ঢাকা, শনিবার, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১, ২৭ জুলাই ২০২৪, ২০ মহররম ১৪৪৬

জাতীয়

সাভারে ৩ মাসে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে নিহত ২

অতিথি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০২৪
সাভারে ৩ মাসে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে নিহত ২ গ্রেপ্তার ছিনতাইকারী

সাভার (ঢাকা): ঢাকার সাভারে সামান্য কিছু অর্থ কিংবা মোবাইলের জন্য প্রায়ই ছিনতাইকারীর হাতে জীবন দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে মাসের পর মাস হাসপাতালের আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন অনেকে।

তাদের ভয়ে সন্ধ্যার পর সাভার যেন অনিরাপদ জনপদ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ পর্যন্ত যত ছিনতাই হয়েছে তার বেশিরভাগই ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভার মডেল মসজিদ, সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকার স্মরণিকা গেটের সামনে, শিমুলতলা, ডগরমোড়া, সিআরপি, মাশরুমের বড় মাঠ, রেডিও কলোনি, সিএন্ডবি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান গেটের আগে আরিচামুখী লেনে। তবুও ছিনতাইয়ের হটস্পট চিহ্নিত করে নেওয়া হচ্ছে না ব্যবস্থা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, গত জানুয়ারি মাস থেকে এ পর্যন্ত এসব স্থানে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন দুইজন। তাদের ছুরিকাঘাতে মাসের পর মাস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন একজন। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। এছাড়া সাভার মডেল মসজিদ থেকে সিঅ্যান্ডবি এলাকা পর্যন্ত প্রায় শতাধিক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে গত ৩ মাসে। এদের মধ্যে এক নারী সিঅ্যান্ডবি এলাকায় ছিনতাইয়ের শিকার হলেও তিনি মোবাইল হারানোর সাধারণ ডায়েরি করেন। ছিনতাইয়ের শিকার হলেও অনেকে বিষয়টি প্রকাশ করতে চান না কিংবা আইনের আশ্রয় না নিলেও থানার শরণাপন্ন হন অনেকেই।

গত ১২ এপ্রিল রাত সাড়ে ১১টার দিকে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে সাজ্জাদ নামে এক ফার্নিচার দোকানের রং মিস্ত্রি নিহত হয়। নিহত সাজ্জাদ হোসেন ঢাকার মোহাম্মদপুর থানার রায়েরবাজার ছাতা মসজিদ এলাকার মো. শাহীন আলম নুরার ছেলে। এ ঘটনায় কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর থানার বানুয়ান ঢাঙ্গের বাজার এলাকার জালাল বাবুর্চির ছেলে আল-আমিনকে (১৯) গ্রেপ্তার করে আজ দুপুরে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, ঈদের পর দিন গত ১২ এপ্রিল ছিনতাইয়ের উদ্দেশে ব্যাগে করে চাপাতি, চাকু ও ছুরি নিয়ে আড়াপাড়া বালুর মাঠ এলাকা দিয়ে যাচ্ছিলো আসামিরা। এ সময় তাদের ব্যাগে দেশীয় অস্ত্র দেখে তাদের শাসন করে নিহত সাজ্জাদ ও তার সঙ্গীরা। পরে আসামিরা দলবদ্ধ হয়ে এসে সাজ্জাদ ও তার বন্ধু আল-আমিনকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। পরে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে সাজ্জাদকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

গত ২৮ মার্চ দিনে দুপুরে  সাভারের ছায়াবীথি এলাকায় শহিদুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তিকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। পরে তিনি সন্ধ্যার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। শহিদুল ইসলাম এক ডেন্টাল ডাক্তারের চেম্বারের কর্মচারী ছিলেন। তবে এ ব্যাপারে পুলিশের বক্তব্য শত্রুতার জেরে ছুরিকাঘাত করে তাকে হত্যা করা হয়েছে। স্বজনদের দাবি শহিদুলের কোনো শত্রু ছিল না, তাকে ছিনতাইকারী হত্যা করে থাকতে পারে।

এছাড়া সাভার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন মডেল মসজিদের সামনে গত ৫ জানুয়ারি শুক্রবার রাত সাড়ে ৯ টার দিকে আবু সাঈদ হিমেলকে (২১) ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় ছিনতাইকারী। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

হিমেল সাভার পৌরসভার বিনোদবাইদ এলাকার কামাল হোসেনের ছেলে। তিনি নীলক্ষেতে একটি কম্পিউটারের দোকানে কাজ করতেন। হিমেলকে ফুটওভার ব্রিজে ছিনতাইকারীরা ছুরিকাঘাত করেন। তিনি আহতাবস্থায় দৌড় দিয়ে মডেল মসজিদের সামনে গিয়ে পড়ে যান। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।

এদিকে গত ১ ফেব্রুয়ারি সাভারের জুবায়ের খান নামে এক ওষুধ ব্যবসায়ীকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আমিন কমিউনিটি সেন্টারের সামনে তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখন পর্যন্ত তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

গত ৯ ফেব্রুয়ারি রাতে সাভার সিটি সেন্টার সংলগ্ন ওভারব্রিজের নিচে ও শিমুলতলা এলাকার পল্লীবিদ্যুৎ অফিসের পাশে মসজিদের গলিতে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে দুই কিশোর গুরুতর আহত হয়। আহত নাহিদ আল-মুসলিম গ্রুপের পোশাক কারখানার শ্রমিক ও অপরজন রাতুল ইসলাম শিমুলতলা এলাকার একটি জুতার কারখানায় কাজ করেন। তারা চিকিৎসা নিয়ে বর্তমানে সুস্থ রয়েছেন।

গত ৩১ মার্চ ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক সংলগ্ন রাবেয়া ক্লিনিকের পাশে দুই ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হন রবিউল ইসলাম (২০) নামে একজন বিক্রয়কর্মী। প্রায় ১০ দিন তিনি সাভারের এনাম মেডিকেলে আইসিইউ'তে ও আজ পর্যন্ত তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এছাড়া ঢাকা আরিচা মহাসড়কের সিঅ্যান্ডবি এলাকায় রিকশা থামিয়ে নগদ টাকা মোবাইল ফোন ছিনতাই করে ছিনতাইকারীরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, একটা মোবাইল ফোন আর সাত থেকে আট হাজার টাকা ছিনতাই হয়েছে। ছিনতাইয়ের কথা বললেই মামলা করতে হতো। আমার স্বামী প্রবাসী, বাসায় আমি একা। মামলায় নারী হয়ে ঝামেলায় জড়াতে চাইনি। শুধু আশুলিয়া থানায় একটি মোবাইল হারানোর সাধারণ ডায়েরি করেছি। এছাড়া প্রায় শতাধিক মানুষ ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন। তবে তারা কোনো ধরনের আইনি সহায়তা নেননি।

ছিনতাইয়ের কবল থেকে রক্ষা পাওয়া আব্দুস সালাম বাংলানিউজকে বলেন, গত ১৩ এপ্রিল সাভার মডেল মসজিদের সামনে দিয়ে ব্যাংক কলোনি যাওয়ার জন্য রিকশায় উঠি। রিকশাটি ব্যাংক কলোনি সড়কের মাথায় গেলে তিনজন ছিনতাইকারী রিকশার গতিরোধ করার চেষ্টা করে। এ সময় রিকশাচালক ছিনতাইকারীদের ওপরে রিকশা তুলে দিতে গেলে তারা সরে যায়। তখন রিকশাচালকের বুদ্ধিমত্তায় বেঁচে যাই। সাভার সিঅ্যান্ডবি থেকে মডেল মসজিদ পর্যন্ত গত তিন মাসে প্রায় শতাধিক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। অনেকে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন আবার অনেকেই নিবর ভূমিকায় থাকেন।

এ ব্যাপারে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অবস্) আব্দুল্লাহিল কাফি বাংলানিউজকে বলেন, এরই মধ্যে আমরা একটি ঘটনায় একজন হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার করে আজ আদালতে পাঠিয়েছি। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, যে কোনো ঘটনা ঘটলে অর্থাৎ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা একজনের দ্বারা খুব কম সংঘটিত হয়। সংঘবদ্ধ হয়েই কিন্তু বেশিরভাগ সময় এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে। কিশোর বয়সেই যারা অপরাধে জড়িয়ে যায় তাদের আমরা কিশোর অপরাধী বা কিশোর গ্যাং বলে থাকি। কিন্তু এসব ঘটনায় কিন্তু বেশির ভাগ অপরাধীর বয়স ২০ এর ওপরে। এ ধরনের কোনো ঘটনা যেন না ঘটে সেজন্য আমাদের সমাজে প্রথমত নাগরিকদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন অভিভাবকদের সতর্ক থাকা প্রয়োজন কেননা তাদের সন্তান কিভাবে ঘুরছে, কখন ঘুরছে, কার সঙ্গে ঘুরছে এগুলো মনিটর করা দরকার। যখন জঙ্গি হামলা হয়েছে তখন যারা অপরাধ করেছিল তাদের কিন্তু অভিভাবকরা খোঁজ-খবর রাখতো না। তারা কিন্তু জঙ্গিবাদের দিকে ভয়াবহ পরিণতির দিকে চলে গিয়েছিল। ঠিক তেমনি কিশোরদের দ্বারা যেসব অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে, তারা নেশায় আসক্ত হচ্ছে, তারা খুন-ছিনতাইয়ের মতো কার্যক্রমে লিপ্ত হচ্ছে ,এ বিষয়ে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০২৪
জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।