নাটোর: নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. দেলোয়ার হোসেন ও তার ভাইসহ তিনজনকে অপহরণ করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। তবে অপহরণের দুই ঘণ্টা পর তাদের উদ্ধার করেছে পুলিশ।
সোমবার (১৫ এপ্রিল) বিকেল ৪টার সময় জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের সামনে থেকে একটি কালো মাইক্রোবাসে করে কিল-ঘুষি মারতে মারতে তাকে তুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। পরে সন্ধ্যা ৬টার দিকে সিংড়া উপজেলার শেরপুর এলাকায় নাটোর-বগুড়া মহাসড়ক থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। অপর দুই ভাইকে উদ্ধার করা হয়েছে। তারা বর্তমানে বাড়িতে রয়েছেন।
এ ঘটনায় সম্ভাব্য প্রার্থী লুৎফুল হাবীবকে দায়ী করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে লুৎফুল হাবীবের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
জানা গেছে, লুৎফুল হাবীব উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শেরকোল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। তিনি ডাক, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক।
সিংড়া থানা ও ভুক্তভোগীদের পরিবার সূত্রে জানা যায়, আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন লুৎফুল হাবীব। রোববার (১৪ এপ্রিল) পর্যন্ত তার প্রতিদ্বন্দ্বী কেউ মনোনয়নপত্র দাখিল করেননি। তবে সোমবার (১৫ এপ্রিল) সকালে অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলের জন্য দেলোয়ার নাটোর স্টেশন এলাকার একটি কম্পিউটারের দোকানে আসেন। এ সময় তার বড় ভাই ও কলম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক এবং কলম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মুন্সি ব্যাংকে জামানতের টাকা জমা দেওয়ার জন্য বের হন। তারা কোড নম্বর জানার জন্য নাটোর জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের সামনে এলে কালো মাইক্রোবাসে করে কয়েকজন যুবক তাদের পথরোধ করে। একপর্যায়ে তাদের জোর করে ওই মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে যান। এরপর থেকে তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। অনেক খোঁজাখুঁজি করে না পাওয়ায় দেলোয়ার ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে ঘটনাটি জানান।
পরে বিকেল ৪টার দিকে অপর সহোদর ভাইকে নিয়ে জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে মনোনয়নপত্রের প্রতিলিপি জমা দিতে যান দেলোয়ার হোসেন। এর কিছু সময় পরপরই একই মাইক্রোবাসে করে দুর্বৃত্তরা জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে আসেন। পরে প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকেও কিল-ঘুষি মারতে মারতে জোর করে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যান। পরে তাকে বেদম মারপিট করার পর বাসায় পাঠানো হয়।
সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম বাংলানিউজকে জানান, ৯৯৯ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তিনি সকালের ঘটনার প্রাথমিক তথ্য পেয়েছেন। অপহৃত দুজনকে মাইক্রোবাসে করে ঘোরানো হচ্ছিল। তাদের অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছেন। পরের ঘটনাটিও তার থানা এলাকার বাইরে। তাই তিনি এ ব্যাপারে সদর থানায় ব্যবস্থা নিবেন।
তিনি আরও জানান, সন্ধ্যা ৬টার দিকে দেলোয়ার হোসেনকে সিংড়ার শেরকোল এলাকায় নাটোর-বগুড়া মহাসড়ক থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। পরে তার স্বজনদের মাধ্যমে নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। এ ব্যাপারে দেলোয়ারের কাছ থেকে কোনো তথ্য পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে ওসি বলেন, তার বলার মত কোনো পরিবেশ ছিল না। তিনি অসুস্থ বোধ করছিলেন।
নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, এ ব্যাপারে থানায় এখনও কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নাটোরের পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম বলেন, দুই ঘটনায় তিনি জেনেছেন। দেলোয়ারকে ইতোমধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে। তার চিকিৎসা চলছে। তিনি অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নাটোরের জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভূঞা জানান, তিনি নির্বাচন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে ঘটনার বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ সুপারকে অবহিত করেন। পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চৌকি বসিয়ে ওই মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থীকে উদ্ধারে পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি জানান, বিষয়টি তদন্ত করে এ ঘটনার সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০২৪
এসএম