মৌলভীবাজার: আমাদের প্রান্তিক মানুষের সমস্যা সুনির্দিষ্ট করা ও কৌশলি চিন্তার মাধ্যমে সমাধানের দিকে এগিয়ে যাওয়া খুবই জরুরি। এই পদ্ধতির ধারাবাহিকতা ধরে রাখাও সমানভাবে জরুরি।
মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস ২০২৪ উপলক্ষে শ্রীমঙ্গলে ব্র্যাক লার্নিং সেন্টারে আয়োজিত এক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেওয়ার সময় এ কথা বলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান।
তিনি বলেন, প্রান্তিকতার সবচেয়ে ক্ষতিকর দিক হলো মানুষের নিজেকে প্রান্তিক, ক্ষমতাহীন ভাবা। নিজেদের শক্তির বহিঃপ্রকাশের সক্ষমতা থাকাটা তাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এ ধরণের কাজেই সাহায্য করছে ব্রাত্যজন রিসোর্স সেন্টার। ধারাবাহিক গবেষণার মাধ্যমে তারা এই কাজ করে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে সাংবাদিকদের দায়িত্বও অনেক, এই গবেষণা তাদেরকে সামনে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস ঘিরে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট (সেড), ব্রাত্যজন রিসোর্স সেন্টার (বিআরসি) এবং পিপিআরসি। আলোচনার সভার মূল বিষয় ছিল, চা শ্রমিক ও হরিজন পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের ন্যায্য মজুরির প্রশ্ন ও কর্মপরিবেশ।
আলোচনা সভার শুরুতে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সেড’র পরিচালক ফিলিপ গাইন। তিনি তার বক্তব্যে চা শ্রমিক প্রসঙ্গে বলেন, শ্রমিকরা যদি কাজ না করতো তবে আমাদের কী হতো? তারপরও তাদের প্রতি এতো বঞ্চনা। চা শ্রমিকরা সারাদিন হাঁটেন, ঝড়-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে সারাদিন দাঁড়িয়ে পাতা তোলেন। ৫-৭ টা বাগান ছাড়া অন্য কোনো বাগানের সেকশনে তাদের জন্য নাই কোনো শৌচাগার। নিঃসন্দেহে তাদের কর্মপরিবেশ শোভন নয়।
হরিজন সম্প্রদায় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শ্রীমঙ্গলে ৩৬ জন হরিজনের মাসিক বেতন ৫৫০ টাকা। এই বেতন কি কোনোভাবে ন্যায্য ও গ্রহণযোগ্য?
বিশেষ অতিথি হিসেবে সভায় বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তানজিমুদ্দিন খান। তিনি বলেন, খাত ভিত্তিক মজুরি নির্ধারণ না করে, সব ইউনিয়নের উচিৎ এক হয়ে একটি সার্বজনীন নিম্নতম মজুরি নির্ধারণ করা।
আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস কেন্দ্রীয় আলোচনা সভায় ‘বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদ’ মৌলভীবাজার শাখার সভাপতি কান্তি লাল বাসফর, শ্রীমঙ্গলের হরিজন প্রতিনিধি সুকন বাসফর এবং সাগর হরিজন, কমলগঞ্জ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এবং ট্রেড ইউনিয়ন নেতা মি. রামভজন কৈরী, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন (বিসিএসইউ)-এর সহ-সভাপতি মিজ জেসমিন আক্তার, বিসিএসইউ’র কোষাধ্যক্ষ মি. পরেশ কালিন্দি এবং বিসিএসইউ’র ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মি. নৃপেন পাল, ‘প্রতীক থিয়েটার’ এর সভাপতি নাট্যজন সুনীল বিশ্বাস, বিশেষ অতিথি হিসেবে শ্রীমঙ্গল কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ মহাপরিদর্শক মোহাম্মাদ মাহবুবুল হাসান এবং যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক আইনজীবী সংগঠন ‘নাজদীক’-এর উপদেষ্টা কাত্যিয়ানী চান্দোলা বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে চা শ্রমিকের অধিকার নিয়ে দেউন্দি চা বাগানের সাংস্কৃতিক দল ‘প্রতীক থিয়েটার’ এর মনোরম গান, নাচ ও নাটক পরিবেশিত হয়।
সময়: ২০০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০২৪
বিবিবি/এমজে