ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে অবৈধ জাল, হুমকিতে দেশি প্রজাতির মা মাছ

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৩ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০২৪
প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে অবৈধ জাল, হুমকিতে দেশি প্রজাতির মা মাছ

সিরাজগঞ্জ: মৎস্য ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত চলনবিল এলাকার বিভিন্ন হাট-বাজারে প্রকাশ্যে বিক্রি হতে দেখা যাচ্ছে অবৈধ চায়না দুয়ারি ও কারেন্ট জাল। এসব জাল দিয়ে দেদারসে ধরা হচ্ছে মা ও পোনা মাছ।

এভাবেই দেশীয় মাছের প্রজাতি ধ্বংস করে যাচ্ছে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী ও মৎস্যজীবীরা।

জানা গেছে, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নাটোর ও নওগাঁ জেলার মোট ১১টি উপজেলা বিস্তৃত উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তম বিল চলনবিল। বর্ষা মৌসুম এলে চলনবিলের সব খাল, নদী ও বিল ভরে যায়। ধীরে ধীরে পুরো চলনবিলের মাঠ, ঘাট প্রান্তর বানের পানিতে থৈ থৈ করে। পানির সঙ্গে সঙ্গে বোয়াল, শোল, গোচি, শিং, টেংরা, পুটি, মলা, চেলা, ঢেলাসহ দেশীয় প্রজাতির সব মাছের প্রজনন শুরু হয়।  

প্রজননের এই মৌসুমে মাছগুলো ডিম ছাড়ে এবং ডিম থেকে পোনার পোনা উৎপাদন হয়। ঠিক সেই মুহূর্তে অসাধু মৎস্যজীবীরা এসব ডিমওয়ালা মা মাছ ও পোনা মাঝ নিধন করে যাচ্ছে। ফলে মাছ শিকারিরা কারেন্ট ও চায়না দুয়ারি জাল কেনার জন্য হাট বাজারে ভিড় করছেন। চলনবিলের আওতাধীন সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়া ও শাহজাদপুর উপজেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে শত শত মণ পোনা ও মা মাছ নিধন করা হচ্ছে।

সিরাজগঞ্জ জেলা মৎস্য অফিস জানায়, ২০০২ সালে দেশীয় প্রজাতির মাছ রক্ষায় সরকার মৎস্য সুরক্ষা ও সংরক্ষণ আইন করে। ওই আইনের একটি ধারায় বলা আছে কোনো ব্যক্তি কারেন্ট জালের উৎপাদন, বুনন, আমদানি, বাজারজাতকরণ, সংরক্ষণ, বহন ও ব্যবহার করতে পারবেন না। আইন ভঙ্গ করলে জেল-জরিমানার বিধানও রাখা হয়েছে।  

অপরদিকে, মৎস্য রক্ষা ও সংরক্ষণ বিধিমালায় ৪ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার বা তার কম দৈর্ঘ্যের ফাঁস ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

এদিকে, খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, রায়গঞ্জ ও উল্লাপাড়া এলাকায় প্রকাশ্যে বিক্রি করা হচ্ছে অবৈধ কারেন্টজাল ও চায়না দুয়ারি জাল।

ব্যবসায়ীরাও অবৈধ এসব জালের মজুদ গড়ে তুলেছে। খুচরা বিক্রেতারা এসব জাল কিনে বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি করছে।

তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ, কুন্দইল, ধামাইচ, গুল্টা, বগুড়ার শেরপুর উপজেলার রানীরহাট, উল্লাপাড়ার উপজেলার বিভিন্ন বাঙলা, শাহজাদপুরের তালগাছি হাটে এসব জাল বিক্রি হতে দেখা গেছে। এসব ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ লুকিয়ে লুকিয়ে জাল বিক্রি করে যাচ্ছেন।

নামপ্রকাশ না করা শর্তে একাধিক জাল ব্যবসায়ী জানান, উপজেলার সব চেয়ে বড় কারেন্ট জালের পাইকারি ব্যবসার হাট হলো নওগাঁর হাট। কয়েকজন ব্যবসায়ী এ হাটে লাখ টাকার অবৈধ কারেন্ট জালের পাইকারির ব্যবসা করে থাকেন। এ হাট থেকে লাখ লাখ টাকা মূল্যের কারেন্ট জাল ক্রয় করে এলাকার ব্যবসায়ীরা উপজেলার বিভিন্ন হাটে বাজারে খুচরা বিক্রি করে থাকেন।

নওগাঁ এলাকার স্কুল শিক্ষক আব্দুস সালাম বলেন, বিভিন্ন হাট ও বাজারে অনেক জাল ব্যবসায়ী কারেন্ট, চায়না দুয়ারি জালের মজুদ গড়ে তুলেছেন। আর তারাই খুচরা জাল ব্যবসায়ী এবং পাইকারি দরে এসব জাল বিক্রি করছেন।

সগুনা এলাকার আইয়ুব আলী বলেন, বর্তমানে বিলের যে সব এলাকায় পানি আছে সেখানে মাছ শিকারে বিপুল সংখ্যক কারেন্ট, চায়না দুয়ারি জাল দিয়ে ডিমওয়ালা মা এবং পোনা মাছ নিধন চলছে। এসব কারেন্ট জাল এই এলাকার দেশীয় মাছের ব্যাপক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মশগুল আজাদ বলেন, চলনবিল একটি বৃহৎ এলাকা। তবে তাড়াশ এলাকায় কারেন্ট জাল বিক্রি বন্ধে প্রতিটি হাট ও বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।

সিরাজগঞ্জ জেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা জুয়েল রানা বলেন, কারেন্ট জাল আর চায়না দুয়ারি জাল দিয়ে মাছ ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আমরা খবর পেলেই অভিযান চালিয়ে জাল জব্দ করছি। এসব জাল দিয়ে মা ও পোনা নিধনের মাধ্যমে দেশীয় প্রজাতি ধ্বংস করছে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যক্তিরা। এ বিষয়ে স্থানীয়দের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুইচিং মং মারমা বলেন, অবৈধ কারেন্ট জাল ও চায়না দুয়ারি জালের বিরুদ্ধে অভিযান চলছিল। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে অভিযান বন্ধ রয়েছে।  

উল্লাপাড়া ইউএনও সানজিদা সুলতানা বলেন, কোথাও কারেন্ট জাল বিক্রির খোঁজ পেলে আমাদের মৎস্য বিভাগের লোকজন অভিযান চালাচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫০ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০২৪
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।