নওগাঁ: উন্নয়ন প্রকল্পের নাম করে কেটে নেওয়া হয়েছে নওগাঁর আলতাদিঘী জাতীয় উদ্যানের গাছ। এর ফলে মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে একসময় সবুজে ঘেরা জাতীয় উদ্যানের দিঘি।
এলাকা ছেড়েছে কয়েক প্রজাতির পরিযায়ী পাখি ও বন্যপ্রাণী। আসছে না পর্যটক। এমন কাণ্ডে ক্ষিপ্ত পরিবেশ প্রেমীরা। ২৬৪ হেক্টর বনভূমির ঠিক মাঝখানে থাকা প্রায় ৪৩ একর আয়তনের একসময়ের বিশাল দিঘী এখন যেন মরুভূমি।
কয়েক বছর আগেও সবুজে ভরা ছিল আলতাদিঘী। কিন্তু বর্তমান সময়ের সেই দৃশ্যপট যেন বড়ই অচেনা। সম্প্রতি উদ্যান সংস্কারে ৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করে সরকার। যা করতে গিয়ে কেটে ফেলা হয়েছে দিঘীটির চারপাশের ছোট-বড় সব গাছ। এখন শুনশান নীরবতায় পর্যটকরা খুঁজে ফেরেন পুরোনো সেই আলতাদিঘীকে।
নওগাঁ সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন একুশে পরিষদ নওগাঁর সাধারণ সম্পাদক এম এম রাসেল জানান, দিন দিন পরিকল্পিতভাবে বন ধ্বংস করা হচ্ছে। একটি চক্র সব সময় চায় বন ধ্বংস করে অর্থ আত্মসাৎ করতে। সম্প্রতি কয়েকদিন আগেই নওগাঁর আলতাদিঘি বনে দেওয়া হয় আগুন। এর আগেও বেশ কয়েক বছর আগুন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বন বিভাগ দোষীদের এখনও চিহ্নিত করতে পারেনি। সম্প্রতি আলতাদিঘির উন্নয়ন প্রকল্পের নামে সেখানে চালানো হয়েছে ধ্বংসলীলা। খনন করা হয়েছে দিঘি, কাটা হয়েছে অসংখ্য গাছ। যে গাছগুলোর বয়স বহু বছর।
তিনি আরও জানান, পৃথিবীর অন্যান্য দেশে গাছ কেটে নয় বরং গাছ রেখেই উন্নয়ন করা হয়। শুধু বাংলাদেশেই নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে সকাল- সন্ধ্যা কাটা হয় গাছ। আলতাদিঘিতে উন্নয়নের নামে যা করা হয়েছে, তা কোনভাবেই কাম্য নয়। অসংখ্য গাছের পাশাপাশি নষ্ট হয়েছে পরিবেশ প্রকৃতি। বন ছেড়ে পালিয়েছে অসংখ্য পাখি-বন্যপ্রাণী। এসব দেখার কেউ নেই।
অ্যাডভোকেট মহসিন ক্ষুব্ধ হয়ে বাংলানিউজকে জানান, পরিবেশ প্রকৃতি ক্ষতির মুখে ফেলে উন্নয়ন করা যায় না। আলতাদিঘি বনে যা হয়েছে তা রীতিমতো অন্যায়। বন বিভাগের কিছু কর্মকর্তার জন্যই এমন ঘটনা ঘটেছে। বর্তমানে সেখানে পর্যটক আসে না। আলতাদিঘির যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সেটি নষ্ট করা হয়েছে। আগের রূপে আলতাদিঘিকে ফিরিয়ে আনতে বহু বছর লেগে যাবে। এমন ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের আইনি ব্যবস্থা হওয়া উচিত।
আলতাদিঘী জাতীয় উদ্যানের জীববৈচিত্র পুঃনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ প্রকল্প কমিটির সদস্য কায়েস উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, জাতীয় উদ্যানের দিঘি সংস্কারে জন্য করা হয় কমিটি। সেই কমিটির একটি সভায় গাছ কাটার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কথা ছিল শুধু দিঘি কাটা হবে। দিঘির পানি তিন ভাগে ভাগ করে একটি একটি করে পানি সেচ করে দিঘি খনন করা হবে। সেখানে গাছ কাটার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তই ছিল না। কিন্তু পরবর্তীতে দিঘির পাড়ের সব গাছ কাটা হয়েছে। কে, কেন এবং কীভাবে এসব গাছ কেটেছে তার কিছুই জানেন না তারা। কমিটির অধিকাংশ সদস্যদের এসব জানানো হয়নি। এবং সেই কমিটি এখনও আছে কিনা সেটিও জানা নেই আমাদের।
রাজশাহী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রফিকুজ্জামান শাহ্ বাংলানিউজকে জানান, প্রকল্পের বিষয়ে সবার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পে উল্লিখিত বিষয়ের বাহিরে কোনো কাজ করা হয়নি। প্রকল্পে যা উল্লেখ আছে সে অনুযায়ী কাজ হচ্ছে। কাজ শেষ হওয়ার পর নতুন করে গাছে লাগালে পরিবেশটা আগের চেয়ে অনেক ভালো হবে।
নওগাঁর জেলা প্রশাসক মো. গোলাম মওলা বাংলানিউজকে জানান, প্রকল্পে অনিয়ম করে যদি কিছু করা হয় তাহলে তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেখানে পরিবেশ-প্রকৃতি যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে বিষয়টি তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৯ ঘণ্টা, মে ০৯, ২০২৪
এফআর