ঢাকা: নবম পে-স্কেল বাস্তবায়নসহ সাত দফা দাবি জানিয়েছেন সরকারি কর্মচারীরা। শুক্রবার (৩ মে) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী দাবি আদায় ঐক্য পরিষদ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পরিষদের মুখ্য সমন্বয়ক ওয়ারেছ আলী বলেন, সাত দফা দাবি আদায়ে আমরা ২০১৯ সাল থেকে সংবাদ সম্মেলন, স্মারকলিপি দেওয়া, মানববন্ধন, বিভাগীয় সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছি। সর্বশেষ গত বছরের ২৬ মে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তখন বেতন বাড়ানো ও ভাতাদির অসঙ্গতি দূর করার আশ্বাসমূলক আলোচনা হয়।
সেই আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে মহাসমাবেশের কর্মসূচি স্থগিত করা হয়। কিন্তু বেতন-ভাতাদি বাড়ানোর সব আশাকে নিরাশায় পরিণত করে সরকার মাত্র ৫ শতাংশ বিশেষ সুবিধা দেয়। সরকারের এ ঘোষণায় প্রজাতন্ত্রের ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীরা চরমভাবে হতাশ ও ক্ষুদ্ধ হন। সরকারের ওই ৫ শতাংশ বিশেষ সুবিধা বর্তমান বাজার ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, আমাদের সংগঠনের দাবি ছিল কর্মচারী অঙ্গনে বৈষম্য দূর করা। কিন্তু তা না হয়ে ৫ শতাংশ বিশেষ সুবিধায় ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীদের বৈষম্য আরও বেড়েছে। ১১-২০ গ্রেডের অধিকাংশ কর্মচারীর মূল বেতন ২০ টাকার নিচে, তাদের আগামী চার-পাঁচ বছরেও বিশেষ সুবিধা এক হাজার টাকার বেশি হবে না। অথচ ১-৯ গ্রেডের কর্মচারীদের এ সুবিধা চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তে থাকবে । আমরা এ ধরনের বিশেষ সুবিধা চাইনি। আমরা চেয়েছিলাম, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীদের মূল বেতন বাড়ানো হবে, যাতে কর্মচারীরা পরে এর সুবিধা পেতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, ৫ শতাংশ বিশেষ সুবিধা পুনর্বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী বর্তমান সময়ের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তা মূল বেতনের সঙ্গে সংযোজন ও সব ভাতা যুগোপযোগী করার জন্য সবিনয়ে অনুরোধ জানাচ্ছি। একইসঙ্গে যথাশিগগির বৈষম্যমুক্ত নবম পে-স্কেল বাস্তবায়নসহ সাত দফা দাবি জানাচ্ছি। কেননা দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে প্রাপ্ত বেতনের অর্থ দিয়ে মাসের ১৫ দিনও চলা সম্ভব হয় না।
সাত দফা দাবি
পে-কমিশন গঠনপূর্বক নবম পে-স্কেল বাস্তবায়ন করতে হবে। পে-স্কেল বাস্তবায়নের আগে অন্তর্বর্তীকালীন কর্মচারীদের জন্য ৫০ শতাংশ মহার্ঘ্য ভাতা দিতে হবে।
রেশনিং পদ্ধতি চালুসহ বঙ্গবন্ধুর ১৯৭৩ সালের ঘোষণা অনুযায়ী ১০ ধাপে বেতন স্কেল নির্ধারণসহ পে-কমিশনে কর্মচারী প্রতিনিধি রাখতে হবে।
সচিবালয়ের মতো সব দপ্তর, অধিদপ্তরের পদনাম পরিবর্তনসহ ১০ম গ্রেডে উন্নীতকরণ এবং এক ও অভিন্ন নিয়োগবিধি প্রণয়ন করতে হবে।
টাইম স্কেল, সিলেকশন গ্রেড পূর্ণবহালসহ বেতন জ্যেষ্ঠতা পুনর্বহাল, বিদ্যমান গ্র্যাচুইটি অথবা আনুতোষিকের হার ৯০ শতাংশের স্থলে ১০০ শতাংশ নির্ধারণ ও পেনশন গ্র্যাচুইটি এক টাকার সমান ৫০০ টাকা নির্ধারণ করতে হবে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের আপিল বিভাগের রায় বাস্তবায়নসহ সহকারী শিক্ষকদের বেতন নিয়োগ বিধি-২০১৯ এর ভিত্তিতে ১০ম গ্রেডে উন্নীতকরণ ও অধস্তন আদালতের কর্মচারীদের বিচার বিভাগীয় সহায়ক কর্মচারী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
প্রাথমিক শিক্ষার দপ্তরি কাম প্রহরীসহ আউটসোর্সিং পদ্ধতি বাতিলপূর্বক উক্ত পদ্ধতিতে নিয়োগকৃত ও উন্নয়ন খাতের কর্মচারীদের রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করতে হবে। ব্লক পোস্টে কর্মরত কর্মচারীসহ সব পদে কর্মরতদের পদোন্নতি বা পাঁচ বছর পর পর বেতন স্কেলের উচ্চতর গ্রেড দিতে হবে।
বাজারমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধির সঙ্গে সমন্বয়পূর্বক সব ভাতা পুনর্নির্ধারণ করতে হবে। চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর ও অবসরের বয়স সীমা ৬২ বছর নির্ধারণ করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩০ ঘণ্টা, মে ০৩, ২০২৪
এসসি/আরএইচ