ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ‘সংকটজনক’: আর্টিকেল নাইনটিন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৯ ঘণ্টা, মে ২১, ২০২৪
বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ‘সংকটজনক’: আর্টিকেল নাইনটিন

ঢাকা: বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ‘সংকটজনক’ পর্যায়ে বলে দাবি করেছে ‘আর্টিকেল নাইনটিন’। বৈশ্বিক মতপ্রকাশের স্কোর বা জিআরএক্স স্কোরে এ দেশের স্কোর মাত্র ১২ বলে জানিয়েছে তারা।

আর্টিকেল নাইনটিন বিশ্বজুড়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও তথ্যের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছে। মানবাধিকারের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গীকার বাস্তবায়নে প্রতিবছর আর্টিকেল নাইনটিন ‘বৈশ্বিক মতপ্রকাশের স্বাধীনতা প্রতিবেদন’ প্রস্তুত করে।  

মঙ্গলবার (২১ মে) রাজধানীর গুলশানে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আর্টিকেল নাইনটিনের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক শেখ মনজুর-ই-আলম ২০২৪ সালের গবেষণার ফল প্রকাশ করেন।

এসময় অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং সাংবাদিক সোহরাব হাসান।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পাঁচ বছরের সময়কাল (২০১৮- ২৩) বিবেচনায় বাংলাদেশের স্কোর আটকে আছে ১১ ও ১২ এর মধ্যে। ১০ বছরে স্কোর কমেছে ৮ পয়েন্ট। আর দুই যুগে কমেছে ৩২ পয়েন্ট।

২০০০ সাল থেকে মতপ্রকাশের স্কোর বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে, এই সময়কালে বাংলাদেশের স্কোর কমেছে ৩২ পয়েন্ট। ২০০০ সালে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৪৪, যেটি মতপ্রকাশের শ্রেণিগত দিক থেকে ‘বাধাগ্রস্ত’ হিসেবে বিবেচিত। ‘বাধাগ্রস্ত’ থেকে ‘অতিবাধাগ্রস্ত’ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবনমন হয় ২০০৬ সালে। পরবর্তী বছর ২০০৭ সালে আরও ১০ পয়েন্ট কমে স্কোর নেমে আসে ২৯ এ। পরের দুই বছর (২০০৮ ও ২০০৯ সালে) স্কোর ৫ পয়েন্ট বেড়ে ৩৪-এ উন্নীত হলেও ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেনি পরের বছরগুলোতে। ২০১৪ সালে স্কোর ৪ পয়েন্ট কমে ১৬ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো মতপ্রকাশের ‘সংকটজনক’ শ্রেণিতে ঢুকে পড়ে। যা থেকে বাংলাদেশ এখনো উত্তরণ ঘটাতে পারেনি।

এছাড়া মতপ্রকাশের ২৫ সূচকের সবগুলো ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের স্কোর সম্পূর্ণ ঋণাত্মক। ২০০৯ সাল থেকে আটটি সূচকেই ক্রমাগত খারাপ করে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা সরকারের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নজরদারি ও সেন্সরশিপে।

গবেষণায় ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা বিষয়ক পাঁচটি সূচকের বছরওয়ারি চিত্রে দেখা যায়- ৫টি সূচকের ২টির স্কোর ইতিবাচক। এর একটি ধর্ম পালনের স্বাধীনতা এবং নারী পুরুষের আলোচনার স্বাধীনতা। এই ক্যাটাগরিতে বিবেচিত বাকি ৩ সূচকের স্কোর ২০১৪ সালের পর থেকে পুরোপুরি ঋণাত্মক। যার ধারাবাহিকতা চলছে প্রায় এক দশক ধরে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা সভা-সমাবেশ করার স্বাধীনতার সূচকে। এরপরেই রয়েছে একাডেমিক ও সাংস্কৃতিক মতপ্রকাশের স্বাধীনতার স্কোর।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিষয়ক তিনটি সূচকের বছরওয়ারি চিত্রে দেখা যায়- বাংলাদেশের তিনটি সূচকের স্কোরই ঋণাত্মক। সবচেয়ে বেশি খারাপ করেছে সাংবাদিকদের হয়রানিমুক্ত পরিবেশে কাজ করার স্বাধীনতার সূচকটিতে। ২০০৭ সালের পর থেকেই দেশে সাংবাদিকদের হয়রানিমুক্ত পরিবেশের সূচকটি ঋণাত্মক স্কোর করতে শুরু করে এবং গণমাধ্যমের সেল্ফ সেন্সরশিপের স্কোরও নেতিবাচক হয়ে পড়ে। এই প্রবণতা পরবর্তী দেড় দেশকের বেশি সময় ধরে অব্যাহত রয়েছে।

এছাড়া নাগরিক অংশগ্রহণ ও নাগরিক সংগঠন ক্যাটাগরিতে ব্যবহৃত পাঁচটি সূচকে বাংলাদেশ ইতিবাচক স্কোর করেছে। তবে নাগরিক সংগঠনের ওপর নিপীড়ন সূচকের স্কোর ঋণাত্মক রয়েছে। আর মানহানির মামলা দিয়ে হয়রানির সূচকে ঋণাত্মক স্কোর বা সবচেয়ে খারাপ করেছে বাংলাদেশ। ২০০৬ সালের পর থেকেই এই নেতিবাচক স্কোরের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে বলে উঠে এসেছে গবেষণা প্রতিবেদনে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৬ ঘণ্টা, মে ২১, ২০২৪
এইচএমএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।