ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

হানিমুনে যাওয়া হলো না নবদম্পতির, ট্রাক কাড়ল একই পরিবারের ছয়জনকে

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০২৪
হানিমুনে যাওয়া হলো না নবদম্পতির, ট্রাক কাড়ল একই পরিবারের ছয়জনকে

ঝালকাঠি: ঝালকাঠির রাজাপুরে চলছে শোকের মাতম। উপজেলার এক পরিবারেরই ছয়জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে পঞ্চম চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী গাবখান সেতুর টোলপ্লাজায় নিয়ন্ত্রণ হারানো ট্রাক।

এদের মধ্যে ছিল দুই শিশু। ছিলেন এক নবদম্পতিও। তারা পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় হানিমুনে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন সড়কেই নিঃশেষ হয়ে গেছে।

মারা যাওয়া এক পরিবারের এ ছয়জন হলেন- রাজাপুর উপজেলার সাংগর গ্রামের বাসিন্দা হাসিবুর রহমান (৩২), তার স্ত্রী নাহিদা আক্তার (২৭), তাদের সন্তান তাকিয়া (৪) ও তাহমিদ (৮ মাস) এবং হাসিবুরের শ্যালক বিমান বাহিনীর সদস্য সদ্যবিবাহিত ইমরান (২৬) ও তার স্ত্রী নিপা (২২)।

তারা সবাই মাইক্রোবাসে ছিলেন। ট্রাকের চাপায় ঘটনাস্থলেই তারা মারা যান। সেখান থেকে মরদেহ উদ্ধার করে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। মরদেহের পাশে কাঁদছিলেন স্বজনরা। এসময় পুরো হাসপাতালের আকাশ-বাতাস যেন ভারী হয়ে ওঠে।

নাহিদার বোন তরিকা আক্তার জানান, বাড়িতে দুপুরের খাওয়া-দাওয়া শেষে তারা মাইক্রোবাসে করে বরিশালে যাচ্ছিলেন। পথে গাবখান সেতুর টোলপ্লাজায় দাঁড়িয়ে টোল দিচ্ছিলেন গাড়ির চালক। ঠিক তখনই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সিমেন্টবোঝাই একটি ট্রাক ধাক্কা দিলে মাইক্রোবাসটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এতে গাড়িতে থাকা ওই পরিবারের ছয়জনই প্রাণ হারান।

তরিকা আক্তার বিলাপ করতে করতে বলছিলেন, ‘ওরে নাহিদা রে, তোদের ছাড়া আমি ক্যামনে থাকবো? তোদের ছোট ছোট সন্তানদেরও আদর করে দিলাম। এটাই যদি শেষ আদর হবে বুঝতাম, তাহলে আরও বেশি করে আদর দিতাম!’ 

তিনি জানান, ইমরান-নিপার একমাস আগে বিয়ে হয়েছে। নবদম্পতির ইচ্ছা ছিল বরিশাল থেকে কুয়াকাটা গিয়ে হানিমুন করবেন। কিন্তু সেই ইচ্ছা আর পূরণ হলো না।

জানা যায়, গাবখান সেতু টোল প্লাজায় নিয়ন্ত্রণ হারানো ট্রাকটি ওই মাইক্রোবাস এবং একটি অটোরিকশাসহ পাঁচটি গাড়িকে চাপা দেয়। এতে ট্রাকসহ তিনটি গাড়ি খাদে পড়ে যায়। এ দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।  

মারা যাওয়া অন্যরা হলেন অটোরিকশার যাত্রী গাবখানের সেলিম হাওলাদারের ছেলে নজরুল (৩৫), ওস্তাখান গ্রামের মান্নান মাঝির ছেলে শফিকুল মাঝি (৫০), শেখেরহাট নওপাড়ার আব্দুল হাকিমের ছেলে আতিকুর রহমান সাদি (১১), কাঠালিয়ার তালগাছিয়ার ইব্রাহিমের স্ত্রী তাহমিনা (২৫), তার মেয়ে নুরজাহান (৭), রাজাপুরের উত্তর সাউথপুরের হাসিবুর রহমানের স্ত্রী সনিয়া বেগম (৩০), স্বরূপকাঠির রুহুল আমীন ও টোল প্লাজার সামনের প্রতিবন্ধী ভিক্ষুক শহিদুল ইসলাম।

এ ঘটনায় ট্রাকচালক ও তার সহকারীকে আটক করেছে পুলিশ। একইসঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত যান ও ট্রাকটি উদ্ধার করা হয়েছে।

দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. রুহুল আমিনকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে জেলা প্রশাসন। আগামী পাঁচদিনের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক ফারাহ গুল নিঝুম।

আরও পড়ুন
ট্রাকচাপায় নিহত ১৪ জনের মরদেহ হস্তান্তর
ট্রাকচাপায় নিহত ১৪: চালক-হেলপার আটক

বাংলাদেশ সময়: ২১২৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০২৪
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।