ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

টেলিভিশনের বুম নিয়ে সাংবাদিক পরিচয়ে চাঁদাবাজি, গ্রেপ্তার ১

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩০ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০২৪
টেলিভিশনের বুম নিয়ে সাংবাদিক পরিচয়ে চাঁদাবাজি, গ্রেপ্তার ১ পলাতক মেহেদি হাসান ও গ্রেপ্তার মনিরুজ্জামান (বাঁ থেকে)

পঞ্চগড়: পঞ্চগড়ে ঢাকার সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের বুম নিয়ে এতিমখানায় চাঁদাবাজি করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছে মনিরুজ্জামান (৫৭) নামের এক ব্যক্তি।  

এসময় চাঁদাবাজির হোতা মেহেদি হাসান কবির (৩৭) নামের আরেক ভুয়া সাংবাদিক পালিয়ে যায়।

গ্রেপ্তার মনিরুজ্জামান নিজেকে দৈনিক আজকের আলোকিত সকাল নামে একটি পত্রিকার ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি পরিচয় দিয়েছেন।  

আর পলাতক মেহেদি হাসান কয়েক বছর আগে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে কিছুদিন কর্মরত ছিলেন বলে জানিয়েছেন তিনি।  

মনিরুজ্জামানের বাড়ি নেত্রকোনা জেলার মদনপুর এলাকায় আর মেহেদি হাসানের বাড়ি নরসিংদী জেলার বেলাবো উপজেলার হোসেনপাড়া এলাকায়।  
শুক্রবার (২৯ মার্চ) দুপুরে আইনি প্রক্রিয়া শেষে গ্রেপ্তার মনিরুজ্জামানকে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

রাতে পঞ্চগড় সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আক্কেল আলী বাংলানিউজকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।  

পলাতক আসামি মেহেদিকেও গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।  

এসআই আক্কেল আলী আরও বলেন,  মনিরুজ্জামানকে গ্রেপ্তারের সময় একটি প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়। এটি ভাড়ায় চালিত হওয়ায় এবং এর চালকের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না থাকায় দুপুরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

এ ঘটনায় করা মামলার এজাহারে জানা গেছে, পঞ্চগড়ের এতিমখানা নিয়ে ইতিবাচক সংবাদ পরিবেশ করার কথা বললে জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা মনিরুজ্জামান ও মেহেদিকে জেলা পরিষদ ডাকবাংলোতে থাকার ব্যবস্থা করে। তাদের হাতে এশিয়ান টিভির বুম আর গলায় আইডি কার্ড ঝুলছিল। এরপর প্রাইভেটকার নিয়ে একের পর এক এতিমখানায় গিয়ে তারা চাঁদাবাজি শুরু করেন।  

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দুপুরে পঞ্চগড় সদর উপজেলার চকলাহাট ইউনিয়নের খেনপাড়া উম্মে কুলসুম মদিনাতুল উলুম শিশু সদন ও এতিমখানার শিক্ষকের কাছে তারা হাতিয়ে তারা  ৮ হাজার ৫০০ টাকা। পরে তারা ছুটে খানবাহাদুর মোকলেছুর রহমান আলিম মাদরাসা ও এতিমখানায়।  

এদিকে কয়েকজন মাদরাসা শিক্ষক বিষয়টি স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে জানালে তারা এশিয়ান টিভির অফিসে খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হন এরা প্রতারক।  
পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় মনিরুজ্জামানকে আটক করা হয়। এ সময় মেহেদি হাসান পালিয়ে যায়। তাদের ব্যবহৃত ভাড়ায়চালিত প্রাইভেটকারটিও আটক করা হয়।  

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তাকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়।  

এ ঘটনায় শুক্রবার ওই দুই ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করেছেন খেনপাড়া উম্মে কুলসুম মদিনাতুল উলুম শিশু সদন ও এতিমখানার শিক্ষক রশিদুল হক।  

সাংবাদিকদের তিনি বলেন, তারা এসেই নিউজ করার নামে বিভিন্ন হুমকি ধামকি দিতে শুরু করে। নিউজ করলে আমাদের সমাজসেবার বরাদ্দ বন্ধ হয়ে যাবে বলে হুমকি দেয়। চাপের মুখে আমি সাড়ে ৮ হাজার টাকা দিই তাদের। পরে আমি এলাকার অন্য মাদরাসায় খবর নিয়ে জানতে পারি একইভাবে তারা অনেক জায়গায় চাঁদাবাজি করেছে। এক পর্যায়ে তাদের প্রতারণার বিষয়টি জানাজানি হলে তাদের মধ্যে একজনকে স্থানীয়রা আটক করলে আরেকজন পালিয়ে যায়।  

খানবাহাদুর মোকলেছুর রহমান আলিম মাদরাসা ও এতিমখানায় শিক্ষক ইউসুফ আলী বলেন, তারা সকালে এসে একবার পরিদর্শন করে যায়। প্রত্যেক মাদরাসায় যাওয়ার সময় তাদের সাথে সমাজসেবার একজন অফিস সহকারী ছিলেন। দুপুরে আবার তারা আসে। এ সময় তাদের উদ্দেশ্য ভালো ছিল না। এক পর্যায়ে স্থানীয় সাংবাদিকদের সহযোগিতায় তাদের আটক করা হয়। মূল হোতা পালিয়ে যায়।  

এ বিষয়ে এশিয়ান টিভির পঞ্চগড়ের স্টাফ রিপোর্টার আকতারুজ্জামান আকতার বলেন, আমি অফিসে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি মেহেদি এক সময় কিছুদিন চাকরি করলেও এখন কর্মরত নন। তিনি বিভিন্ন এলাকায় আমাদের টেলিভিশনের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করে যাচ্ছেন। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর তাদের একজনকে স্থানীয় পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।  

পঞ্চগড় সদর উপজেলার সমাজসেবা কর্মকর্তা লায়লা আরজুমান বলেন, আমাদের পরিচালক মহোদয়কে তারা বলেছে যে এতিমখানা নিয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরের ইতিবাচক নিউজ করবে। পরিচালক স্যারের নির্দেশনা পেয়ে ডিডি স্যারের নির্দেশেই আমরা তাদের থাকার ব্যবস্থা করি। পঞ্চগড় সদর উপজেলার এতিমখানাগুলোর চেনার সুবিধার্থে আমাদের একজন অফিস সহকারীকে তাদের সঙ্গে পাঠানো হয়। কিন্তু তারা এমনটি করবে আমরা বুঝে উঠতে পারিনি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৪ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০২৪
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।