ঢাকা, শুক্রবার, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ মে ২০২৪, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

অপহরণের ২৬ ঘণ্টা পর মুক্ত পল্লী চিকিৎসক

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০২৪
অপহরণের ২৬ ঘণ্টা পর মুক্ত পল্লী চিকিৎসক পল্লী চিকিৎসক জহির উদ্দিন। ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজার: কক্সবাজারের টেকনাফে অপহরণের ২৬ ঘণ্টার পর ‘পুলিশের অভিযানের মুখে’ পল্লী চিকিৎসকসহ দুজনকে ছেড়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।  

তবে স্বজনরা মুক্তিপণ দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করলেও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, অন্তত ছয় লাখ টাকার বিনিময়ে তাদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

সোমবার (২২ এপ্রিল) রাত ১১টার দিকে টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শিলখালীর পাহাড়ি এলাকায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানান টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ওসমান গণি।  

মুক্তিপ্রাপ্তরা হলেন- উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের পশ্চিম থাইংখালী এলাকার জাকের হোসাইনের ছেলে পল্লী চিকিৎসক মো. জহির উদ্দিন (৫১) ও টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর নয়াপাড়ার মৃত মো. শফির ছেলে মোহাম্মদ রফিক (৩২)।  

পুলিশ জানিয়েছে, উদ্ধার হওয়া দুজনই শারীরিকভাবে অক্ষত রয়েছেন। তাদের শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি।  

গত রোববার (২১ এপ্রিল) রাত ৯টায় টেকনাফের বাহারছড়া স্টেশনে চেম্বার শেষ করে অন্য যাত্রীদের সঙ্গে অটোরিকশাযোগে বাড়ি ফিরছিলেন জহির উদ্দিন। তাদের বহনকারী গাড়িটি শামলাপুর-হোয়াইক্যং সড়কের হোয়াইক্যং ঢালা এলাকায় পৌঁছালে যাত্রী বেশে তিনজন অস্ত্রের মুখে চালককে জিম্মি করেন। পরে পল্লী চিকিৎসকসহ দুজনকে পাহাড়ি এলাকার দিকে তুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।  

ঘটনার পরপরই অপহৃত জহির উদ্দিনের ভাই ও স্থানীয় সাংবাদিক মোহাম্মদ কমরুদ্দিন গণমাধ্যমের কাছে জানিয়েছিলেন, ঘটনার ঘণ্টা দেড়েক পর তার ভাইয়ের মোবাইল ফোন নম্বর থেকে কল দিয়ে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি ছয় লাখ মুক্তিপণ দাবি করেন।  

ওসি ওসমান গণি জানান, অপহরণ ঘটনাটি পুলিশ অবহিত হওয়ার পর থেকে অপহৃতদের উদ্ধারে বিশেষ অভিযান শুরু করে। পুলিশের একাধিক দল রোববার রাত থেকে সোমবার সকাল ১০টা পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত রাখে। সকাল ১০টার পর থেকে বাহারছড়া ইউনিয়নের পাহাড়ের সম্ভাব্য অপরাধপ্রবণ এলাকাগুলোতে পুলিশ সাঁড়াশি অভিযান চালায়। সোমবার রাত ১১টার দিকে শিলখালী পাহাড়ি এলাকায় অভিযানের মুখে গ্রেপ্তার এড়াতে অপরাধীরা অপহৃত দুজনকে ছেড়ে দেয়। তাদের শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি।  

তবে স্বজনরা মুক্তিপণ দিয়েছে কিনা তা পুলিশ অবহিত নয়। উদ্ধার হওয়াদের জিজ্ঞাসাবাদের পর নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানান তিনি।  

অপহৃত জহিরের ছোট ভাই মোহাম্মদ কমরুদ্দিন জানান, রাতে দুর্বৃত্তরা তার ভাইসহ দুজনকে ছেড়ে দিয়েছে। খবর পেয়ে শিলখালী পাহাড়ি এলাকা থেকে পুলিশ তাদের উদ্ধার করেছে। তার ভাইকে আনতে তিনি বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে অবস্থান করছেন।  

মুক্তিপণ ছাড়াই তার ভাইসহ দুজন ছাড়া পেয়েছেন তথ্য দিয়ে জানান, তার ভাইসহ অপহৃতদের উদ্ধারে পুলিশ আন্তরিকভাবে কাজ করেছে।  

তবে স্থানীয় বাসিন্দাসহ ভুক্তভোগী জহির উদ্দিনের কয়েকজন স্বজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুর্বৃত্তদের অন্তত ছয় লাখ টাকা মুক্তিপণ দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন। তবে মুক্তিপণের টাকা কোথায়, কীভাবে দেওয়া হয়েছে তা নিশ্চিত করতে পারেননি তারা।  

ওসমান গণি জানান, উদ্ধার হওয়ারা বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে রয়েছেন। ঘটনার ব্যাপারে জানতে তাদের কাছ থেকে প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। পরে উদ্ধার হওয়াদের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

প্রসঙ্গত, গত এক মাস ধরে টেকনাফের পাহাড় কেন্দ্রিক অপহরণের ঘটনা বন্ধ ছিল। এর আগে গত ২০২৩ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ সালের এ পর্যন্ত টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১২০ জনকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৬২ জন স্থানীয় বাসিন্দা, বাকিরা রোহিঙ্গা নাগরিক। অপহরণের পরিবারের তথ্য বলছে, অপহরণের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ৫৩ জন মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১০১২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০২৪
এসবি/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।