ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

কখনও ভাবিনি আমরা বেঁচে ফিরবো: নাবিক জয় মাহমুদ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৩ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০২৪
কখনও ভাবিনি আমরা বেঁচে ফিরবো: নাবিক জয় মাহমুদ বাবা-মায়ের সঙ্গে নাবিক জয় মাহমুদ।

নাটোর: আমরা কখনও ভাবিনি বেঁচে ফিরবো। তবে আস্তে আস্তে তারা যখন স্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে।

তখন মনে একটু একটু করে সাহস পাই আমরা। বন্দুকের নলের নিচে ৩৩ দিন আমাদের থাকতে হয়েছে। এই সময় যেন মনে হয়েছে ৩৩ বছর। প্রতিটি দিন ছিল অনেক কষ্টের। দস্যুরা সবসময় আমাদের দিকে বন্দুক তাক করে রাখত। তবে জিম্মি অবস্থায়ও তারা সেখানে রোজা পালন করছেন। এবার ঈদের আনন্দ ছিল না, শুধু নামাজ পড়তে পেরেছিলাম আর কিছুই করতে পারিনি।  

সবার দোয়ায় আমাদের ছেড়ে দেয় দস্যুরা। গতকাল দেশে ফিরে আজকে সকালে বাসায় আসছি। এ আনন্দ বলে বোঝাতে পারব না। বাড়ি ফিরতে পেরে খুব আনন্দ লাগছে।

বুধবার (১৫ মে) বিকেলে সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মিদশা থেকে ফিরে আসা জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ’র নাবিক নাটোরের বাগাতিপাড়ার জয় মাহমুদ বাংলানিউজকে এসব তথ্য জানিয়ে তার অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি সরকার, জাহাজ কর্তৃপক্ষ, দেশবাসীসহ সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।

দীর্ঘ প্রতীক্ষা ও অনিশ্চিত অবস্থা কাটিয়ে জয় মাহমুদ অবশেষে তার নিজ বাড়িতে ফিরেছেন। এর আগে মঙ্গলবার (১৪ মে) দেশে পৌঁছে চট্টগ্রাম বন্দরে আনুষ্ঠানিকতা শেষে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। স্বজনদের কাছে ফিরে আসার পর পরিবার জুড়ে বইছে অনেকটা ঈদের আমেজ। তাকে এক নজর দেখতে আত্মীয়-স্বজন,পাড়া-প্রতিবেশীসহ আশপাশের গ্রামের মানুষজন ভিড় করছেন তার বাড়িতে।

জয় মাহমুদ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের সালাইনগর দক্ষিণপাড়া গ্রামের জিয়াউর রহমান ও আরিফা বেগম দম্পতির ছেলে। তিনি বাংলাদেশি পণ্যবাহী জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ’র সাধারণ নাবিক (ওএস) হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

জিম্মিদশার দুর্বিষহ দিনের কথা স্মরণ করে নাবিক জয় মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, জিম্মি হওয়ার প্রথম দিকের দিনগুলি ছিল অনেক কষ্টের। দস্যুরা আমাদের জিম্মি করার পর সবাই কান্নাকাটি করছিলাম। কীভাবে কী হবে কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। তবে যতই দিন যাচ্ছিল জলদস্যুদের ব্যবহার ততই শান্ত হচ্ছিল। কেননা তারা জানতে পারেন আমরা মুসলিম এবং আমরা নামাজ রোজা করতাম। এজন্য তারা আমাদের ওপর অত্যাচার কম করত। প্রথমে যখন আমাদের জিম্মি করে তখন অনেক অত্যাচার করেছে। তবে যখন দেখছে আমরা নিয়মিত নামাজ রোজা করছি, তখন তাদের মন নরম হয় এবং আমাদের ওপর অত্যাচার কমিয়ে দেয়।

তিনি আরও বলেন, জাহাজ কর্তৃপক্ষের দূরদর্শিতায় ৩৩ দিন আটক থাকার পর আল্লাহর রহমতে বাড়িতে ফিরতে পেরেছি। আটক অবস্থায় ঈদের নামাজ পরলেও ঈদের আনন্দ ছিল না। আজকে বাসায় ফিরে ঈদের চেয়েও বেশি আনন্দ লাগছে।

জয়ের মা আরিফা বেগম (৫০) বলেন, ‘আল্লাহ আমার বুকের মানিককে ফেরত দিয়েছেন। ছেলেকে ফিরে পাওয়ার এ আনন্দ প্রকাশ করা সম্ভব না। ’ ঈদের আগে জলদস্যুদের হাতে ছেলে বন্দিদশার খবরে আমাদের পরিবারে ঈদের আনন্দ মলিন হয়ে যায়। তবে দীর্ঘদিন পর ছেলে ফিরে আসায় পরিবারে আজকে ঈদের আনন্দ বিরাজ করছে।  

জিম্মি জাহাজের ২৩ নাবিক সুস্থভাবে বাড়ি ফেরায় জাহাজ কর্তৃপক্ষ ও সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।

জয়ের বাবা জিয়াউর রহমান (৫৬) বলেন, আমার ছেলে আজ সকালে বাড়ি ফিরেছে। আমরা খুব আনন্দিত। আমরা প্রধানমন্ত্রী, দেশবাসী, জাহাজ কর্তৃপক্ষ, মিডিয়াকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। তিনি বলেন, ছেলের জিম্মির খবর শুনে প্রথমে মনে হয়েছিল আমার ছেলে আর ফিরবে না। তবুও অনেক আশায় ছিলাম। আল্লাহ কাছে কত দোয়া করেছি। আল্লাহপাক আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিয়েছেন।

জয়ের বৃদ্ধ দাদি বলেন, আমার নাতি বাড়ি ফিরে আসছে তাই মনে শান্তি পাচ্ছি। কত যে কান্দিছি তা বলে বোঝানো যাবে না। জয়ের সহপাঠীরা বলেন, জয় সুস্থভাবে বাড়ি ফিরে আসায় আমরা খুবই আনন্দিত।

এর আগে, গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হয় বাংলাদেশি পণ্যবাহী জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ। জিম্মি জাহাজের ২৩ নাবিক ও ক্রুদের মধ্যে জাহাজের সাধারণ নাবিক (ওএস) হিসেবে কর্মরত ছিলেন নাটোরের বাগাতিপাড়ার জয় মাহমুদ।

বাংলাদেশ সময়: ১০২৭ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০২৪
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।