ঢাকা, বুধবার, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ জুন ২০২৪, ১৮ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

বাড়ি ফিরে বন্দিদশার বর্ণনা দিলেন ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব

মো. নিজাম উদ্দিন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪২ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০২৪
বাড়ি ফিরে বন্দিদশার বর্ণনা দিলেন ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব

লক্ষ্মীপুর: জলদস্যুদের কবলে পড়ে প্রচণ্ড ভয়ে দিন কাটাতে হয়েছে আমাদের। আমার সবচেয়ে বেশি ভয় হয়েছে মাকে নিয়ে।

কারণ বাবাকে হারানোর একমাস না যেতেই আমি বিপদে পড়েছি। এটি কীভাবে আমার মা সহ্য করছেন, তা নিয়েই সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় ছিলাম।  

সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবল থেকে মায়ের কোলে ফিরে এসব কথা বলেন এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান। তিনি বলেন, এখন আমি মায়ের কোলে ফিরেছি। এ আনন্দ সব কষ্ট ও সব ভয়কে জয় করেছে।

আইয়ুব তার পরিবারের সদস্যদের কাছে পেয়ে বলেন, যে ঈদ আমরা আতঙ্কে কাটিয়েছি। পরিবার-স্বজনদের পেয়ে সেই ঈদ আনন্দ আবার আমাদের মাঝে ফিরে এসেছে।  

বুধবার (১৫ মে) সকালে নিজ বাড়িতে গণমাধ্যমকর্মীদের এসব কথা বলেন আইয়ুব। এ সময় ঘটনার আদ্যপ্রান্ত তুলে ধরেন তিনি। এর আগে মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বন্দরে এসে আত্মীয়-স্বজনদের দেখে মন উৎফুল্লা হয়ে উঠে তার।  

আইয়ুব খান রায়পুর উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের রাখালিয়া গ্রামের বিনন বেপারী বাড়ির মৃত আজহার মিয়ার ছোট ছেলে।

ঘটনার বিবরণে ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব বলেন, আক্রমণের পর জাহাজের ইঞ্জিন বন্ধ করতে বলে দস্যুরা। এরপর তারা আমাদের সোমালিয়ার উপকূলের দিকে নিয়ে যায়। প্রায় আড়াই দিন লেগেছে সেখানে যেতে। প্রথম কয়েক দিন আমাদের সবাইকে একটি রুমে আটকে রাখেন। সবাইকে একই বাথরুম ব্যবহার করতে হয়েছেন। দস্যুরাও আমাদের বাথরুম ব্যবহার করেছে। প্রথম কয়েকদিন তারা আমাদের খাবার খেয়েছেন। সোমালিয়ায় পৌঁছানোর পর তারা নিজেদের খাবার সংগ্রহ করেন।  

তিনি আরও বলেন, ঈদের দিন নামাজ পড়তে পারলেও আনন্দ ছিল না। কারণ বন্দিদশা থেকে কবে মুক্ত হবো তা নিয়েই দিন গুণতে হয়েছে আমাদের।

আইয়ুব বলেন, একজন দু-ভাষির মাধ্যমে আমরা জানতে পারি জলদস্যুরা জাহাজ মালিকের সঙ্গে কথা বলেছে। মুক্তিপণ নিয়ে জাহাজ মালিকদের সঙ্গে দস্যুদের সমঝোতা হয়েছে। মুক্তিপণ দিলেই নাবিকরা মুক্তি পাবে। পরে ১৩ এপ্রিল হেলিকপ্টারের মাধ্যমে মুক্তিপণের ডলারের ব্যাগ জাহাজে ফেলা হয়। এরপর টাকা নিয়ে ভাগ হয়ে যায় জলদস্যুরা। তিনভাগে জাহাজ ছাড়েন দস্যুবাহিনী।  

তিনি আরও বলেন, হেলিকপ্টার থেকে মুক্তিপণের অর্থ ফেলার সময় আমাদের সংখ্যা গণনা করা হয়। প্রথমে আমরা ২২ জন ছিলাম, আমাদের ক্যাপ্টেন জাহাজের অন্যত্র ছিল। এ কারণে প্রথমে মুক্তিপণের ব্যাগ ফেলা হয়নি। পরে যখন আমাদের ক্যাপ্টেন আসে, হেলিকপ্টার থেকে ২৩ জন গুণে নিশ্চিত হয়। পরে ব্যাগ ফেলা শুরু করে। তিনটি ব্যাগ ফেলা হয়। তখন বেলা ১১টার মতো বাজে। এরপর দস্যুরা নিজেদের মধ্যে অর্থ ভাগ করে তিনভাগে জাহাজ থেকে নেমে যায়। বিকেল এক গ্রুপ, সন্ধ্যায় এক গ্রুপ এবং বাকিরা রাত ১২টার পর বিদায় হয়।

ক্যাডেট আইয়ুব বলেন, সকালের দিকে দুটি জাহাজ আমাদের নিরাপত্তা দিতে আসে। তারা আমাদের সোমালিয়ার ‘হাইরিক্স’ এরিয়া পার করে দেয়। এরপর আমরা দুবাইয়ে যাই।  

আইয়ুবের বড় ভাই ওমর ফারুক রাজু বলেন, দস্যুদের আক্রমণের প্রায় এক মাস আগেই বাবা মারা যান। সেই শোক না কাটতেই আইয়ুবসহ ২৩ নাবিক সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়ে। এতে পুরো পরিবারের ওপর অমাবস্যার অন্ধকার নেমে আসে। তার ফিরে আসা সবার জন্য আনন্দের।  

আইয়ুবের মা হোমায়রা বেগম বলেন, আইয়ুব আমার কোলে ফিরে এসেছে, এটি আল্লাহর কাছে আমার চাওয়া ছিল। নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করেছি, আল্লাহ যেন আইয়ুবসহ সবাইকে ফিরিয়ে দেন। আল্লাহর কাছে হাজারও শুকরিয়া সবাই সহিহ সালামতে ফিরে এসেছেন।

প্রসঙ্গত, গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগরে জলদস্যুর কবলে পড়ে বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। এ সময় শিল্পগ্রুপ কেএসআরএমের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজটি জিম্মি করে নেয় সোমালিয়ান দস্যুরা। এদিন বিকেলে জাহাজটি সোমালিয়ার দিকে নিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া যায়। জাহাজে লক্ষ্মীপুরের আইয়ুব খানসহ মোট ২৩ জন নাবিক জিম্মি ছিল।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪২ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।