ঢাকা, বুধবার, ২৮ কার্তিক ১৪৩১, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নারীরা সংসারের চালক, ঘর সামলান পুরুষরা  

বদরুল আলম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৮ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০২৪
নারীরা সংসারের চালক, ঘর সামলান পুরুষরা   রহম আলী

হবিগঞ্জ: শোবার ঘর লাগোয়া দোচালা ঘরে রান্না করছিলেন পঞ্চাশোর্ধ্ব রহম আলী; তখন গোসল শেষে খাবারের জন্য প্রস্তুত ছেলে ফয়সল ও মেয়ে স্বপ্না আক্তার। রহম আলী ও ফয়সালের সংসারে স্বপ্না শ্বশুরবাড়ি থেকে বেড়াতে এসেছেন।


 
রহম আলীর স্ত্রী জর্ডান প্রবাসী- সেজন্য প্রতিদিনই তাকে তিনবেলা খাবার রান্না করতে হয়। পরে ছেলে বাইরে থেকে ফিরলে একসঙ্গে বসে খান।
 
সম্প্রতি হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায় গাজীপুর ইউনিয়নের দুধপাতিল গ্রামে রহম আলীর বাড়িতে গেলে নারীদের বিদেশে কাজ করা ও পুরুষদের ঘর সামলানোর চিত্র দেখা যায়।
 
শুধু দুধপাতিলই নয়; গাজীপুর ইউনিয়নের আরও পাঁচটি গ্রাম ঘুরে বেশিরভাগ পরিবারের নারী-পুরুষকে এমন নিয়মে দাম্পত্য জীবন কাটাতে দেখা গেছে।
 
রহম আলী বলেন, আমার স্ত্রী আফিয়া খাতুন কয়েক দফায় ১১ বছর ধরে জর্ডান এবং সৌদি আরব রয়েছে। মাঝে মধ্যে দেশে আসে। আমি তার রোজগার দিয়ে ছেলে-মেয়েকে একাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়িয়ে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। ছেলে লেখাপড়ার পাশাপাশি আমার কাজে সহযোগিতা করে।
 
তবে সম্প্রতি আফিয়া জর্ডানে সমস্যায় রয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, বিদেশে ভালো কাজ শিখে না যাওয়ায় বর্তমানে তেমন রোজগার করতে পারছে না; ফিরতেও পারছে না কাগজপত্রের সমস্যার কারণে। এবার ফিরলে আর যেতে দেব না।
 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাজীপুর ইউনিয়নের উসমানপুর, মানিকভান্ডার, দুধপাতিল, বাল্লা ও টেকেরঘাট গ্রামের প্রায় ৬০০ নারী মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করেন। তাদের বেশিরভাগই সৌদি আরব, দুবাই, ওমান, কাতার ও জর্ডানে থাকেন।
 
কথা হয় গাজীপুর ইউনিয়নের রাজনা আক্তারের স্বামী জসিম, জোছনা আক্তারের স্বামী ফরিদ মিয়া ও শাহনাজের স্বামী ফারুকসহ আরও কয়েকজন পুরুষের সঙ্গে।
 
তারা জানান, তাদের স্ত্রী বিদেশে থেকে রোজগার করেন এবং পুরুষরা ঘর দেখাশোনা করেন। তবে সম্প্রতি নারীরা বিদেশে শান্তিতে নেই। বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
 
স্বামীদের দাবি, প্রবাসী নারীদের কাজের সঠিক পরিবেশ নিশ্চিত করা, দালাল নির্মূল এবং বিদেশে পাঠানোর সময় সরকারি ব্যবস্থাপনা জোরদার করতে হবে।
 
দুধপাতিল গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রুহুল আমিন বাংলানিউজকে বলেন, গাজীপুর ইউনিয়নের ছয়টি গ্রামে নারী-পুরুষদের এমন কর্মবণ্টন দীর্ঘদিন ধরে চলছে।
 
পাঁচ বছর জর্ডানে গৃহকর্মীর কাজ করে ফিরে আসা আফিয়া আক্তার বলেন, বিদেশে কাজ করে ফিরে দেখেছি, আমার সংসার আগের মতোই আছে। আমি বিদেশে থাকার সময় আমার স্বামী সঠিকভাবে বাচ্চাদের দেখভাল করেছেন।
 
কথা সাহিত্যিক রুমা মোদক বলেন, আমাদের সমাজে সাধারণত ধারণা করা হয়, নারীরা ঘরে থাকবে, ঘর সামলাবে এবং গৃহকর্ম শুধুই নারীদের কাজ। কিন্তু চুনারুঘাটের এ ছয় শতাধিক মেয়ে প্রমাণ করেছেন যে পুরুষের মতো তারও দেশে এবং দেশের বাইরে থেকে অর্থনৈতিকভাবে পরিবারে, সমাজে, দেশের জিডিপিতে বিরাট অবদান রাখতে পারে। অর্থনৈতিক কাজে নারী-পুরুষ কোনো বিভেদ নেই।
 
তিনি আমাদের জিডিপিতে অবদান রাখা নারীদের বিদেশে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকারকে সঠিকভাবে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।

গাজীপুর ইউনিয়নের প্রবাসে থাকা নারীদের কাগজপত্র তৈরিসহ যে কোনো প্রয়োজন অগ্রাধিকারভিত্তিতে সমাধানের চেষ্টা করা হয় বলে জানিয়েছেন চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মাহবুবুল আলম।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৩২২ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০২৪
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।