ঢাকা, শনিবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

কুঁড়েঘর থেকে শিরোপাজয়ের মঞ্চে ইয়ারজান

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২৪
কুঁড়েঘর থেকে শিরোপাজয়ের মঞ্চে ইয়ারজান

পঞ্চগড়: গ্রামের এক দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের গোলরক্ষক ইয়ারজান বেগম। গত রোববার (১০ মার্চ) নেপালের কাঠমুন্ডুতে ফাইনালে ভারতকে টাইব্রেকারে ৩-২ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ।

আর এই অর্জনে মূল ভূমিকা পালন করে গোলরক্ষক ইয়ারজান। তার এই বীরত্বেই গ্রামের বাড়ি পঞ্চগড়ে বইছে উৎসব। টুর্নামেন্টের সেরা গোলকিপারের ট্রফিটাও নিজের করে নিয়েছেন তিনি। তার এই সাফল্যে গ্রামের বাড়িতে মিষ্টি বিতরণ করেছে এলাকাবাসী।

ইয়ারজান পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের খোপড়াবান্দি গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের মেয়ে।

সোমবার (১১ মার্চ) সকাল থেকে মঙ্গলবার (১২ মার্চ) পর্যন্ত ইয়ারজানদের বাড়িতে নানা বয়সি মানুষের ভিড় দেখা গেছে। হতদরিদ্র পরিবারের মেয়ের এমন সাফল্যে উচ্ছ্বসিত এলাকাবাসী। আনন্দিত পরিবার এবং প্রতিবেশিরাও।  

জেলা শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরের প্রত্যন্ত গ্রামে ইয়ারজানদের বাড়ি। সড়কের পাশেই ছোট ছোট দুইটি ঘর তাদের। এরমধ্যে একটি ঘর একেবারেই জরাজীর্ণ। একপাশে ছাউনির টিনগুলো খুলে গেছে। সেই ঘরের শোকেসে সাজানো আছে ইয়ারজানের সাফল্যের ক্রেস্ট এবং ট্রফি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইয়ারজানের বাবা আব্দুর রাজ্জাক শারীরিকভাবে অসুস্থ। কোনো কাজ করতে পারেন না তিনি। ফলে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি মা রেনু বেগম। মায়ের উপার্জনেই চলে তাদের সংসার। সম্পদ বলতে তাদের কেবল ভিটেমাটি।

কথা হয় মা রেনু বেগমের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, মানুষের কৃষিজমিতে কাজ করে মেয়েকে বড় করেছি। খুব কষ্ট করে আমার মেয়ে এই পর্যন্ত এসেছে। অভাবের সংসারে মেয়েকে তিনবেলা ঠিকমতো খাওয়াতে পারিনি। তার অদম্য ইচ্ছাশক্তি তাকে সাফল্য এনে দিয়েছে, আমাদের গর্বিত করেছে। মানুষ অনেক কথা বলেছে। একসময় তাকে আটকানোর চেষ্টা করেছি তবুও নিজের মত করে এগিয়ে গেছে।

তিনি আরও বলেন, প্রথম ২০ টাকা হাজিরায় শুরু করে এখন দৈনিক ২৫০ টাকা মজুরি পাই। এ দিয়েই অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসা খরচ এবং সংসার চালাই। অনেক সময়ে মেয়েকে অনুশীলনে যাওয়ার যাতায়াত ভাড়া দিতে পারতাম না। কিছু কিনে খাবে এজন্য অতিরিক্ত টাকা কখনই দিতে পারিনি। আজকে সব কষ্ট আমার দুর হয়েছে, গর্বে বুক ভরে গেছে আমার।

ইয়ারজানের বাবা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ছোট থেকেই ফুটবলের প্রতি আগ্রহ মেয়ের। তবে আমরা কখনও উৎসাহ দেইনি, মানুষও ভালো বলতোনা। তাছাড়া অনুশীলনে পাঠানোর মত ব্যবস্থাও ছিল না। কিন্তু মেয়ে এসবে তোয়াক্কা করতো না। তাই সংসারে টানাপোড়ন উপেক্ষা করেই তাকে সাপোর্ট দিয়েছি। সবচেয়ে বেশি অবদান তার মায়ের। টুকু ফুটবল একাডেমিও অনেক সহযোগিতা করেছে তাকে। এখন আমার মেয়ে সেরা গোলরক্ষক। ইয়ারজানের এমন গর্বে গর্বিত স্থানীয়রা।  

টুকু ফুটবল একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক আবু তারেক টুকু বাংলানিউজকে বলেন, আমার একাডেমির খেলোয়াড়ের এমন সাফল্য আমাদের নাম উজ্জ্বল করছে। প্রথম থেকেই দেখেছি তার খেলার প্রতি অনেক আগ্রাহ ছিল। দোয়া করি আরও অনেকদূর এগিয়ে যাবে ইয়ারজান।

তিনি আরও বলেন, ইয়ারজানের মত খেলোয়াড়দের খুঁজে বের করতে আমরা কাজ করছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।