ঢাকা, সোমবার, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ভুয়া সনদে ১৪ বছর শিক্ষকতা, তদন্তের মুখে পদত্যাগ 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৭ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০২৪
ভুয়া সনদে ১৪ বছর শিক্ষকতা, তদন্তের মুখে পদত্যাগ 

যশোর: যশোরে এক সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে জাল শিক্ষক নিবন্ধন সনদে চাকরি করার অভিযোগ উঠেছে। এই শিক্ষকের নাম আব্দুল মালেক, গত ১৪ বছর ধরে তিনি মণিরামপুর উপজেলার খেদাপাড়া গাংগুলিয়া ফাজিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক (কৃষি) হিসেবে চাকরিরত ছিলেন এবং যথারীতি সরকারি কোষাগার থেকে বেতন-ভাতা উত্তোলন করেছেন।

 

ঘটনার অনুসন্ধানে জানা যায় আব্দুল মালেক চাকরিতে যোগদানের পর থেকেই তার শিক্ষক নিবন্ধন সনদ নিয়ে একটি পক্ষ অভিযোগ তোলেন এবং সনদ যাচাইয়ের দাবি তোলেন। এ লক্ষ্যে আদালতে মামলা দায়ের করেন জুলফিক্কার আলী নামে এক ব্যক্তি।

মামলার অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১০ সালের ১৫ ডিসেম্বর আব্দুল মালেক উপজেলার খেদাপাড়া গাংগুলিয়া ফাজিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক (কৃষি) হিসেবে যোগদান করেন। ২০০৯ সালে পাস দেখানো শিক্ষক নিবন্ধন সনদে রোল নম্বর ৩১৯১২৫৭১। যোগদানের পর থেকে দাখিলকৃত নিবন্ধন সনদটি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। এ নিয়ে খেদাপাড়া গ্রামের মৃত মকছেদ আলী সরদারের ছেলে জুলফিক্কার আলী আদালতে একটি মামলা করেন। মামলার পর মনিরামপুর থানাকে মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তৎকালীন থানার এএসআই সৈয়দ আজাদ আলী ২০২০ সালে ৫ জুলাই আদালতে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন।

দাখিলকৃত প্রতিবেদন উল্লেখ করা হয়, সহকারী শিক্ষক আব্দুল মালেক এনটিআরসির যে সনদটি নিজের দাবি করছেন সেটি তার নয়। ৩১৯১২৫৭১ এ রোল নম্বরের সনদের প্রকৃত মালিক বগুড়ার সাইদুর রহমানের ছেলে আইয়ুব আলী। আব্দুল মালেক ওই রোল নম্বর ব্যবহার করে ভুয়া শিক্ষক নিবন্ধন সনদ তৈরি করে চাকরি করে আসছেন।  

কিন্তু এই তদন্ত প্রতিবেদন পরও মামলা চলমান থাকায় চাকরি চালিয়ে যান আব্দুল মালেক। তিনি গত ঈদুল ফিতরের আগ পর্যন্ত খেদাপাড়া গাগুলিয়া ফাজিল মাদ্রাসা হতে সরকারি বেতন বোনাস উত্তোলন করেছেন। তবে বিতর্কের মুখে চলতি মাসের ১ তারিখ তিনি ওই মাদ্রাসা থেকে পদত্যাগ করেছেন।

খেদাপাড়া গাগুলিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ছায়াদাত হোসেন বলেন, আব্দুল মালেক চলতি মাসের ১ তারিখে পদত্যাগ করে অন্য প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যক্ষ বলেন, সনদ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কথা শুনেছি। তবে, কখনো যাচাই করে দেখিনি।

অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে, শিক্ষক নিবন্ধনটি সঠিক বলে মোবাইল ফোনে দাবি করেছেন অভিযুক্ত আব্দুল মালেক।

জানা গেছে, মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে আব্দুল মালেককে বোয়ালিয়াঘাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান দেখানো হয়েছে। এ নিয়েও একটি পক্ষ অভিযোগ তুলছেন।

বোয়ালিয়াঘাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মতিয়ার রহমান বলেন, আব্দুল মালেক নামের একজনকে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে চলতি মাসের ৫ তারিখে প্রতিষ্ঠানে আসা যাওয়া করছেন। মাঝে-মধ্যে তিনি ক্লাসও নিচ্ছেন।

বোয়ালিয়াঘাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কুদ্দুস আলমের কাছে যোগদানের বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়েটি এড়িয়ে যান এবং সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন।

মণিরামপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিকাশ চন্দ্র সরকার বলেন, আব্দুল মালেকের নিয়োগ প্রক্রিয়া এখনো শেষ হয়নি। এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, কীভাবে স্কুলে ক্লাস নিচ্ছেন সেটা প্রধান শিক্ষকই ভালো বলতে পারবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৭ ঘণ্টা, মে ১৪,২০২৪
ইউজি/এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।