাপতি মাহফুজুল হক বলেন, এ ঘটনার সুবিচার না পেলে তারা কঠোর আন্দোলন করবেন।
স্থপতি রাজীব আহমেদ বুয়েট ২০০৩ ব্যাচের সদস্য ও রুফলাইনারস স্টুডিও অব আর্কিটেকচার-এর অন্যতম প্রধান স্থপতি গত ১৪ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তার এই আকস্মিক মৃত্যুতে তার পরিবার হতবিহবল হয়ে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সাথে তার প্রেসক্রিপশন ও হাসপাতালের রেকর্ড নিয়ে কয়েক দফা আলোচনায় বসে।
হাসপাতালের আইসিইউ থেকে প্রদানকৃত প্রাত্যহিক রিপোর্টগুলোতে দেখা যায়, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াই রাজীবকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। বিশেষজ্ঞের সাথে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে জানা যায়, ডা. এম ইউ কবির চৌধুরীর প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী একই সময়ে সেবন করা ২টা মেডিসিনের মিথস্ক্রিয়া তার এই মৃত্যুর মূল কারণ, যা সকল স্বীকৃত ওষুধ সংস্থার গাইডলাইনে সুস্পষ্টভাবে পরস্পরবিরোধী বলা আছে।
উল্লেখ্য, গত দেড় বছর ধরে রাজীব চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. এম ইউ কবীর চৌধুরীর অধীনে চিকিৎসাধীন ছিলেন। নতুন ওষুধ সেবন শুরুর করার ৯ দিনের মাথায় প্রচণ্ড পেট ব্যথা নিয়ে রাজীব ডা. কবীর চৌধুরীর নির্দেশে শমরিতা হাসপাতালে ভর্তি হন। শমরিতায় রাজীবের অবস্থা দ্রুত খুব খারাপের দিকে যাওয়ায় এবং গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা না পাওয়ায় একদিন পর তাকে স্কয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। শমরিতায় শিরাপথে দুটি অ্যান্টিবায়োটিক এবং স্কয়ারে আটটি অ্যান্টিবায়োটিক, সর্বমোট ১০টি অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয় যার বহুবিধ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং চারটি অ্যান্টিবায়োটিক কিডনি সংশ্লিষ্ট বিষক্রিয়াও রাজীব আহমেদের অকাল মৃত্যুকে ত্বরান্বিত করেছে বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়।
উল্লেখ্য, উভয় হাসপাতালেই চিকিৎসা চলাকালে অব্যবস্থাপনা ছিল এবং কালক্ষেপণ করা হয়েছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়।
রাজীবের স্ত্রী স্থপতি সারাওয়াত ইকবাল, মা, তিন বোন ও অসংখ্য শুভানুধ্যায়ী এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন। এমন ভুল চিকিৎসা ও অবহেলার শিকার যেন কেউ না হয় এমন দাবিতে বিএম অ্যান্ড ডিসিতে অভিযোগ দিয়েছেন তারা। বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট- আইএবি এই তাদের প্রতিবাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৯ ঘণ্টা, মার্চ ০৭, ২০২৪
নিউজ ডেস্ক