ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ম্যালেরিয়া নির্মূলে বান্দরবানে গবেষণা শুরু

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫১ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০২৪
ম্যালেরিয়া নির্মূলে বান্দরবানে গবেষণা শুরু

বান্দরবান: ২০৩০ সাল নাগাদ ম্যালেরিয়া নির্মূলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। তবে সারা দেশের মধ্যে পার্বত্য তিন জেলায় ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ বেশি।

বিশেষ করে বান্দরবান জেলায় ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি, এজন্য বর্তমানে চলমান সেবা দিয়ে সে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় রয়েছে।

সোমবার (১৮ মার্চ) বিকেলে বান্দরবান সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সভা কক্ষে আয়োজিত ম্যালেরিয়া নির্মূলে গবেষণা ‘সবার জন্য টিকা এবং সবার জন্য ওষুধ’ শীর্ষক এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানানো হয়।

প্রেস ব্রিফিং এ গবেষণা বিষয়ক উপস্থাপনা করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ও প্রধান গবেষক অধ্যাপক (ডা.) মো. আবুল ফয়েজ।

বান্দরবানের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. এম এম নয়ন সালাউদ্দিনের সঞ্চালনায় এ আয়োজনের সভাপতিত্ব করেন বান্দরবানের সিভিল সার্জন ডা. মো. মাহবুবুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য দেন জেলা পরিবার পরিকল্পনার সহকারী পরিচালক ডা. অংচালু মারমা।

এসময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ও প্রধান গবেষক অধ্যাপক (ডা.) মো. আবুল ফয়েজ বলেন, চলমান সেবার মধ্যে মশার কামড় থেকে বাঁচার জন্য কীটনাশকযুক্ত মশারি এবং অন্যান্য চলমান প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। বাড়ির কাছের স্বাস্থ্যকর্মী দিয়ে দ্রুত ম্যালেরিয়া রোগ নির্ণয় করা এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া। ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগীকে স্বাস্থ্যকর্মীর পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা দেওয়া।  

তিনি আরও বলেন, ম্যালেরিয়া নির্মূলের চলমান সেবার পাশাপাশি সবার জন্য ম্যালেরিয়ার টিকা এবং ওষুধ প্রয়োগ হতে পারে যুগোপযোগী পদক্ষেপ। সে লক্ষ্যে ম্যালেরিয়া নির্মূলের নতুন টিকার কার্যকারিতা নিয়ে একটি গবেষণা কার্যক্রমের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে পার্বত্য জেলা বান্দরবানে।

এই গবেষণায় যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভাবিত ম্যালেরিয়ার টিকা ব্যবহার করা হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) অনুমোদিত এই টিকা ইতোমধ্যে ৭৭ শতাংশ উচ্চ কার্যক্ষমতা আছে বলে প্রমাণিত হয়েছে। এটি ম্যালেরিয়ার জন্য উদ্ভাবিত ২য় টিকা এবং উৎপাদন করেছে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট। গবেষণাটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বান্দরবান জেলার লামা ও আলীকদম উপজেলার অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ১০০টি পাড়ার প্রায় ১০ হাজার মানুষকে নির্বাচিত করা হবে এবং ১০০ গ্রামের ১০ হাজার মানুষকে দৈবচয়নের মাধ্যমে সমানভাবে মোট চারটি ক্লাস্টার বা গ্রুপে ভাগ করা হবে।

গবেষণাটিতে নির্বাচিত ১০০টি পাড়ায় বসবাসরত ছয় মাসের অধিক বয়সী সব অধিবাসীকে গবেষণার বিষয়ে অবহিত করে সম্মতি পাওয়া সাপেক্ষে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের জন্য সরবরাহকৃত ম্যালেরিয়ার টিকা, ওষুধ ও চলমান সেবা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দেওয়া হবে। গবেষণা চলাকালীন যেকোনো স্বাস্থ্য সমস্যায় স্বাস্থ্যকর্মীর পরামর্শ ও সহায়তা পাওয়া যাবে। তবে গর্ভবতী মা ও এক বছরের মধ্যে গর্ভধারণের পরিকল্পনা করেছেন এমন কেউ, বাচ্চাকে দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন মা, ম্যালেরিয়ার অন্য টিকা গ্রহণ করেছেন কিংবা ম্যালেরিয়ার জন্য গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত হিসেবে টিকা পাচ্ছেন এমন কেউ, চিকিৎসা পাচ্ছেন এমন মারাত্মক অসুস্থ কেউ, গবেষণার ওষুধ বা টিকার পূর্ববর্তী পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ইতিহাস আছে এমন কাউকে এই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ও প্রধান গবেষক অধ্যাপক (ডা.) মো. আবুল ফয়েজ আরও জানান, এই গবেষণায় জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচি, সিডিসি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ডেভ কেয়ার ফাউন্ডেশন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, ব্র্যাক, সিআইপিআরবি, মাহিদল অক্সফোর্ড রিসার্চ ইউনিট, ব্যাংকক, থাইল্যান্ড ও জেনার ইনস্টিটিউট, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা সম্পৃক্ত রয়েছে। গবেষণা শেষে আগামী বছর থেকে লামা ও আলীকদম উপজেলায় উদ্ভাবিত ম্যালেরিয়ার এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হবে বলে প্রত্যাশা আয়োজকদের।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫০ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০২৪
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।