ঢাকা, রবিবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৯ মে ২০২৪, ১০ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

আশ্রয়ণের ৮০ ঘর বিক্রির অভিযোগ ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০২ ঘণ্টা, মে ৭, ২০২৪
আশ্রয়ণের ৮০ ঘর বিক্রির অভিযোগ ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে 

মাদারীপুর: মাদারীপুর সদর উপজেলার খোয়াজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আশ্রয়ণ প্রকল্পের পুরানো ৮০টি ঘর বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এদিকে কোনো টেন্ডার বা নিলাম না করেই সাত লাখ টাকায় ঘরগুলো বিক্রি করা হয়েছে।

চেয়ারম্যানের দাবি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে জায়গা খালি করতে ঘরগুলো ভাঙ্গা হয়েছে। তিনি ঘর বিক্রি করে টাকা নেননি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার খোয়াজপুর ইউনিয়নের খোয়াজপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের (গুচ্ছ গ্রামের) ৮০টি ঘর ২০০৫ সালে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধায়নে নির্মাণ করা হয়। ঘরগুলো লোহার এঙ্গেল দিয়ে ফ্রেম করে তৈরি করা। সেই ঘরগুলো বর্তমানে ব্যবহার অনুপযোগী বলে সেখানে নতুন ঘর নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেয় জেলা প্রশাসন। তাই পুরোনো ঘরগুলো সরিয়ে নিতে বলা হয় উপকারভোগীদের। কিন্তু উপকারভোগীরা ভবিষ্যতে ভালো ঘর পাবে সে আশ্বাস দিয়ে তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়। সেই টিনসেড ঘরগুলো পানির দামে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে ইউপি চেয়ারম্যান জয়নাল মোল্লার বিরুদ্ধে। ৮০টি ঘর বিক্রি করে ক্রেতার নিকট থেকে নগদ সাত লাখ টাকা নিয়েছেন তিনি।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানা গেছে, আশ্রয়ণ প্রকল্পে আটটি ব্যারাকের, চারটিতে মোট ৮০টি ঘর রয়েছে। যা উপকারভোগীদের মধ্যে বণ্টনকৃত। ওই ঘরগুলোর স্থানে নতুন ঘর তোলা হবে। এবং ঘরগুলো উপকারভোগীরাই সরিয়ে নেবে এমন সিদ্ধান্ত হয়। সেক্ষেত্রে উপকারভোগীরা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের মধ্যস্ততায় ঘরগুলো সরিয়ে নিয়েছে। আর বাকী চারটি ব্যারাকের ঘরগুলোও ভাঙা হবে। যেগুলো পরিত্যক্ত। টেন্ডার হওয়ার পর অন্য ঘরগুলোও সরিয়ে নেওয়া হবে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ঘরে যারা বসবাস করতেন তাদের কয়েকজন জানিয়েছে, তাদের নতুন ঘর করে দিবে তাই তারা ঘর ছেড়ে দিয়েছে। ঘরগুলো চেয়ারম্যান বিক্রি করে দিয়েছে।

খোয়াজপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী মুন্সি জানান, তার আমলে ঘরগুলো নির্মাণ করা হয় সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধায়নে। ঘরগুলো লোহার ফ্রেমে টিন দিয়ে করা মজবুত ঘর। বর্তমান বাজার মূল্যে নিলামে বিক্রি হলেও এ ঘরের দাম ৩০-৪০ লাখ টাকা! হবে।

মাদারীপুর সদর উপজেলা প্রকল্প পরিচালক মশিউর রহমান বলেন, সেখানে নতুন ঘর নির্মাণ করা হবে। তাই জায়গা খালি করে দিতে বলা হয়েছিল। বিক্রির বিষয় জানা নেই।

ঘরের ক্রেতা হারুন আকন জানান, সাত লাখ টাকা দিয়ে চেয়ারম্যানের নিকট থেকে ৮০টি ঘর কিনেছেন তিনি। ইউনিয়ন পরিষদে বসেই তার সঙ্গে কেনা-বেচা করেন। বিজ্ঞপ্তি বা নিলামের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।

অভিযুক্ত চেয়ারম্যান জয়নাল মোল্লা বলেন, ঘরগুলো ব্যবহার অনুপযোগী ছিল। তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঘরগুলো সরিয়ে দিতে বলেছে। বিষয়টি তারা ভালো জানেন। আমি কারও কাছে ঘর বিক্রি করিনি। আমার দায়িত্ব ঘরগুলো অপসারণ করা।

এদিকে ঘর বিক্রি করে টাকা নেওয়ার বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আল মামুন বলেন, বিষয়টি ঠিক এমন নয়। উপকারভোগীরাই ৮০টি ঘর ভেঙে নিয়েছে। তবে তারা স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে কাজটি করেছে। ঘর বিক্রির যে কথা উঠেছে তা সত্য নয়। ওখানে পরিত্যক্ত আরও ঘর আছে যেগুলো টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রি করা হবে। ভেঙে নেওয়া ঘরগুলো উপকারভোগীদের। এখানে ভেঙে নিতে কোনো টেন্ডার দরকার হয়নি।

মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মো. মারুফুর রশীদ খান জানান, সরকারি ঘর বিক্রি করার কোনো সুযোগ নেই। কেউ বিক্রি করে থাকলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০২ ঘণ্টা, মে ৭, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।