ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সরকারি গাছ কাটার অভিযোগ ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২৪
সরকারি গাছ কাটার অভিযোগ ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে

দিনাজপুর: দিনাজপুরে অনুমতি ছাড়াই সরকারি গাছ কাটার অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও দুই সদস্যের বিরুদ্ধে।  

শনিবার (০৯ মার্চ) সন্ধ্যায় দিনাজপুর শহরের সুইহারী স‘মিল থেকে কর্তন হওয়া তিনটি আকাশমনি গাছের মধ্যে একটি গাছের আটটি টুকরো জব্দ করে বনবিভাগ।

এর আগে এদিন সকাল থেকে দুপুরে মধ্যে সদর উপজেলার ৪ নম্বর শেখপুরা ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের রাস্তার পাশে তিনটি আকাশমনি গাছ কাটা হয় বলে জানান স্থানীয়রা। এসময় ওই ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য পরিমল চন্দ্র রায় ও সংরক্ষিত ১ নম্বর ওয়ার্ডের নারী সদস্য রশিদা পারভীন উপস্থিত ছিলেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।  

স্থানীয়দের অভিযোগ, আট থেকে ১০ জন লোক এসে রাস্তার পাশের তিনটি আকাশমনি গাছ কর্তন করে নিয়ে যায়। এসময় তাদের জিজ্ঞাসা করা হলে সরকারি লোক পরিচয় দেন তারা।  

শেখপুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোমিনুল ইসলামের নির্দেশে এই গাছ কাটা হয়েছে। তিনি সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

জানা গেছে, কর্তন হওয়া তিনটি গাছের মধ্যে একটি গাছের আটটি টুকরো শহরের সুইহারী স‘মিলে আলতাফ হোসেন নামে এক ব্যক্তি রেখে যান। পরে সদর উপজেলার গাবুড়া এলাকায় গিয়ে আলতাফ হোসেনের সঙ্গে কথা হলে তিনি নিজেকে মোয়াজ্জেম হোসেন বলে পরিচয় দেন। পাশাপাশি গাছ কর্তনের জায়গায় উপস্থিত না থাকার কথা বললেও পরে স্বীকার করেন। পরে সাংবাদিকদের ইউপি চেয়ারম্যান মোমিনুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করতে বলেন। এসময় সাংবাদিকদের উপর চড়াও হন আলতাফ হোসেন ও তার লোকজন।  

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুস সামাদ জানান, গাছগুলো সরকারিভাবে রোপণ করে আমাকে দেখাশোনা করতে বলা হয়েছিল। কথা ছিল, গাছ কাটলে আমার ভাগ বুঝিয়ে দেওয়া হবে। আজকে হঠাৎ করে দেখি সকালে শহর থেকে কয়েকজন লোক এসে চারটি গাছের মধ্যে তিনটি গাছ কেটে ফেলেছে। এতে পাশে থাকা আমার পেঁয়াজ ক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে। তাদের সঙ্গে আমার ঝগড়াও লেগেছিল। পরে তারা একটি গাছ রেখে ৩টি গাছ কেটে ভ্যানে করে নিয়ে যান।

স্থানীয় বাসিন্দা আলমগীর হোসেন বলেন, সকালে রাস্তার পাশের তিনটি আকাশমনি গাছ কর্তন করা হয়। এসময় সেখানে মেম্বার পরিমল চন্দ্র রায় ও রশিদা পারভীন উপস্থিত ছিলেন। তারা গাছগুলো কর্তনের পর ভ্যান যোগে নিয়ে চলে যান।

মেম্বার পরিমল চন্দ্র রায়ের ফোন নম্বরটি বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।  

সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী মেম্বার রশিদা পারভীন বলেন, আমি একটি মিমাংসায় গিয়েছিলাম। আসার সময় কর্তন করা গাছ রাস্তায় পড়ে থাকায় ইজিবাইক থেকে নেমে সেখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম। রাস্তা থেকে গাছ সরিয়ে নেওয়ার পর আমি সেখান থেকে চলে আসি। আমি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নই।

এ বিষয়ে শেখপুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোমিনুল ইসলাম বলেন, গাছগুলো স্থানীয়রা রোপণ করেছিল। তারা ইউনিয়ন পরিষদের লিখিতভাবে গাছগুলো কর্তনের জন্য বললে আমরা গাছগুলো কর্তন করেছি।  

উত্তর গোবিন্দপুর বনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, কর্তন করা গাছগুলো বনবিভাগের পক্ষ থেকে লাগানো হয়েছিল। গাছগুলো বনবিভাগের অনুমতি ছাড়াই কর্তন করা হয়েছে। আলতাফ হোসেন নামে এক ব্যক্তি গাছের আটটি টুকরো ভ্যান যোগে শহরের একটি স‘মিলে নেওয়া হয়েছিল। পরে সেই আট টুকরো গাছ জব্দ করে বনবিভাগের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কর্তন হওয়া একটি আকাশমনি গাছ জব্দের বিষয়টি নিশ্চিত করে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফয়সাল রায়হান বলেন, গাছগুলো কর্তনের বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি। বনবিভাগের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া হয়েছে কি না তা দেখা হচ্ছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তদন্তে যদি কোনো জনপ্রতিনিধির সম্পৃক্ততা পাওয়া যায় তাহলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেব।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।